খুলনা | শুক্রবার | ১৬ মে ২০২৫ | ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দাবি আদায়ে অনড় শিক্ষার্থীরা, কাকরাইলে তীব্র যানজট

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শাটডাউন’

খবর প্রতিবেদন |
০৩:২২ পি.এম | ১৫ মে ২০২৫


দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ‘শাটডাউন’-এর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা চলবে না। রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে চলমান অবস্থান কর্মসূচিতে বৃহস্পতিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোঃ রইছ উদ্দিন এ ঘোষণা দেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা শেষে বেলা দুইটার দিকে এই শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের অধিকার চাইতে, আমাদের দাবি আদায়ের জন্য এসেছি। দাবি আদায় না করে আমরা ঘরে ফিরব না।’
অধ্যাপক ড. রইস উদ্দিন বলেন, আমরা এখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার নিয়ে এসেছি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি আদায়ের জন্য এসেছি। আমাদের ওপরে নির্বিচারে পুলিশ হামলা চালিয়েছে। এটি সম্পূর্ণ অরাজকতা এবং অন্যায়। আমরা কারো বিরুদ্ধে এখানে কথা বলতে আসিনি কোনো ষড়যন্ত্র করতে আসিনি। আমাদের অধিকার চাইতে আমাদের দাবি আদায় করতে এসেছি। দাবি আদায় না করে আমরা ঘরে ফিরব না। দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাটডাউন চলবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষা পরীক্ষা কার্যক্রম চলবে না। দাবি আদায় করে আমরা ঘরে ফিরব।
তিনি বলেন, আমাদেরকে এখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য যদি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় ভালো হবে না। আমার চোখের সামনে আমার কোনো শিক্ষার্থীকে কেউ আঘাত করতে পারবে না।
এখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে তা ভালো হবে না বলে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে কোনো শিক্ষার্থীকে কেউ আঘাত করতে পারবে না।’
এ সময় শিক্ষার্থীরা শ্লোগান ‘আবাসন চাই, বঞ্চনা নয়’, ‘বাজেট কাটছাঁট চলবে না’, ‘হামলার বিচার চাই’ ইত্যাদি শ্লোগান দিতে থাকেন।
দাবি আদায়ে অনড় জবি শিক্ষার্থীরা, কাকরাইলে তীব্র যানজট : আবাসন ভাতাসহ তিন দফা দাবি আদায়ে অনড় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। টানা দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ মোড় আটকে আন্দোলন করছেন তারা। এতে কাকরাইল  মোড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে কাকরাইল মোড়ে তীব্র যানজট  দেখা যায়।
রাত ৯টায় সরেজমিনে দেখা যায়, নয়াপল্টন থেকে কাকরাইল, মিন্টো রোড থেকে কাকরাইল ও শান্তিনগর মোড় থেকে কাকরাইল অভিমুখে রাস্তাগুলোয় যানবাহনের দীর্ঘ সারি রয়েছে। মৎস্য ভবন মোড় থেকে কাকরাইল মসজিদ মোড় পর্যন্ত সড়ক বন্ধ থাকায় সেসব সড়কে চলাচলকারী যানবাহনগুলো ঘুরে কাকরাইল হয়ে চলাচল করছে। এতে কাকরাইল মোড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, দুই দিন ধরে কাকরাইল মসজিদ মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। একই কথা বলেন বাসচালকরাও।
এদিকে তিন দফা দাবিতে বুধবার দিনভর আন্দোলনের পর রাতেও শিক্ষার্থীরা কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অবস্থান করেন। বৃহস্পতিবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন সংলগ্ন কাকরাইল এলাকায় অবস্থানরত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আরও শিক্ষার্থী যোগ দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে দলে দল আসেন তারা। মৎস্যভবন মোড়ে পুলিশের ব্যারিকেড ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস দিয়ে সড়ক বন্ধ করে দেন তারা। এছাড়া কাকরাইল মসজিদ মোড়েও ব্যারিকেড দিয়ে সড়ক বন্ধ করে দেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা সড়ক ছেড়ে যাবেন না।
মঙ্গলবার দুপুরে দাবি আদায়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধিদল ইউজিসিতে (বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন) যান। কিন্তু ইউজিসি থেকে আশানুরূপ কোনো ঘোষণা না আসায় ‘লংমার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘জুলাই ঐক্য’ সংগঠনের পক্ষ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়।
এর আগে বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক পেজে পোস্ট করা জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ইনস্টিটিউট ও বিভাগের পরীক্ষা অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হলো।
এদিকে পুলিশের হামলার বিচার ও তিন দফা দাবিতে এখনো কাকরাইল মোড়ে অবস্থান করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্তত ২৪টি বাস কাকরাইল মোড়ের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এসব বাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তারা আন্দোলনস্থলে যান।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসনবৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করার তিন দফা দাবিতে কিছুদিন ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্য চত্বরের সামনে থেকে লংমার্চ শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লংমার্চ কাকরাইল মসজিদের সামনে পৌঁছালে বাধা দেয় পুলিশ।
এ সময় আন্দোলনকারীরা পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। একপর্যায়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে আন্দোলনকারীরা পিছু হটেন। এ সময় প্রায় অর্ধশত শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হন বলে আন্দোলনকারীরা জানান। পরে বেলা দুইটার দিকে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এ মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আশপাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বিকেল চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি বাসে এসে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন কয়েকশ’ শিক্ষক-শিক্ষার্থী।
রাত ১০টার পর অবস্থান কর্মসূচিতে আসেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। এ সময় তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে দ্রুতই প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করবেন। বৈঠকে শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির বিষয়ে সমাধানের চেষ্টা করা হবে। যেকোনো যৌক্তিক আন্দোলনের বিষয়ে সরকার কথা শুনবে।
তবে রাত ১২টার পর আন্দোলনকারীদের পক্ষে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন। তিনি বলেন, ‘উপদেষ্টা (মাহফুজ আলম) যে ব্রিফিং করেছেন, সেটি আরেকটি অস্পষ্টতা তৈরি করেছে। আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্তে এসেছি, সুস্পষ্ট ঘোষণা ছাড়া আমরা কোনো ভাবেই এই জায়গা ছেড়ে যাব না।’
তাদের তিন দফা দাবি হলো- আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি আগামী অর্থবছর থেকে কার্যকর করা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করতে হবে এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা।