খুলনা | মঙ্গলবার | ২৯ এপ্রিল ২০২৫ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

তদন্তে ৮ সদস্যের কমিটি গঠন

খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের ১০ জেলায় গ্রিড বিপর্যয়ে ব্যাখ্যা মন্ত্রণালয়ের

খবর প্রতিবেদন |
০১:৪৫ এ.এম | ২৮ এপ্রিল ২০২৫


খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের ১০ জেলায় গ্রিড বিপর্যয়ের ব্যাখ্যা দিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। রোববার এক বার্তায় মন্ত্রণালয় এ ব্যাখ্যা দেয়।
বার্তায় বলা হয়, গত ২৬ এপ্রিল ৪০০ কেভি আমিনবাজার-গোপালগঞ্জ ডাবল সার্কিট লাইনে সংঘটিত ফন্টের কারণে খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের ১০ জেলায় বিদ্যুৎ বিচ্যুতির ঘটনা ঘটে। সেদিন গ্রিড নেটওয়ার্কে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। বিকেল ৫টায় মোট জেনারেশন ছিল ১৪ হাজার ৫২০ মেগাওয়াট এবং সিস্টেম ফ্রিকোয়েন্সি ছিল ৫০.৪ হার্জ। এ অবস্থায় ৫টা ৪৫ মিনিটে ৪০০ কেভি আমিনবাজার- গোপালগঞ্জ ডাবল সার্কিট লাইনে ফল্ট সংঘটিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের যশোর, বেনাপোল ও নোয়াপাড়া উপকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট ১০টি জেলায় সাময়িক বিদ্যুৎ বিচ্যুতি ঘটে। তবে, ২৩০ কেভি ঈশ্বরদী-ভেড়ামারা-ঝিনাইদহ লিংকটি চালু থাকায় ২৩০ কেভি এবং ১৩২ কেভি লেভেলে সংযুক্ত ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া, মাগুরা, নড়াইল, জয়াডাঙ্গা উপকেন্দ্রগুলো চালু ছিল। এই ২৩০ কেভি লিংক ব্যবহার করে পাওয়ার গ্রিডের এনএলডিসি এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরের তাৎক্ষণিক প্রচেষ্টায় দক্ষতার সঙ্গে যশোর, বেনাপোল, নোয়াপাড়া উপকেন্দ্রগুলো চালু করা হয়। ফলে বর্ণিত এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
অন্যদিকে, ৪০০ কেভি আমিনবাজার-গোপালগঞ্জ ডাবল সার্কিট লাইনের সংঘটিত ফল্টে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিসিপিসিএল (পায়রা), ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট আরএনপিএল, ৩০৭ মেগাওয়াট বরিশাল ইলেকট্রিক, ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট রামপাল, ২২৫ মেগাওয়াট ভোলা নতুন বিদ্যুৎ ও ২২৫ মেগা ভোলা বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ৫০০ মেগাওয়াট এইচভিডিসি ব্লক-২ ট্রিপ করে প্রায় ২ হাজার ২৭৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বিচ্যুতি ঘটে। ৬টা ১৯ মিনিটে ৪০০ কেভি আমিনবাজার-গোপালগঞ্জ সার্কিট-১ এবং ৬টা ২৫ মিনিটে সার্কিট-২ চালু করা হলে ৪০০ কেভি আমিনবাজার-গোপালগঞ্জ-আমতলী লিংকটি সচল হয়।
এমতাবস্থায়, সিনক্রোনাইজিং বিদ্যুৎ প্রাপ্তির ফলে সন্ধ্যা ৭টা ১ মিনিটে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিসিপিসিএল (পায়রা) বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিট-১ এবং ৭টা ৮ মিনিটে ইউনিট-২ সিনক্রোনাইজ করা হয় এবং ৭টা ৩০ মিনিটে বর্ণিত অঞ্চলের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রও গ্রিড নেটওয়ার্কে সিনক্রোনাইজ করা হলে রাত ৯টায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে স্বাভাবিক হয়।
সংগৃহীত তথ্য প্রাথমিকভাবে বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, আমিনবাজার উপকেন্দ্র থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে এবং গোপালগঞ্জ উপকেন্দ্র থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে সার্কিট-১ এর ব্লু-ফেজ এবং সার্কিট-২ এর রেড-ফেজ-এর মধ্যে ট্রানজিয়েন্ট শর্ট-সার্কিট সংঘটিত হওয়ার কারণে সার্কিট দু’টির উভয় প্রান্ত থেকে সিস্টেম প্রোটেকশনের জন্য ব্যবহৃত প্রটেকটিভ রিলের স্বয়ংক্রিয় অপারেশনে তদসংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ট্রিপ করে যায়।
উপরোক্ত তথ্যের বিস্তারিত কারিগরি যৌক্তিকতা অনুসন্ধানের জন্য এরই মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগ এবং পাওয়ার গ্রিড থেকে দু’টি পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তদন্তে ৮ সদস্যের কমিটি গঠন : খুলনা অঞ্চলে সংগঠিত গ্রিড বিপর্যয়ের ঘটনায় ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। রোববার এক অফিস আদেশে এ কমিটির গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
তদন্ত কমিটি গ্রিড বিপর্যয়ের কারণ নির্ণয়, গ্রিড বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের দায় নির্ধারণ করবে। পাশাপাশি কমিটি প্রয়োজনে এক বা একাধিক সদস্যকে কো-অপ্ট করতে পারবে। কমিটি আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করবে। এছাড়া ভবিষ্যতে গ্রিড বিপর্যয় পরিহারের লক্ষ্যে সুপারিশ দেবে।
বুয়েটের উপ-উপাচার্য আব্দুল হাসিব চৌধুরীকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন বুয়েট অধ্যাপক ড. মো এহসান, খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মোঃ ফিরোজ শাহ, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সদস্য (পিএ্যান্ডডি) মোঃ শহীদুল ইসলাম, ওজোপাডিকোর প্রধান প্রকৌশলী (পরিচালক) মোঃ আবদুল মজিদ, বিপিডিবির সিস্টেম প্রটেকশন ও টেস্টিং কমিশনিং সেলের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ আতিকুর রহমান, পিজিসিবি ট্রান্সমিশন-১ এর প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফয়জুল কবির ও বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মোঃ মাজহারুল ইসলাম।