খুলনা | শনিবার | ১৭ মে ২০২৫ | ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মসজিদ-মাদ্রাসাসহ ৩৫০ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুঁড়িয়ে দিলো ভারত

খবর প্রতিবেদন |
০১:৫৯ এ.এম | ১৬ মে ২০২৫


ভারতের উত্তর প্রদেশে প্রায় ৩০০ মুসলিম ধর্মীয় স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। অভিযানে মাদ্রাসা, মসজিদ, মাজার ও ঈদগাহসহ নানা স্থাপনাকে ‘অবৈধ’ উলে­খ করে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। প্রশাসনের দাবি, এসব স্থাপনা সরকারি জমি দখল করে অনুমতি ছাড়া নির্মাণ করা হয়েছিল।
রাজ্যের প্রশাসনিক বিবৃতি অনুযায়ী, ভারত-নেপাল সীমান্তবর্তী সাতটি জেলায় (মহারাজগঞ্জ, সিদ্ধার্থনগর, বালরামপুর, শ্রাবস্তী, বহরাইচ, লখিমপুর খেরি ও পিলিভীত) অভিযান চালানো হচ্ছে। বুধবার একদিনেই মহারাজগঞ্জে দু’টি, শ্রাবস্তী ও বহরাইচে একটি করে স্থাপনা ভাঙা হয়েছে।  
এখন পর্যন্ত ভাঙা হয়েছে: ২২৫টি ‘অবৈধ’ মাদ্রাসা, ৩০টি মসজিদ, ২৫টি মাজার, ৬টি ঈদগাহ। দেশটির গণমাধ্যম হিন্দুস্থান টাইমস এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
মহারাজগঞ্জ জেলার ফারেন্ডা তহসিলের সেমরাহানি গ্রাম এবং নৌতনওয়া তহসিলের জুগৌলি গ্রামে নির্মিত দু’টি তথাকথিত অবৈধ মাদ্রাসা ভেঙে ফেলা হয়। শ্রাবস্তীর ভিঙ্গা তহসিলের কালীমপুরওয়াতে সরকারি জমিতে নির্মিত একটি ‘অনুমতিহীন’ মাদরাসাও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, বহরাইচে বন বিভাগের জমিতে একটি মাজার অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল অভিযোগ তুলে সেটিও উচ্ছেদ করা হয়েছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এসব ‘অবৈধ’ স্থাপনা ভারত-নেপাল সীমান্তের ১০ কিলোমিটার ভেতরে গড়ে তোলা হয়েছিল। সরকারি জমি, বনভূমি কিংবা অন্যান্য জনসম্পত্তি দখল করে গড়ে ওঠা এসব স্থাপনা ধর্মীয় রূপ পেলেও, আইন মেনে গড়ে তোলা হয়নি বলে উলে­খ করেছে প্রশাসন। তবে এসব স্থাপনা নির্মাণে কোনো অনুমতি বা বৈধ নথিপত্র ছিল না।’
উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সুস্পষ্ট নির্দেশ দেন, ধর্মীয় স্থাপনার নামে কোনো দখলদারি বরদাস্ত করা হবে না। এই নির্দেশনার ভিত্তিতে পিলভীত, শ্রাবস্তী, বালরামপুর, বাহরাইচ, সিদ্ধার্থনগর এবং মহারাজগঞ্জ জেলার প্রশাসন ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে।
এই অভিযানে অংশ নেয় স্থানীয় পুলিশ, জেলা প্রশাসন এবং ভূমি পরিদর্শন দপ্তর। অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের পেছনে কারা জড়িত, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ : এ ঘটনায় ভারতের মুসলিম সমাজ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। যদিও এখনো কোনো সংগঠন সরাসরি প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেনি, তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তীব্র হয়ে উঠছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন-আইন প্রয়োগের নামে একপাক্ষিক ধর্মীয়  বৈষম্যের পথে হাঁটছে না তো রাজ্য সরকার?
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ : বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, উত্তর প্রদেশের সা¤প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সীমান্ত নিরাপত্তা ইস্যুকে সামনে রেখে সরকার কড়া অবস্থান নিচ্ছে। তবে ধর্মীয় সংবেদনশীলতা মাথায় রেখে ‘নির্বিচার উচ্ছেদ অভিযান’ কতটা সঠিক, তা নিয়ে মতবিরোধ স্পষ্ট।
উত্তর প্রদেশে ৩০০ মুসলিম স্থাপনা উচ্ছেদে প্রশাসনের পদক্ষেপকে ‘আইন অনুযায়ী’ বলা হলেও, এটি নতুন করে ধর্মীয় বৈষম্য ও সংখ্যালঘু অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপের দিকেও নজর রাখছে আন্তর্জাতিক মহল।