খুলনা | বৃহস্পতিবার | ০৮ মে ২০২৫ | ২৪ বৈশাখ ১৪৩২

দ্বিতীয় দিনেও ক্লাসে যাননি কুয়েটের শিক্ষকরা : ক্ষমা চেয়ে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি শিক্ষার্থীদের

লাঞ্ছনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে সাত দিনের আল্টিমেটাম সমিতির

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:৪১ এ.এম | ০৬ মে ২০২৫


প্রায় আড়াই মাস পর খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ফুয়েট) গতকাল রোববার থেকে ক্লাস শুরুর কথা থাকলেও এখনও ক্লাসে যাননি শিক্ষকরা। এর ফলে বিপাকে পড়েছেন ৫ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী।
অন্যদিকে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জড়িতদের বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। সোমবার দুপুরে কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান সমিতির নেতারা। প্রেস ব্রিফিংয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মোঃ ফারুক হোসেন।
তিনি বলেন, গত ২৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষা উপদেষ্টা এবং ইউজিসি প্রতিনিধি দল যে পক্ষপাতিত্বমূলক ভূমিকা পালন করেছেন তাতে শিক্ষকবৃন্দ উপেক্ষিত হয়েছে। শিক্ষকবৃন্দ এতে মর্মাহত হয়েছে এবং নিন্দা জানাচ্ছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয় গত ১৮ ও ১৯ ফেব্র“য়ারি ক্যাম্পাসে সংঘটিত অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় শিক্ষকবৃন্দকে লাঞ্ছিত করায় জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করে শিক্ষকদের ক্লাসে ফেরার পরিবেশ তৈরি ও একাডেমিক কার্যক্রম চালু করার জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় শিক্ষকবৃন্দ প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবে। শিক্ষকদের সাইবার বুলিং, অবমাননা বা গুজবের সাথে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের ৫ দফার সাথে একাত্মতা পোষণ করে দ্রুততম সময়ে তা বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি। 
ড. মোঃ ফারুক হোসেন বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুয়েট বিরোধী অপপ্রচারে লিপ্তদের কুাক্তপূর্বক সেগুলো বন্ধ এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই পরিবেশ নিশ্চিত করা না হলে শিক্ষকবৃন্দ সকল প্রকার প্রশাসনিক কাজ থেকে বিরত থাকবে।
এদিকে বিকেল ৩টায় শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে উপাচার্যের মাধ্যমে শিক্ষকদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, গত ১৮ ফেব্র“য়ারি সংঘটিত হামলার ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত উপাচার্য স্যারকে জানিয়েছি। আমরা ৫ দফা দাবি উত্থাপন করেছি। দ্রুত ক্লাসে ফিরতে পারি সেই পরিবেশ সৃষ্টির বিষয়ে বলা হয়েছে। শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে লিখিত দিয়েছি। তারা ক্ষমা না করা পর্যন্ত আমরা প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবো।
এর আগে অন্যদিকে সকালে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে কুয়েটের নবনিযুক্ত অন্তর্বর্তী উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হযরত আলী সোমবার অডিটোরিয়ামে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে  বৈঠক করেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শুরু হয়ে কুয়েট অডিটোরিয়ামে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলে সভা। বৈঠকে কুয়েটের ডিন, ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ও রেজিস্ট্রার উপস্থিত ছিলেন।
কুয়েটের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোঃ আনিসুর রহমান ভুঞা বলেন, উপাচার্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে সংকট নিরসনের চেষ্টা করছেন। 
কুয়েটের শিক্ষকরা জানান, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে সংঘর্ষে কুয়েটের অনেক শিক্ষার্থী আহত হন। ওই দিন বিকেল থেকে পরদিন বিকেল পর্যন্ত কুয়েটের মেডিকেল সেন্টারে সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদকে অবরুদ্ধ করে রাখে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী। তারা বিদায়ী উপাচার্যসহ কয়েকজন শিক্ষককে মারধর, লাঞ্চিত ও গালাগাল করেন। পরবর্তী ২ মাস আন্দোলন চলাকালে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী শিক্ষকদের নিয়ে কটুক্তি করে। এ নিয়েই মূলত শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ। 
কুয়েটের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ভুল-ত্র“টির জন্য শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। আমরা শিক্ষকদের সঙ্গে বিদ্বেষমূলক কোনো আচরণে যেতে চাই না। আবারও শিক্ষকদের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইবো।
গত ১৮ ফেব্র“য়ারি কুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে সংঘর্ষের ঘটনায় ২৫ ফেব্র“য়ারি কুয়েট বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে কুয়েটে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এরপর শিক্ষার্থীদের এক দফা আন্দোলন ও আমরণ অনশনের প্রেক্ষিতে ২৫ এপ্রিল উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে অপসারণ করে সরকার। ১ মে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ হযরত আলীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর আগে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ মে থেকে ক্লাস শুরুর কথা থাকলেও একাডেমিক কার্যক্রমে ফেরেননি শিক্ষকরা। ছাত্রদের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিতের বিচার না পাওয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফিরবেন না তারা।