খুলনা | সোমবার | ০৫ মে ২০২৫ | ২১ বৈশাখ ১৪৩২

আমরা বরাবরই সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে ছিলাম-আছি-থাকব : মির্জা ফখরুল

খবর প্রতিবেদন |
০৩:৪৫ পি.এম | ০৪ মে ২০২৫


বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা বরাবরই সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতে থাকব। এবার সরকারে থাকি আর না থাকি। আমরা কখনোই অন্যায়ভাবে অন্যের মতকে চাপিয়ে দেওয়াকে সমর্থন করব না।

আজ রোববার (৪ মে) বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ২০২৫ উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টি নতুন নয়। আমরা যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছি, সেই ষাটের দশক থেকে, তখন থেকে এই বিষয়টি সবচেয়ে সামনে এসেছে। পাকিস্তান শাসকদের বিরুদ্ধে সেই সময়েও আমরা কথা বলেছি, আন্দোলন করেছি, কাজ করেছি। একটি সুবিধা ছিল। তখন সংবাদমাধ্যমের একটি নিজস্ব স্বকীয়তা ছিল। যেখানে তাদের কোনো গোষ্ঠীভুক্ত করা অতটা সহজ হতো না। তাদের দেশপ্রেম, আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধ অনেক উঁচু দরের ছিল।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিঃসন্দেহে আগের চেয়ে বেড়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে প্রায় ১৬ ভাগ বেড়েছে। সমস্যা দেখা দেয় তখনই, যখন দেখি কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম গোষ্ঠী আরেকটি গোষ্ঠীকে আক্রমণ করে। কোনো কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠীও সেটার সঙ্গে যুক্ত হয় এবং বিভিন্ন রকম রাজনৈতিক কর্মসূচিও প্রদান করে। আমি জানি না, একটি গণতান্ত্রিক মুক্ত সমাজে এটা কতটুকু গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে?

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আমাদের কাছে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ একটি বিশাল ব্যাপার। এটাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয় আমাদের চিন্তা। এজন্য, আমরা সেটার জন্য লড়াই করেছি, যুদ্ধ করেছি, প্রাণ দিয়েছি। দীর্ঘ ৯ মাস অবিশ্বাস্য রকমের কষ্টের মধ্য দিয়ে পার করেছি। সেই জায়গায় আমরা কোনো আপোষ করতে চাই না। এটাকে অনেকে পছন্দ করতে পারেন, নাও করতে পারেন। তাতে ব্যক্তিগত আমি কিছু মনে করি না। কারণ দ্যাট ইজ মাই বেসিস, ওটাই আমার মূল ভিত্তি।

তিনি আরও বলেন, আমার দলই প্রথম যারা সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে মুক্ত করেছিল ১৯৭৫ সালে। তার আগে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল হয়েছিল, সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যখন দায়িত্বে এলেন, তিনি সংবাদমাধ্যমগুলো চালু করেছেন, স্বাধীনতা দিয়েছেন। আমরা বলি না যে, আমরা একেবারে ধোয়া তুলসি পাতা। কিন্তু এ কথা নিঃসন্দেহে বলতে পারি, আমরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য অনেক বেশি কাজ করেছি।

বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, জনগণের ওপর আস্থা রাখতে হবে৷ তার চিন্তাভাবনা, তার রায়, তার মতের ওপর আস্থা রাখতে হবে। আমি চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসা দরকার গণতন্ত্রের জন্য। আমাদের সংবাদমাধ্যমে এই চর্চাটা বেশি করা দরকার। গণতন্ত্র চর্চা করার জিনিস।

তিনি আরও বলেন, আমাদের নিয়ে প্রচারণা চালানো হয়, আমরা নাকি সংস্কারের বিরুদ্ধে। আমরা সংস্কার নয়, নির্বাচন চাই। অথচ সংস্কার বিষয়টিই শুরু হয়েছে আমাদের দ্বারা। আমরাই একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থায় আসছি। আমরাই প্রেসিডেন্ট ফর্ম সরকার থেকে পার্লামেন্ট ফর্ম সরকারে গেছি। অনেক অনেক আপত্তি সত্ত্বেও আমরা কেয়ারটেকার সরকারকে সংবিধানে নিয়ে এসেছি। এগুলো বাস্তবতা। ওই বাস্তবতা থেকে অযথা আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করে অন্যভাবে দেখানোর চেষ্টা করা এটার পেছনে কিছু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকলেও থাকতে পারে।

সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের সভাপতিত্বে এবং সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালণায় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সম্পাদক পরিষদের সহ-সভাপতি ও ইংরেজি দৈনিক নিউ এইজের সম্পাদক নুরুল কবির, সম্পাদক পরিষদের কোষাধ্যক্ষ ও দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনে প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম, সমকালের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ প্রমুখ।