খুলনা | শনিবার | ১৭ মে ২০২৫ | ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হোক

|
১২:১১ এ.এম | ১৬ মে ২০২৫


জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের যেসব ঘটনা ঘটেছে তার যথাযথ বিচার দেখার জন্য জাতি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা কর্তৃক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। এটি অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। প্রতিবেদনে ‘ঊর্ধ্বতনের নির্দেশনার দায়’সহ পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে, যেখানে শেখ হাসিনাকে ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে উলে­খ করা হয়েছে।চিফ প্রসিকিউটর পূর্বে গণহত্যার অভিযোগের কথা বললেও দাখিলকৃত প্রতিবেদনে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়নি। চিফ প্রসিকিউটরের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, জুলাই-আগস্টে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটলেও সেটা আন্তর্জাতিক আইনে গণহত্যা হিসেবে বিবেচিত হওয়ার মতো সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড পূরণ করে না।
তদন্ত সংস্থা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগের বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছে। প্রথমত, ১৪ জুলাইয়ের সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলার মাধ্যমে তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের উসকানি ও প্ররোচনা দিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত, তদন্ত সংস্থা তাঁর কিছু টেলিফোন কথোপকথন জব্দ করেছে, যেখানে তিনি রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের ওপর মরণাস্ত্র ব্যবহারের সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। মামলার অন্য দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) চৌধুরী আবদুল­াহ আল মামুন।এই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ও কাঙ্ক্ষিত বিচারের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দেড় হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। বহু মানুষ আহত ও পঙ্গু হয়েছে। গণহত্যার অভিযোগ বাদ দেওয়া হলেও এটি বড় ধরনের হত্যাযজ্ঞ। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগগুলো সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণের মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়ায় দোষীদের কত দ্রুত শাস্তি দেওয়া হবে, জাতি সেই অপেক্ষায় আছে। চিফ প্রসিকিউটরও আশা প্রকাশ করেছেন যে স্বল্প সময়ের মধ্যেই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। তবে তিনি একই সঙ্গে রাজপথের চাপের মুখে দ্রুত বিচারের চেয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করেছেন।
এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করা হয়েছে। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিসরে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। অন্যদিকে গণ অধিকার পরিষদ ১৪ দলীয় জোটভুক্ত দলগুলোর নিবন্ধন বাতিলেরও দাবি জানিয়েছে।
অন্তর্র্বতী সরকার স্পষ্ট করেছে যে বিচারাধীন বিষয়গুলোতে কোনো প্রকার রাজনৈতিক প্রভাব বা জনমনে ভীতির সঞ্চার বরদাশত করা হবে না। তবে সরকারের বিবৃতিতে এটিও স্পষ্ট করা হয়েছে যে এই নিষেধাজ্ঞা অন্য কোনো রাজনৈতিক দল বা মুক্তচিন্তার মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করে না।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই তদন্ত প্রতিবেদন এবং পরবর্তী পদক্ষেপগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং আইনের শাসন সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে এই বিচার প্রক্রিয়া কতদূর সফল হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।