খুলনা | শনিবার | ১৭ মে ২০২৫ | ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল দাবি মেনে নিয়েছে সরকার

খবর প্রতিবেদন |
০৮:০৫ পি.এম | ১৬ মে ২০২৫

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষার্থীদের টানা তিন দিন প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার রাস্তায় অবস্থান কর্মসূচির পর শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত দাবি মেনে নিয়েছে সরকার। এ কথা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম। শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টায় ইউজিসি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে এ ঘোষণা দেন জবি ভিসি। তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন বাজেট বৃদ্ধি করার মাধ্যমে প্রথম দাবির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আবাসন সংকট নিরসনে অস্থায়ী হল নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে, কাজ শুরু হবে। দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুরু হবে, ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।
ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ  বলেন, আমরা সারাদিন এটা নিয়ে কাজ করেছি। ইউজিসি একটি পরিবার হিসেবে সবাই মিলে সমাধান করতে পারব। আমরা প্রতিশ্র“তি দিচ্ছি একসঙ্গে বসে সব সমাধান করব। আপনাদের সকল দাবি বাস্তবায়নে আমরা কাজ করছি।
এ সময় ইউজিসি চেয়ারম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি আদায়ের জন্য গণঅনশনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান। এ সময় ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ সাবিনা শরমীন এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্দীন উপস্থিত ছিলেন।
জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন বলেন, আমাদের চতুর্থ দাবি ছিলো আমাদের উপর হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। হামলার ঘটনায় পুলিশ দুঃখ প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া সাত দিনের মধ্যে হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। তবে আবাসন ভাতার দাবি নিয়ে আলোচনা চলছে।
অনশন ভাঙ্গালেন ইউজিসি চেয়ারম্যান : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের টানা তিন দিন প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার রাস্তায় অবস্থানের কর্মসূচির পর শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত চার দফা দাবি মেনে নিয়েছে সরকার।
শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম এ ফায়েজের উপস্থিতিতে এ ঘোষণা দেন জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন বাজেট বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাজেট বৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রথম দাবি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে আবাসন সংকট নিরসনে অস্থায়ী হল নির্মাণে খুব দ্রুত এ কাজ শুরু হবে। দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অতি দ্রুত বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা সারা দিন এটা নিয়ে কাজ করেছি। ইউজিসি একটি পরিবার হিসেবে সবাই মিলে সমাধান করতে পারবো। আমরা প্রতিশ্র“তি দিচ্ছি একসঙ্গে বসে সব সমাধান করবো। আপনাদের সব দাবি বাস্তবায়নে আমরা কাজ করছি।
অনশন ভাঙলেন তবুও : কয়েকজন শিক্ষার্থী অনশন ভাঙলেও কিছু শিক্ষার্থী অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। তিন দফা দাবি পূরণের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা ঘোষণা না করা পর্যন্ত তাঁরা অনশন ভাঙবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট অনুমোদন করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা-এই তিন দাবিতে কিছুদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে তিন দফা বাস্তবায়নের দাবিতে গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে লংমার্চ করেন জগন্নাথের শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুর ১২টার দিকে তাঁদের লংমার্চ কাকরাইলে পৌঁছালে বাধা দেয় পুলিশ। একপর্যায়ে বাধা পার হয়ে শিক্ষার্থীরা যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধশত শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হন।
এরপর ওই দিন বেলা দুইটা থেকে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁদের সঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও শিক্ষক ও শিক্ষার্থী যোগ দেন। এর পর থেকে টানা তিন দিন তাঁরা এই কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন। এর মধ্যে শুক্রবার জুমার নামাজের পর প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়ে সমাবেশ এবং বিকেল চারটা থেকে গণঅনশন শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
ইউজিসি চেয়ারম্যান ও উপাচার্যের বক্তব্যের পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্দিন সরকারের পক্ষ থেকে দাবি পূরণের আশ্বাস দেওয়ার কথা উল্লেখ করে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন। তবে শিক্ষার্থীদের বড় অংশ এখনো আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়ে আছেন। তাঁরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের দাবি বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা ঘোষণা করলে তবেই তাঁরা আন্দোলন থেকে সরবেন।