খুলনা | রবিবার | ১৮ মে ২০২৫ | ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সালমান রুশদির ওপর হামলাকারী তরুণকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড

খবর প্রতিবেদন |
০৩:০৮ পি.এম | ১৭ মে ২০২৫


খ্যাতিমান ব্রিটিশ-ভারতীয় সাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক সালমান রুশদিকে লক্ষ্য করে ছুরি হামলা চালানো তরুণ হাদি মাতার (২৭)-কে ২৫ বছর কারাবাসের সাজা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একটি আদালত। যে ধরনের অপরাধ তিনি করেছেন, তাতে মার্কিন আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়েছে তাকে।

শুক্রবার এই রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। এ সময় আদালতের এজলাসে উপস্থিত ছিলেন মাতার।

২০২২ সালের আগস্টে নিউইয়র্কের চাওতাউকুয়া জেলায় একটি অনুষ্ঠানে মঞ্চে বক্তব্য দেওয়ার সময় ছুরি হাতে সালমান রুশদির দিকে ছুটে যান হাদি মাতার। সে সময় তার বয়স ছিল ২৪ বছর। মঞ্চে উঠে রুশদির ঘাড়, মাথা ও দেহকে লক্ষ্য করে ১৫ বার ছুরিকাঘাত করে মাতার।

হামলায় গুরুতর আহত সালমান রুশদিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেওয়া। হাসপাতালে কয়েক দফা সার্জারির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে রুশদিকে। নিজের একটি চোখের দৃষ্টিশক্তিও হারিয়েছেন তিনি।

এই মামলার বাদিপক্ষ হিসেবে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন রুশদি। সেখানে তিনি বলেছেন, “সে প্রথমে আমাকে ঘুষি মেরেছিল, তারপর ছুরি বের করে একের পর এক আঘাত করে।”

“আমার বহুদিন লেগেছে ক্ষত সারিয়ে উঠতে। এখনও আমি পুরোপুরি সুস্থ হইনি। ওই ঘটনার পর শারীরিকভাবে আর আগের মতো জোর আমি পাই না।”

অন্যদিকে নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা হাদি মাতার আদালতকে বলেছেন, “সালমান রুশদি অন্যান্য অনেককে অশ্রদ্ধা করেন এবং তিনি চান, সবাই তার মতো হোক। আমি তার এই ধারণার সঙ্গে একমত নই।”

রায় ঘোষণার পর মাতারের আইনজীবী নাথানিয়েল ব্যারনকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন যে মাতার তার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত কি না।

জবাবে ব্যারন বলেছিলেন, “এটি একটি ন্যায্য প্রশ্ন এবং আমার মনে হয় এর উত্তর আমি দিতে পারব না। আমি শুধু এটুকু বলতে পারি যে আমি মনে করি মানুষ মাঝে মাঝে দুর্ভাগ্যবশত অনেক খারাপ সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেটার পরিণতি এত বাজে হয় যে সে অনুতপ্ত কি না— তা ও প্রকাশ করতে অসুবিধা বোধ করে।”

সালমান রুশদির জন্ম ১৯৪৭ সালের জুন মাসে, ভারতের মুম্বাই শহরে এক কাশ্মিরি পরিবারে। প্রথম জীবনে মুম্বাইভিত্তিক বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কপি রাইটার হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। পরে একসময় পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন সাহিত্যে।

১৯৮১ সালে মিডনাইটস চিলড্রেন উপন্যাস লিখে বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেন সালমান রুশদি। এই উপন্যাসের জন্য সাহিত্যের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন পুরস্কার বুকার জিতেছিলেন তিনি।

তবে তিনি বিপদে পড়েন নিজের চতুর্থ উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ প্রকাশের পর। ১৯৮৮ সালে বইটি প্রকাশের পর কট্টর ইসলামপন্থিদের রোষানলে পড়েন তিনি, কয়েকটি দেশে নিষিদ্ধ করা হয় সে বইটি।

ইরানের তৎকালীন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লা খোমেনি তাকে হত্যার ফতোয়াও জারি করেছিলেন। এ অবস্থায় আত্মরক্ষার্থে যুক্তরাজ্যে ৯ বছর আত্মগোপন করেছিলেন রুশদি। সে সময় ‘জোসেফ অ্যান্টন’ নাম নিয়েছিলেন তিনি। যুক্তরাজ্যের সরকারও তাকে সার্বক্ষণিক সুরক্ষা দিত। পরে যুক্তরাজ্য থেকে যখন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি, সেখানেও সুরক্ষা দেওয়া হতো তাকে।

এত সতর্কতার পরও শেষরক্ষা হয়নি। ‘দ্য স্যাটানি ভার্সেস’ লেখার কারণে উপন্যাসটি প্রকাশের ৩৫ বছর পর হাদি মাতারের হাতে প্রাণঘাতী হামলার শিকার হলেন তিনি। 
সূত্র : রয়টার্স, আলজাজিরা