খুলনা | সোমবার | ২৮ এপ্রিল ২০২৫ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

অবশেষে খুলনায় বিতর্কিত প্রাইমারি শিক্ষক কিরীটী রায়কে চাকুরি হতে বরখাস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০২:১৭ এ.এম | ২৮ এপ্রিল ২০২৫


খুলনার বিতর্কিত প্রাইমারি শিক্ষক কিরীটী রায়কে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল রোববার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস খুলনা (স্মারক নং- ৩৮.০১.৪৭০০.০০০.০৪.০১২.২৪.৯৬৭, তাং-২৭ এপ্রিল/২০২৫) এ বরখাস্তের আদেশ হয়। তিনি রায়েরমহল বিদ্যানিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (কিরীটী রায়) সহকারী শিক্ষক (বর্তমানে পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়, খুলনায় সংযুক্ত)।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এ বিধি ৩(খ) অনুযায়ী অসদাচরণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিক সকল বিষয় বিবেচনায় একই বিধিমালার ৪(৩)(ঘ) বিধি মোতাবেক তাকে চাকুরি হতে বরখাস্তকরণের গুরুদণ্ড আরোপ করা হয়েছে।
আরও জানা যায়, সদর থানা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর থাশিঅ/খু: সদর/৮৯৬ নং স্মারকপত্রের মাধ্যমে ২০২২ সালের ১০ জুলাই হতে ১৫ জুলাই পর্যন্ত এবং ২০২২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর হতে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে ভারত গমণসহ বিভিন্ন অভিযোগ ৩ (তিন) সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি কর্তৃক প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয় বলে উলে­খ করা হয়।
বরখাস্ত আদেশে আরও বলা হয়, গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত খুলনা সদরের বিতর্কিত প্রাইমারী শিক্ষক কিরীটী রায় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া টানা ৬ মাস চিকিৎসা ছুটিতে স্কুলে অনুপস্থিত ছিলেন। এই সময়ের মধ্যে তাকে অন্তত ১০ বার বিনা অনুমতিতে বিদেশ ভ্রমণের বিভাগীয় মামলার তদন্তে হাজির হওয়ার নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। 
জানা যায় প্রাইমারি শিক্ষক কিরীটী রায়ের ভারত গমণের বিষয়টি যাচাইয়ে ২০২৪ সালের ১৩ আগস্ট ঢাকায় ইমিগ্রেশন (প্রশাসন) বিশেষ পুলিশ সুপার বরাবর পত্র প্রেরণ জেলা শিক্ষা অফিস। এর প্রেক্ষিতে একই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর প্রেরিত পত্রের ঢাকার ইমিগ্রেশন (প্রশাসন) জানায় তিনি মোট ১২ বার কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে ভারত গমণ করেছেন।
অন্যদিকে সদর থানা শিক্ষা অফিসার খুলনা ২০২৪ সালের ১৪ নভেম্বর ৯৫৬নং স্মারকে মেডিকেল বোর্ড কর্তৃক তাঁর অসুস্থতার সঠিকতা যাচাইয়ে জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে পত্র প্রেরণ করেন। এ পত্রে প্রেক্ষিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ২০২৪ সালের ১৮ নভেম্বর ২৩২৭ নং স্মারকে তাঁর শারীরিক অসুস্থতা সম্পর্কে মেডিকেল বোর্ডের মতামত/সিদ্ধান্তের জন্য খুলনার সিভিল সার্জন বরাবরে পত্র প্রেরণ করে। খুলনার সিভিল সার্জন ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর ৩৫১০ নং স্মারকপত্রের মাধ্যমে According to submitted documents and physical condition the leave application of Mr. Kirity Roy Assistant teacher, Rayermohol Bidyaniketon Govt. primary School, Khulna Sadar, Khulna cannot be granted and he can join his job as before  মর্মে মতামত প্রদান করেন।
আদেশে বলা হয় সম্পূর্ণ সুস্থ থাকা সত্তে¡ও এই শিক্ষক নিজের অপরাধ ঢাকতে ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। খুলনা সিভিল সার্জন অফিসের গঠিত মেডিকেল বোর্ড প্রেরিত মতামতে তারই প্রমাণ পাওয়া যায় বলে আদেশে উলে­খ করা হয়।
খুলনা সিভিল সার্জন অফিসের মতামতের প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে তার চিকিৎসা ছুটি বাতিল করে স্কুলে যোগদানের নির্দেশ দিলেও তিনি কর্মস্থলে যোগদান করেননি। কোন তদন্তেও হাজির হননি। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া একজন শিক্ষক এতদিন স্কুলে অনুপস্থিত থাকায় ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়। অবশেষে তার বিরুদ্ধে বরখাস্তকরণের গুরুদণ্ড আরোপ করা হয়।
আদেশে আরও বলা হয় ২০২৪ সালের ৫ মার্চ তালতলা উদয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত করা ও ৫ জন নারী সহকারী শিক্ষকের শরীরের স্পর্শকাতর অংশের ছবি তোলাসহ ৮টি পৃথক অভিযোগ তার নামে আরও একটি বিভাগীয় মামলা হয়। 
২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে বরখাস্ত এবং ২০২৪ সালের ৫ নভেম্বর থেকে অনুমতি ছাড়া চিকিৎসা ছুটিতে থাকার কারণে এই শিক্ষক টানা ১ বছর ৭ মাস স্কুল কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না।