খুলনা | মঙ্গলবার | ০৬ মে ২০২৫ | ২৩ বৈশাখ ১৪৩২

সুন্দরবন উপকূলে দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ জরুরি

|
১২:১০ এ.এম | ০৫ মে ২০২৫


সুন্দরবন উপকূলে কপোতাক্ষ নদের পাউবো’র ভেড়িবাঁধে আবার ভয়াবহ ভাঙনের খবর গভীর উদ্বেগজনক। গেল শুক্রবার ভোররাতে আচমকা এই ভাঙনে ২০০ ফুটের অধিক স্থানে বাঁধে চিড় ধরেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে নদের লবণাক্ত জল প্রবেশ করে অন্তত পাঁচটি গ্রামের মাঠ-ঘের, পুকুর, বসতভিটা ও ফসলের জমি সম্পূর্ণ তলিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রতিবছর এমন বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর নিত্যদিনের বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বস্তুত কয়রাসহ আশাশুনি ইউনিয়নে একাধিক দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ। এর পূর্ব-দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত পাউবো’র ভেড়িবাঁধ বারবার ভেঙে মানুষকে সর্বশান্ত করে তুলছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জোয়ারের প্রবল চাপ এবং অপরিকল্পিত ও দুর্বল নির্মাণসব মিলিয়ে এই বাঁধগুলো প্রতিবছর একাধিকবার ধসে পড়ে। ফলে মানুষ ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই নতুন বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধের জন্য উপকূলীয় অঞ্চলে নির্মিত ভেড়িবাঁধের অধিকাংশই প্রকৌশলগত ও বাস্তব পরিস্থিতির নিরিখে টেকসই নয়। কোনো নির্দিষ্ট স্থানে একটি বিপর্যয় দেখা দিলে তা সারা অঞ্চলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে। ফলে একটি বাঁধ ভাঙার মধ্য দিয়ে বহু গ্রাম, বিস্তীর্ণ ফসলী জমি ও মাছের ঘের নিমেষে বিলীন হয়ে যায়। এবারের ভাঙনও সেই রকম একটি দুর্যোগের পূর্বাভাস দিচ্ছে। অবশ্যই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও অধিবাসীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন। পাউবো’র কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন। তবে কেবল ঘটনার পরপর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে এই গভীরতর সমস্যার সুরাহা হবে না। এখন প্রয়োজন পূর্বপরিকল্পিত, প্রকৌশলগতভাবে সংহত ও টেকসই ভেড়িবাঁধ নির্মাণ। প্রতিটি দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধকে আধুনিক প্রযুক্তি, জলবায়ু সহিষ্ণু উপকরণ ও ভৌগোলিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে পুনঃনির্মাণ করতে হবে। স্থায়ী ব্যবস্থা না গড়লে উপকূলের মানুষের জীবন কখনোই নিরাপদ হবে না।
সঙ্গে সঙ্গে উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ ও জীবনমান রক্ষার্থে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনা নিতে হবে। স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণমূলক জল ব্যবস্থাপনা, বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে স্বেচ্ছাসেবী কাঠামো গঠন এবং দুর্যোগপূর্ব প্রস্তুতি জোরদার করাও সমান জরুরি। কেবল সরকারি প্রকল্প ও বরাদ্দের ওপর নির্ভরশীল থেকে উপকূল রক্ষা সম্ভব নয়। এর জন্য চাই রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
স্মরণ রাখা প্রয়োজন, উপকূল বাংলাদেশের জন্য শুধু ভূগোল নয়-এটি আমাদের খাদ্যনিরাপত্তা, পরিবেশসমতা ও সার্বিক অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ। প্রতিনিয়ত উপকূলের মানুষের জীবিকা হুমকিতে পড়লে এর প্রভাব পুরো দেশের ওপর এসে পড়ে। তাই আশাশুনির প্রতাপনগর হোক এক সতর্কবার্তা। নোনাপানির সঙ্গে এ লড়াইয়ে এখনই আমাদের স্থায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে। বিলম্ব মানেই সর্বনাশ।