খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২৪ এপ্রিল ২০২৫ | ১১ বৈশাখ ১৪৩২

অর্থনৈতিক সংস্কারে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়

|
১২:০৮ এ.এম | ২১ এপ্রিল ২০২৫


অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনৈতিক সংস্কারের লক্ষে যে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি ও অর্থনৈতিক কৌশল পুনঃনির্ধারণসংক্রান্ত টাস্কফোর্স গঠন করেছিল, তারা যথাসময়েই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কাজটি সর্বমহলে প্রশংসিতও হয়েছে। কিন্তু শ্বেতপত্র কমিটির সুপারিশ-পরামর্শ বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
বৃহস্পতিবার ‘ষষ্ঠ বাংলাদেশ ইকোনমিকস সামিট-২০২৫’-এ তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গত (আওয়ামী লীগ) সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসহ মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা স্থগিত করেছে। কিন্তু এর বিপরীতে কোনো মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়নি। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা আস্থা পাচ্ছেন না। এমনকি যে নীতিগুলো এখন নেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর ধারাবাহিকতা থাকবে কি না, সেটি নিয়েও তাঁরা সংশয়ে আছেন। এখানে দু’টি বিষয় আছে-প্রথমত, সাবেক সরকারের বাতিল হয়ে যাওয়া মধ্যবর্তী পরিকল্পনার স্থলে নতুন কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। দ্বিতীয়ত, বর্তমান সরকারের নেওয়া নীতিমালা ভবিষ্যতে বহাল থাকবে কি না। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে অন্তত দুই বছরের জন্য একটি মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। সরকার সেটি না করায় ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে দেবপ্রিয় উলে­খ করেছেন। বিনিয়োগ হলো একটি দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি। বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না, বিনিয়োগ না হলে শিল্প ও কৃষিসহ সব খাতের উৎপাদন কমে যাবে। ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিকভাবেই চাইবেন ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে সরকারের নীতি-পরিকল্পনা যেন বদলে না যায়। স¤প্রতি সরকারের উদ্যোগে মহাসমারোহে যে বিনিয়োগ সম্মেলন হলো, সেখানেও ব্যবসায়ীরা এই প্রশ্নগুলো তুলেছেন। 
আমরা মনে করি, শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি ও অর্থনৈতিক কৌশল পুনঃনির্ধারণ সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সুপারিশ কেন বাস্তবায়িত হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ রয়েছে। সরকার যদি কোনো কমিটির সুপারিশ কার্যকর না করে, তার ব্যাখ্যাও জনগণকে জানাতে হবে।
শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। সরকারি প্রকল্প থেকে ঘুষ লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার কোটি থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার মতো। এসব তথ্য দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনতে সহায়ক হবে। ইতিমধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়াও হয়েছে। 
শ্বেতপত্র কমিটি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের কাঠামো তৈরি, ২০২৫-২৭ সময়ের জন্য পরিকল্পনা করা; সংস্কারের অগ্রাধিকার ঠিক করা; এলডিসি উত্তরণের কৌশল ঠিক করার কথা বলেছিল। কিন্তু এসব বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ একেবারেই দৃশ্যমান নয়। 
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারলেও অর্থনীতিকে গতিশীল করার কার্যকর ও টেকসই উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ না বাড়ায় কর্মসংস্থানও বাড়ছে না; যদিও কর্মবাজারে ২৪ লাখ তরুণ–তরুণী যোগ হচ্ছেন। 
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট নিয়েও জনমনে শঙ্কা আছে। বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে অতীতে সব সরকারই তেলা মাথায় তেল দেওয়ার নীতি অনুসরণ করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার সেই ধারা অনুসরণ করলে জনগণের বৃহত্তর অংশের জন্য কোনো সুসংবাদ বয়ে আনবে না। সরকার যদি করের আওতা না বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা চাপানোর পুরোনো পথই বেছে নেয়, তা হলে মূল্যস্ফীতি কমবে না। বাজারের ক্ষেত্রে গত রোজার মাসের উদাহরণকে ধ্র“ব সত্য বলে মেনে নেওয়ারও কোনো কারণ নেই। ইতিমধ্যে নিত্যপণ্যের দাম নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে; এটা এখনই থামানো দরকার। নীতিনির্ধারকদের মনে রাখতে হবে, অর্থনৈতিক সংস্কার ছাড়া রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি ও টাস্কফোর্সের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে তাঁরা উদ্যোগী ভূমিকা নেবেন, এটাই প্রত্যাশিত।