খুলনা | সোমবার | ০৫ মে ২০২৫ | ২১ বৈশাখ ১৪৩২

‘মামলা করতে এলে সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের সুযোগ পুলিশের নেই’

পলাতক পুলিশ সদস্যদের ফেরাতে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হবে : আইজিপি

খবর প্রতিবেদন |
০১:২৮ এ.এম | ২৯ এপ্রিল ২০২৫


জুলাই মাসে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানে সরাসরি জড়িত অনেক পুলিশ সদস্য বর্তমানে বিদেশে পলাতক রয়েছেন। দেশে থাকা অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের গ্রেফতার করা হচ্ছে এবং বিদেশে পলাতকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোঃ বাহারুল আলম। আজ সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইজিপি এসব কথা বলেন।
আইজিপি জানান, গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে গুলি চালানো ও গুলির নির্দেশদাতাদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। এ পর্যন্ত ১ হাজার ৫০০টির বেশি মামলা হয়েছে, যার মধ্যে ৬০০টিরও বেশি হত্যা মামলা। তদন্ত শেষ না হলে দায় নির্ধারণ ও প্রকৃত নির্দেশদাতা চিহ্নিত করা কঠিন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি আরও বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের আট মাস পরও ভুয়া মামলা দায়ের ও নিরীহ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ উঠছে।
আইজিপি স্বীকার করেন, কোনো অপরাধে জড়িত ৫-১০ জন থাকলেও অনেক সময় ৩০০ জনের নাম অভিযোগে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে তিনি আশ্বস্ত করেন, তদন্তে প্রকৃত অপরাধীরাই গ্রেফতার হবেন, নিরপরাধ কেউ হয়রানির শিকার হবেন না।
পুলিশ সংস্কার বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে বাহারুল আলম বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে একটি স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশনের পক্ষে মত দিয়ে আসছি। সেখানে গ্রেফতার, মামলা ও তদন্ত ইত্যাদি বিষয় কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে বদলি, বেতন ও পদোন্নতির মতো বিষয়গুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনেই থাকবে।’
আইজিপি জানান, সংস্কার কমিশন নীতিগতভাবে এসব বিষয়ে একমত হলেও এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি।
আইজিপি বলেন, ‘কেউ মামলা করতে এলে সেটার সত্য-মিথ্যা যাচাই করার সুযোগ পুলিশের নেই। মামলা এখন সবাই নিজের হাতে লিখে নিয়ে আসে। সেটি পুলিশকে মামলা হিসেবে রুজু করতে হয়। যাচাই করার সুযোগ নেই।’ তিনি বলেন, ‘পরে তদন্ত করে দেখা হয় অভিযোগ কতটুকু সত্য, কতটুকু মিথ্যা। সত্যটুকু তদন্তে উঠিয়ে আমরা আদালতে পাঠাই।’
‘যতটুকু সম্ভব অন্যায় আবদার কম করার’ অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক সময় অন্যায় আবদারের মুখোমুখি হই। ওমককে বন্দি করেন, ওমককে ছেড়ে দেন, ওমককে পদক দেন-এসব আবদারও আসে।’
তবে, কারা তার কাছে এসব ‘অন্যায় আবদার’ করেন সে বিষয়ে কিছু বলেননি আইজিপি।
দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ‘ভুল ত্র“টি ধরিয়ে দেওয়া’র আহŸান জানিয়ে আইজিপি বলেন, ‘পাঁচ আগস্টের পরে অনেকে অসৎ উদ্দেশ্যে মানুষের কাছ থেকে টাকা-পয়সা আদায়ের জন্য, হ্যারাস করার জন্য মামলা করে। অপরাধ হয়তো করেছে ৫-১০ জন, তার সঙ্গে আরও ৩০০ জনের নাম দিয়ে মামলা করেছেন। গতকালও এমন একটি মামলা হয়েছে।’
তিনি নিশ্চিত করেন, ‘ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছি, কাউকে যেন হয়রানিমূলকভাবে গ্রেফতার না করা হয়। তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে, শুধু তাদেরকেই গ্রেফতার করা হবে।’ 
আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, পুলিশ এখনো ‘স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশন’ গঠনের বিষয়ে অপেক্ষায় আছে। আমরা আশা করছি এটা গঠন করা হবে। সরকারকে আমরা আমাদের কথাগুলো জানাচ্ছি। 
বাহারুল আলম বলেন, ৫ আগস্টের পর সবচেয়ে বেশি আলোচনা ছিল পুলিশের সংস্কার নিয়ে। রাষ্ট্র কাঠামোর বিভিন্ন জায়গায় এই আলোচনাটি এসেছে। বলা হচ্ছে সংস্কার যখন হয় না তখন এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পুলিশের অতিরিক্ত বল প্রয়োগের ক্ষেত্রে একই আলোচনা এসেছে। সংস্কারের উদ্দেশ্যে সরকার পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু এই আলোচনা যখন ঐকমত্য কমিশনের গেল তখন অন্যান্য সংস্কার কমিশন গেলেও পুলিশ সংস্কারের আলোচনা আর দেখা যাচ্ছে না।
পুলিশ সংস্কারের সর্বশেষ অবস্থা ও পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রস্তাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, আমরা খুব আশান্বিত ছিলাম যেহেতু পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম পুলিশের জন্য জনগুরুত্বপূর্ণ কিছু সুপারিশ দেবেন। 
‘পুলিশের পক্ষ থেকে আমরাও কিছু সাজেশন দিয়েছিলাম একটি স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশন গঠন করা, সরাসরি নির্বাহী নিয়ন্ত্রণে না রেখে পুলিশকে কিছু অটোনামি বা স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার।
পুলিশের এই পরামর্শের ভিত্তিতে নীতিগত ভাবে একমত হলে হলেও পুলিশ সংস্কার কমিশন সেটা এলাবরেট করেননি, কোনো কাঠামো দেননি। পুলিশ সংস্কার কমিশন যেসব সুপারিশ করেছে সেগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে বলে মত দিয়েছে। অর্থাৎ এক্সিকিউটিভ পর্যায়ে এসব বাস্তবায়ন হবে। যেমন থানায় একজন নারী পুলিশ সদস্য সবসময় থাকবে। যাতে করে নারী ও শিশু পুলিশি সেবা পান। পুলিশ যখন কাউকে গ্রেপ্তার করবে, জিজ্ঞাসাবাদ করবে, সেটা স্বচ্ছ হতে হবে। এটা আসামির আইনজীবীর সামনে হতে হবে। এ জাতীয় অনেক ভালো ভালো সুপারিশ তারা করেছে।
আইজিপি বলেন, কিন্তু আমাদের প্রধান পরামর্শ ছিল স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করা। যাতে করে পুলিশের স্বাতন্ত্র্য বজায় থাকে। যাতে করে কর্তৃপক্ষের চাপের মুখোমুখি হতে না হয়। এই জায়গায় পুলিশ অপেক্ষা করে আছে। আমরা আশা করছি এটা অ্যাড্রেস করা হবে। আমরা সরকারকে আমাদের কথাগুলো জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, অনেকে বলেন এই সরকারের আমলে না হলে আর কখনো হবে না। সেজন্যই আমরা এখনই এগুলো করতে চাচ্ছি।