খুলনা | শুক্রবার | ০৯ মে ২০২৫ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

উপকূলীয় ভেড়িবাঁধ প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের বিকল্প নেই

|
১২:২৫ এ.এম | ০৮ মে ২০২৫


পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রকল্প আর পরিকল্পনাহীনতা যেন সমার্থক হয়ে উঠেছে। কয়রার ভেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পটি তার জীবন্ত দৃষ্টান্ত। ১ হাজার ১৭২ কোটি টাকার প্রকল্পটি গত বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এক দফা মেয়াদ বাড়ানোর পরও কাজের অগ্রগতি মাত্র ২৬ শতাংশ। এটা অত্যন্ত হতাশাজনক চিত্র। এর মাধ্যমে পাউবো’র অদক্ষতাও প্রকাশ পায়। বিগত বছরগুলোয় উন্নয়ন প্রকল্প মানেই দফায় দফায় মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধি স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছিল। ক্ষমতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার, রাজনৈতিক দলের নেতা ও একশ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের যে অসাধু চক্র গড়ে উঠেছিল, তারাই মূলত প্রকল্পে থেকে লাভবান হতো। অন্যদিকে সময়মতো প্রকল্প শেষ না হওয়ায় নাগরিকেরা কাক্সিক্ষত সুফল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতেন। পাউবো’র প্রকল্পগুলোও এই কাঠামোবদ্ধ অনিয়মের বাইরে ছিল না।
গণমাধ্যমের খবর জানাচ্ছে, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় কয়রার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদী তীরবর্তী প্রায় ৩২ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার ও টেকসইকরণের প্রকল্প নেওয়া হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে। খুলনা পাউবো ও সাতক্ষীরা পাউবো-২ যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছে। বাঁধের উচ্চতা ও প্রশস্ততা বাড়ানো, ঢাল সংরক্ষণ, নদীশাসন ও বনায়ন করা হবে। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ¡াস ও বন্যা থেকে উপকূলীয় এলাকার জীবন ও সম্পদ রক্ষার ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে এটি একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রকল্প। কেননা উপকূলীয় অঞ্চলে বেশির ভাগ ভেড়িবাঁধ অনেক পুরোনো। উচ্চতা ও প্রশস্ততা কম থাকায় সেগুলোর বন্যা, জলোচ্ছ¡াস ঠেকানোর মতো সক্ষমতা নেই।
গত বছরেও সাতক্ষীরা, বাগেরহাটে বন্যার সময়ে ভেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। তাতে ফসল, মাছের ঘেরও ভেসে গিয়েছিল। এখন প্রশ্ন হলো কোনো প্রকল্প যদি সময়মতো না-ই করা গেল, তাহলে প্রকল্প নেওয়ার অর্থ কী? কয়রার ভেড়িবাঁধ নির্মাণে শম্বুকগতিতে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বাড়ছে। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, আসন্ন বর্ষা মৌসুমের আগে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোয় মেরামতকাজ শেষ না হলে অনেক এলাকা প্লাবিত হতে পারে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, কাজ দেরি হওয়ার মূল কারণ জমি অধিগ্রহণে জটিলতা ও বরাদ্দ ছাড় না পাওয়া। পাউবোও বরাদ্দের সংকটের কথা বলেছে। কিন্তু প্রকল্প নেওয়ার ২৮ মাস পরে এসে তহবিলসংকট ও জমি অধিগ্রহণের যুক্তি কতটা যৌক্তিক? পাউবোকে তার পুরোনো চর্চা থেকে অবশ্যই বের হয়ে আসতে হবে। আমরা মনে করি, কয়রার বাসিন্দাদের জানমাল রক্ষায় ভেড়িবাঁধ প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।