খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২৪ এপ্রিল ২০২৫ | ১১ বৈশাখ ১৪৩২

খুলনায় সংবাদ সম্মেলনে মাসফিয়ার রহমানের অভিযোগ : বিএনপি’র নামে দুর্নাম ছড়াচ্ছে আ’লীগের দোসররা

আদালতের নির্দেশনা গোপন রেখে ঘের দখলের কল্পকাহিনী শুনিয়েছে সত্যজিৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:৫১ এ.এম | ২৩ এপ্রিল ২০২৫


আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের নামের দুর্নাম ছড়াচ্ছে। বিভিন্ন গল্প সাজিয়ে মিডিয়ার সামনে কারসাজি করা তথ্য উপস্থাপন করে বিএনপি’র ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা বলেন পাইকগাছা উপজেলার মাসফিয়ার রহমান সবুজ।
তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পাইকগাছা উপজেলার অধিকাংশ মৎস্য ঘের নিজেদের দখলে রেখেছিল। কোন জমির মালিককে তারা হারি বা খাজনা পরিশোধ করতো না। জোর জুলুম করে দখল করে মাছ চাষ করতো। স্থানীয় থানা পুলিশ ও সংসদ সদস্যরা এর সাথে জড়িত থাকায় দরিদ্র জমির মালিকরা কখনো ন্যায় বিচার পায়নি। গত ৫ আগস্টের পর ছাত্র জনতার হাত ধরে এক নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছে। এখন মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পাচ্ছে। পাইকগাছার জমির মালিকরা তাদের জমি আওয়ামী লীগের দোসরদের হাত থেকে উদ্ধার করে অন্যত্র ইজারা দিতে পারছে। তবে এতে থেমে নেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও তাদের দোসররা। নানা কৌশলে এখনো গরীব মানুষকে হয়রানি ও জমি দখলে রাখার পাঁয়তারা চালাচ্ছে।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, গত ২০ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করেছে পাইকগাছার দেলুটি ইউনিয়নের দিঘলিয়া গ্রামের মৃত নিরোদ সরদারের পুত্র সত্যজিৎ সরদার। প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে এবং আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে জমির মালিকদের ঠকিয়ে ঘের দখলে রাখতে সে স্থানীয় বিএনপি’র নামে দুর্নাম করেছে।
তিনি বলেন, পাইকগাছার মৌজা ১৬৮ নং লতা পুতলাখালীতে মাছের ঘের আছে। আমার বাবা মরহুম ফসিয়ার রহমান ৫টি দলিলমূলে ৩০ বছর ঘের করেন। পরবর্তীতে তার মৃত্যুর পর তারই সন্তান হিসাবে আমি ২০২০ সালের ১ জানুয়ারী হতে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ বছর মেয়াদী ইজারা নেওয়া হয়। ২০২৩ সালে রেজিস্ট্রি অফিসের মাধ্যমে শিবপদ সরদারকে পার্টনারশীপ দলিল দেওয়া হয়, যার অংশ থাকে ৫০ শতাংশ। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ক্ষমতা প্রভাব খাটিয়ে তৎকালীন সংসদ সদস্য মোঃ আখতারুজ্জামান বাবু ও মোঃ রশিদুজ্জামানের ভয় দেখিয়ে অর্ধেকের বাকী ৪৯ অংশ জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর আমি ১২ নভেম্বর নোটারী দলিলের বিরুদ্ধে (সত্যজিৎ) সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছিলাম। এছাড়া প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে আদালতে মামলা করা সত্তে¡ও নিজের (সত্যজিৎ) পক্ষে রায় আনতে ব্যর্থ হয়ে তিনি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে বক্তব্য দিয়েছে। পাশাপাশি পাইকগাছার সিনিয়র সহকারী জজ আদালত এবং জেলা দায়রা জজ আদালতে মামলার বিষয়টি সম্পূর্ণ গোপন রেখে বিএনপি নেতা ও আমার চাচা এস এম এনামুল হক ও আসলাম পারভেজকে জড়িয়ে মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়িয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, সত্যজিৎ-এর দাবিকৃত ঘেরে ডিড ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে, পরবর্তীতে জমির মালিকগণ পূর্বের ন্যায় আমাকে (মাসফিয়ার রহমান সবুজ) ডিড করে দেন।
তবুও আওয়ামী লীগের দোসররা মাছের ঘেরে লুট করা বা হামলা চালানোর অভিযোগ তুলেছে। এই ঘেরে বছরের অর্ধেক সময় মাছ ও পরবর্তীতে ধান চাষ হয়। মাছের লভ্যাংশ ঘের মালিকের এবং পরবর্তী ধান চাষের সম্পূর্ণ ফসল জমির মালিকগণ ভোগ দখল করে থাকেন। যেটা আওয়ামী লীগের আমলে অসম্ভব ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে সবুজ বলেন ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য এস এম এনামূল হক, আসলাম পারভেজ, মোঃ ইমরান সরদার, মোঃ ইব্রাহিম গাজী নাম উল্লেখসহ ১২ জন এবং অজ্ঞাত ১৫/২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। ওই মামলায় বিএনপি’র বিভিন্ন স্তরের নেতাসহ জমির মালিকগণকে বিবাদী করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আশ্চর্যের বিষয় আওয়ামী লীগ নেতা সন্ত্রাসী সত্যজিৎ সরদার দীর্ঘদিন পর হঠাৎ করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে মিথ্যা বানোয়াট বক্তব্য দিয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের শীর্ষ সন্ত্রাসী মৃণালের অন্যতম সহযোগী সত্যজিৎ সরদার নিজেই বাদী হয়ে পৃথক দু’টি আদালতে মামলা দায়ের করেন। কিন্তু আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় মিথ্যা ঘটনা উপস্থাপন করে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার জন্য নানা কাল্পনিক কাহিনী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রকৃত ঘটনা তদন্ত ও দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রায় ৩০ জন জমির মালিক উপস্থিত ছিলেন।