খুলনা | শুক্রবার | ২৫ এপ্রিল ২০২৫ | ১২ বৈশাখ ১৪৩২

কড়া জবাবের হুমকি

বাণিজ্য-ভিসা-আকাশসীমা বন্ধসহ ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের একগুচ্ছ পদক্ষেপ

খবর প্রতিবেদন |
১০:৪৭ পি.এম | ২৪ এপ্রিল ২০২৫


কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারতের নেওয়া প্রতিশোধমূলক তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের পাল্টা জবাবে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য, দ্বিপক্ষীয় চুক্তি, আকাশসীমা বন্ধ এবং ভারতীয়দের জন্য ভিসা বন্ধসহ একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছে পাকিস্তান।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন লিখেছে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার কয়েক ঘণ্টাব্যাপী নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক শেষে এই ঘোষণা দিয়েছে ইসলামাবাদ।
পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের বরাত দিয়ে এক্সপ্রেস ট্রিবিউন লিখেছে, পানি আটকে দেওয়ার যেকোনো পদক্ষেপকে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল মনে করে পাকিস্তান। এরই মধ্যে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত ঘোষণা করেছে ভারত। এতে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে পাকিস্তান। 
পহেলগাম হামলার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ভারত পানি চুক্তি স্থগিতসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়; যার মধ্যে পাকিস্তানিদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ, দূতাবাসে প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার সংখ্যা হ্রাস করা অন্যতম। সাধারণত যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে এমন সব পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের কার্যালয় থেকে ‘কঠোর ভাষায়’ পাঠানো এক বিবৃতিতে ইসলামাবাদ জানিয়েছে, তারা ভারতের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করছে এবং একে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল মনে করছে। 
এক্সপ্রেস ট্রিবিউন লিখেছে, ইসলামাবাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পানি বন্ধ বা অন্যদিকে প্রবাহিত করার যেকোনো প্রচেষ্টা ‘যুদ্ধের উসকানি’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
‘জাতীয় ক্ষমতার পূর্ণ শক্তি দিয়ে এর প্রতিক্রিয়া জানানো হবে’ বলেও বিবৃতিতে তলে ধরা হয়েছে। 
একইসাথে ভারতের সঙ্গে সব দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে ওয়াগাহ সীমান্ত বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান। ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ‘বিনা ভিসা প্রকল্পের’ আওতায় দেওয়া সব ভিসা স্থগিত করেছে পাকিস্তান।
ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনে কূটনীতিকদের সংখ্যা ৩০ জনে কমিয়ে আনতে এবং ভারতীয় প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাদের ৩০ এপ্রিলের আগে পাকিস্তান ছেড়ে যেতে বলা হয়েছে।
ভারতীয় মালিকানাধীন বা ভারতীয়দের দ্বারা পরিচালিত বিমান সংস্থাগুলোর জন্য তার আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে৷ ভারতের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত করা হয়েছে।
এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক কড়া বার্তা দিয়ে বলেন, “ভারত প্রতিটি সন্ত্রাসী এবং তাদের সমর্থকদের চিহ্নিত করবে, তাদের খুঁজে বের করবে এবং অকল্পনীয় শাস্তি দেবে।”
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) কাশ্মীরের পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই পর্যটক। ওই ঘটনার দায় স্বীকার করেছে নিষিদ্ধ সংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)। এই হামলার নিন্দা জানিয়ে ভারতের পাশে সহমর্মিতার বার্তা নিয়ে দাঁড়িয়েছেন বিশ্বনেতারা।
ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার ছায়া সংগঠন টিআরএফ।
এই হামলার বিষয়ে নরেন্দ্র মোদি বলেন, “কোটি কোটি দেশবাসী আজ শোকাহত। পহেলগামে নিরীহদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে জঙ্গিরা। নিহতদের পরিবারের পাশে গোটা দেশ। সরকার আহতদের জন্য সব রকম ব্যবস্থা করছে। কেউ সন্তান হারিয়েছেন, কেউ ভাই, কেউ আবার জীবনসঙ্গীকে হারিয়েছেন। তাদের কেউ বাংলা বলতো, কেউ কান্নাড়া, কেউ মারাঠা। কার্গিল থেকে কন্যাকুমারী সকলে ক্ষোভে ফুঁসছে। এই আক্রমণ কেবল নিরস্ত্র পর্যটকদের উপরই ঘটেনি। দেশের শত্র“রা ভারতের আত্মাকে আক্রমণ করার সাহস করেছে।”
এর আগে বুধবার (২৩ এপ্রিল) মোদির নেতৃত্বে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভার কমিটির বৈঠকের পরে নয়াদিল্লি জানায়, পাকিস্তানের সঙ্গে অবিলম্বে স্থগিত করা হচ্ছে সিন্ধু পানি চুক্তি। যতদিন না পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদে লাগাম টানবে, ততদিন সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত থাকবে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের ভারতীয় দূতাবাসে থাকা ভারতীয় সামরিক উপদেষ্টাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। এবং ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তা ৩০ জনে নামিয়ে আনতে বলা হয়েছে। যা আগামী ৩০ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।
পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিশন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের নেতৃত্বে জরুরি বৈঠকে বসেছিল গতকাল বৃহস্পতিবার। সেখানে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই বৈঠকে ভারতের সিন্ধু নদের পানি চুক্তি বাতিলের নিন্দা জানানো হয়। দেশটি সতর্কতা দিয়ে জানায়, ভারত যদি সিন্ধু নদের পানি প্রবাহে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করে, তাহলে এটি যুদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এর জবাবও সেই হিসেবে দেওয়া হবে। 
সূত্র: আলজাজিরা।