খুলনা | শনিবার | ১০ মে ২০২৫ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা গণতন্ত্রে উত্তরণকে সহজ করবে

|
০১:১১ এ.এম | ০৯ মে ২০২৫


বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দীর্ঘ বন্দিদশা থেকে মুক্তির পর যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। চিকিৎসা শেষে গত মঙ্গলবার তিনি দেশে ফিরে এলে এক অভূতপূর্ব ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানানোর জন্য বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত রাস্তার পাশে দলটির নেতা-কর্মী ছাড়াও লাখো মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে দেখা যায়। তাঁর এই ফিরে আসা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন উদ্দীপনার সঞ্চার করেছে।
খালেদা জিয়ার ফেরা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তাঁর উপস্থিতি দেশের রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রতিস্থাপনে ভূমিকা রাখবে। কারণ এশিয়া মহাদেশের নারী নেত্রীদের মধ্যে গণতন্ত্রের জন্য যে কয়েকজন সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছেন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাঁদের অন্যতম খালেদা জিয়া। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে কখনো আপোষ করেননি। গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ। খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা সেই অংশগ্রহণের পথ প্রশস্ত করবে বলে অনেকে মনে করছেন। তবে তাঁর শারীরিক অবস্থা এবং জনগণের আকাক্সক্ষা-এই দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে। এ জন্যই স্বাগত জানানোর পাশাপাশি জনতা তাঁর সুস্থতা কামনা করেছে।
সাধারণ মানুষ একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ প্রত্যাশা করে। দীর্ঘ স্বৈরশাসনের অবসানের পর খালেদা জিয়া এখন শুধু বিএনপি’র নয়, সারা বাংলাদেশের সব মানুষের ভালোবাসা ও আবেগের কেন্দ্রে রয়েছেন। খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যও একটি সুযোগ। এই মুহুর্তে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমঝোতার মাধ্যমে একটি সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করা জরুরি। গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে মুক্তিলাভের পর খালেদা জিয়া দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তা আমাদের আশাবাদী করে।
গত এপ্রিল মাসে দলের বর্ধিত সভায় বক্তৃতাকালে তিনি একবারের জন্যও রাজনৈতিক জীবনের প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করেননি। প্রচণ্ড দমন, পীড়ন, বাড়ি থেকে উচ্ছেদ, বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টাসহ কোনো কিছুর জন্যই তিনি বিষোদগার করেননি, বরং ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন।
খালেদা জিয়ার ফিরে আসা গণতন্ত্রে উত্তরণকে সহজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গণতন্ত্রের স্বার্থে সব রাজনৈতিক দলের উচিত সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা। গণতন্ত্রের মূল চেতনা হলো জনগণের অংশগ্রহণ। খালেদা জিয়ার প্রত্যাবর্তন সেই অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি করবে। তবে এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হলে সব রাজনৈতিক দলকেই দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা সেই লক্ষ্য অর্জনে একটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।