খুলনা | রবিবার | ১৮ মে ২০২৫ | ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নড়াইলে হত্যাকাণ্ডের জের : জামিনে বের হয়ে প্রতিপক্ষের বসতবাড়ি ভাঙচুর-লুটপাট

নড়াইল প্রতিনিধি |
১২:২১ এ.এম | ১৮ মে ২০২৫


নড়াইলের কালিয়া উপজেলার কাঞ্চনপুর এলাকায় ফরিদ হত্যা মামলার আসামিরা জামিনে বের হয়ে প্রতিপক্ষের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১১ এপ্রিল কাঞ্চনপুর গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মিলন মোল­া পক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান পিকুল শেখ ও আফতাব মোল­া পক্ষ। এতে পিকুল পক্ষের ফরিদ মোল­া (৫০) নিহত হন। এ ঘটনায় প্রতিপক্ষ মিলনদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। এরপর আসামি পক্ষের লোকজনদের ঘরবাড়ি ঘরবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে ওইদিন রাতেই। এ ঘটনায় আফতাব পক্ষের লোকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের হয়। পাল্টাপাল্টি মামলার পর এলাকা যখন উত্তপ্ত, তারই মাঝে গত ২৯ এপ্রিল ফরিদ হত্যা মামলার ১৮ নম্বর আসামি রফিকুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধার হয় প্রতিপক্ষ আফতাব পক্ষের একজনের বাড়ির পাশ থেকে। পরে রফিকুলকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে আফতাব পক্ষের লোকজনকে অভিযুক্ত করে আরেকটি মামলা করেন  তাঁর র মা।
এদিকে মিলন মোল­ার লোকজন জামিনে বের হয়ে এসে রাশেদা বেগম, লিজা খানম, রেবেকা খানম, নিয়ামত মোল­াসহ অন্তত ৩০টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এখন তারা কোথায় থাকবেন, কি খাবেন-তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে  তাঁর দের।
বৃদ্ধা রাশেদা বেগম বলেন, “বাড়িতে দুই নাতি-নাতনি নিয়ে থাকি। আগে অল্প কিছু ভাঙিছেল, আর কালকে রাত্রিরি তালা ভাঙে সবকিছু নিয়ে গেছে। ঘরে আর কোনো জিনিস নেই। পানি খাওয়া কলডাও (টিউবওয়েল) খুলে নিয়ে গেছে। ঘরে থাকা কয়ডা চাল, থালবাটিও নিয়ে গেছে। যা করিছে, তা মাইনষির সাথে মাইনষি করে না।”
নিয়ামত মোল­া বলেন, ‘আসামিরা জামিনে বের হয়ে এসে আমাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট করেছে। আমার এর বিচার চাই।
এদিকে আফতাব পক্ষের লোকজনের অভিযোগ, প্রতিপক্ষ রফিকুলের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় আফতাব পক্ষের লোকজনের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে রফিকুলে মা। এছাড়া এই কয়দিনে আফতাব পক্ষের অন্তত ৩০ টি পরিবারের ঘর-বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে মিলন পক্ষের লোকজন। গত চারদিনেই আফতাব পক্ষের রাশেদা বেগম, রেবেকা বেগম, শাহাদাত শেখ, আশরাফ মোল­া, ফারুক মোল­া, ফিরোজ মোল­া,খলিল মোল­াসহ অন্তত ৮-৯ টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন।
তাঁদের অভিযোগ, রফিকুলের মরদেহ উদ্ধারের পর আফতাব পক্ষের রাশেদাসহ কয়েকজনের বাড়িতে দুই দফায় হামলা করেছে মিলন পক্ষের লোকজন। এ সময় পানি খাওয়ার টিউবওয়েল ও মোটর খুলে নিয়ে গেছে, পুকুরের মাছ পর্যন্ত মেরে নিয়ে গেছে। যাওয়ার সময় এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
আফতাব পক্ষের রেবেকা বেগম বলেন, “গতকালকে (শুক্রবার) ওরা (প্রতিপক্ষ) আমার বুকে ভেলা (দেশীয় অস্ত্র) ধরে বলিছে বাড়ি থেকে নাম। ভয়ে বাড়ি থেকে আমি বের হয়ে গেছি। এরপর আমার ঘরবাড়ি ভাঙচুর করিছে। ঘরে মালামাল যা ছেল, সব নিয়ে গেছে। পুকুরের মাছও ধরে নিয়ে গেছে। বাড়িতে একটু পানি খাওয়ার মত পরিবেশও নেই। টিউবওয়েলও খুলে নিয়ে গেছে, বাথরুমটাও ভেঙে চুরমার করে থুইয়ে গেছে। এখন এই বাড়িতে থাকার কোনো পরিবেশ নেই। পরের বাড়িতে খাচ্ছি।”
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করছেন প্রতিপক্ষ মিলন মোল­ার লোকজন। তাঁদের দাবি, মারামারিতে ফরিদ মারা যাওয়ার পর আফতাবদের লোকজন আমাদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করেছিল, আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। এর কিছুদিন পর আফতাব পক্ষের একজনের বাড়ির পাশ থেকে আমাদের রফিকুলের মরদেহ উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে রফিকুলের মা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন। রফিকুলের মরদেহ উদ্ধারের পর আফতাব পক্ষের লোকজন নিজেরাই নিজেদের বাড়ি থেকে মালামাল সরিয়েছে।  তাঁদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর বা লুটপাট আমাদের কেউ করেনি।  তাঁদেরকে আমাদের কেউ হুমকিও দিচ্ছে না।  তাঁদের করা অভিযোগুলো ভিত্তিহীন।
এ বিষয়ে কালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল­াহ আল মামুন, ‘কাঞ্চনপুরের ঘটনাগুলোতে একাধিক মামলা হয়েছে, সেগুলোর তদন্ত চলছে। এছাড়া কোনো অভিযোগ আসলে যাচাই-বাছাই করে তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ওই এলাকার পরিবেশ বর্তমানে ভালো আছে।’