খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২৪ এপ্রিল ২০২৫ | ১১ বৈশাখ ১৪৩২

পরিদর্শনে তিন উপদেষ্টা, খননের দায়িত্বে সেনাবাহিনী

‘ভবদহ জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটছে সরকার’

খবর প্রতিবেদন |
০১:১৫ এ.এম | ২৩ এপ্রিল ২০২৫


যশোরের দুঃখ হিসেবে পরিচিত ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে পরিদর্শন করলেন মন্ত্রণালয়ের তিন উপদেষ্টা। মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে ভবদহ স্লুইসগেট ২১ ভেন্ট এলাকা পরিদর্শন করেন তাঁরা।
পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবঃ) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা একসঙ্গে এই অঞ্চল পরিদর্শনে আসেন। এ সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সচিবগণও উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শন শেষে ভবদহ কলেজ মাঠে ব্রিফিং করেন পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, ‘গতবারের মতো এবার বর্ষায় যাতে জলাবদ্ধতা না হয়, সে জন্য সেনাবাহিনীর তত্ত¡াবধানে ভবদহ এলাকার নদী খনন কাজ শুরু হবে। জলাবদ্ধতা নিরসন যেসব সেচ পাম্প কাজ করছে, সেগুলোর বিদ্যুৎ বিল ইতিমধ্যে ৪৬ শতাংশ কমিয়েছে পল­ী বিদ্যুৎ। এ এলাকার জন্য কৃষি ব্যাংকের ঋণের সুদ মওকুফের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধান যাতে হয়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘২০০৫ সালে ভবদহ সমস্যার সমাধান করা সহজ ছিল। কিন্তু সে সময় সরকার সদিচ্ছা দেখায়নি। বর্তমান সরকার এ সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধানের জন্য ইতিমধ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি শুরু হয়েছে। পক্ষ-বিপক্ষ সবার কাছ থেকে এ ব্যাপার মতামত নেওয়া হবে। এরপর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, এ অঞ্চলের সমস্যার দীর্ঘ মেয়াদী সমাধানের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সম্মিলিত চেষ্টায় আপাতত ১৭ হাজার হেক্টর জমিকে পানিমুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তবে জটিল এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান আমাদেরকেই খুঁজতে হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সমস্যাটির স্থায়ী সমাধান করতে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বলবে। সাধারণ মানুষের ভাবনা ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের আলোকে ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যার সামাধনে কাজ শুরু হবে। এবারের বর্ষা মৌসুমে গত বছরের মতো দুর্ভোগ এড়াতে আমডাঙ্গা খাল, হরি, ভদ্রা, আপার ভদ্রা নদী খননের কাজ শুরু হবে। 
উপদেষ্টা আরও বলেন, এ অঞ্চলের কৃষকদের পানি সেচের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের মূল্য যেন বাণিজ্যিক হারে দিতে না হয় সে ব্যবস্থা করার ফলে কৃষকরা কিছুটা হলেও উপকৃত হয়েছেন। জলাবদ্ধতার সময়ে এ অঞ্চলের মানুষের ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তি আদায় যাতে বন্ধ থাকে সেটাও নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান, খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ফিরোজ সরকার, রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ রেজাউল হক, যশোরের জেলা প্রশাসক মোঃ আজাহারুল ইসলাম প্রমুখ।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে যশোরের অভয়নগরের নওয়াপাড়া সরকারি কলেজ মাঠে হেলিকপ্টারে নামেন তিন উপদেষ্টা। পরে ধান ক্ষেত পরিদর্শন করেন তাঁরা। এর আগে থেকে ভবদহ পাড়ের মানুষেরা স্থায়ী সমাধানে বিভিন্ন দাবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান নেন। এ সময় তাঁরা দ্রুত টিআরএম চালুসহ স্থানীয় নদীগুলো খনন করার দাবি জানান।
জানা গেছে, যশোরের অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। পলি পড়ে এই অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী নাব্যতা হারিয়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে উজানের পানি এই সব নদী দিয়ে নামতে পারে না। ফলে নদী উপচে সেই পানি বিল-মাঠ ছাপিয়ে ঘরবাড়িতে প্রবেশ করে। বর্ষায় জলাবদ্ধতায় ক্ষেতের ফসল, ঘেরের মাছ সবই কেড়ে নেয় পানি। জলাবদ্ধতায় মগ্ন থাকে শতাধিক গ্রামের ঘরবাড়ি, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, কৃষি জমি এবং মাছের ঘের। এই অঞ্চলের ৪ লক্ষাধিক মানুষের ঠাঁই হয়ে মহাসড়কের ধারে বা স্কুল কিংবা আশ্রয় কেন্দ্রে। অথচ বিগত চার দশকে ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হয়নি। 
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিগত সরকারগুলোর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তারা বরাদ্দের অর্থের সিংহভাগ লুটপাট করেছে। তাই বছরের পর বছর জলাবদ্ধতায় ভোগা মানুষের দীর্ঘদিন স্থায়ী সমাধানে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) চালু ও আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছে।