খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২২ মে ২০২৫ | ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

অস্থিরতা বৃদ্ধি, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দিন

|
১২:১৭ এ.এম | ১৯ মে ২০২৫


দেশের রাজনীতি এখন জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলো এখনো ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি। ওদিকে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ইস্যুতে রাজপথে চলছে আন্দোলন। এগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নাজুক শেয়ারবাজার, স্থবির বিনিয়োগ ও নিয়ন্ত্রণহীন দ্রব্যমূল্য। অর্থাৎ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নানামুখী সংকট ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে। ভূরাজনৈতিক সমস্যাও রয়েছে। এসবই যখন বাস্তবতা, তখন নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা কাটেনি। সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দেওয়া হয়নি। এ প্রেক্ষাপটে রাজনীতির বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চলমান সংকট মোকাবিলা করতে পারে একমাত্র নির্বাচিত সরকার। তাদের পক্ষেই সংকটের সমাধান খুঁজে বের করা সম্ভব। তারা তাই দ্রুতই নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন। তারা মনে করছেন, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ পাওয়া গেলে চলমান অস্থিরতা অনেকটাই কেটে যাবে এবং রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনি কর্মকান্ডে নিয়োজিত হলে এমন এক আবহ তৈরি হবে, যাতে মিলবে স্বস্তি। তাদের আরও অভিমত, নির্বাচন বিলম্বিত হলে সংকট তো কাটবেই না, বরং তা আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
বলা নি®প্রয়োজন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার ৯ মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়নি। একদিকে পুলিশের মনোবল ভেঙে যাওয়ায় তারা পরিপূর্ণভাবে সক্রিয় হতে পারছে না, অন্যদিকে তাদের অনেকের মধ্যে সরকারকে সহযোগিতা না করার মানসিকতাও দেখা যাচ্ছে। স্বীকার করতেই হবে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়া মানে সমাজে নিরাপত্তাহীনতা প্রকট হওয়া। আবার পতিত স্বৈরাচারের দোসররাও দেশের পরিস্থিতি অস্থির করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে সক্রিয় রয়েছে। নানা মহলকে উস্কানি দিয়ে তারা সরকারকে দুর্বল করতে চাইছে।
সবটা মিলিয়ে সরকারের সামনে এখন এক বড় চ্যালেঞ্জ ঝুলে আছে। সরকারকে যেখানে গত রেজিমের লুটপাটের কারণে ভেঙে পড়া অর্থনীতি সচল করার দিকে নজর দেওয়া দরকার, সেখানে সরকার মোকাবিলা করছে নানা সামাজিক সংকট ও বিভিন্ন মহলের দাবি-দাওয়া। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত হবে এ গুরুদায়িত্বের ভার লাঘবে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা প্রত্যাশা করা। এটা পেতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনের দাবির প্রতি সরকারকে সহানুভূতিশীল হতে হবে। সংস্কারের পরিধিও ছোট করে ফেলা দরকার বলে মনে করি আমরা। ন্যূনতম যেসব সংস্কার না করলেই নয়, সেগুলো সম্পন্ন করে বাকিগুলো নির্বাচিত সরকারের হাতে ছেড়ে দেওয়াই হবে প্রজ্ঞার পরিচয়। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, রাজনৈতিক সব দল বা মহল নিজ নিজ স্বার্থভিত্তিক রাজনীতি করতে ব্যস্ত রয়েছে। ফলে কখনো কখনো দেখা দিচ্ছে সংঘাত-সংঘর্ষ। প্রাণও ঝরছে। এ অবস্থা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সাধারণ মানুষ নিরাপত্তা চায়, মোটামুটি খেয়ে-পরে বাঁচতে চায়। তারা যদি রাজনৈতিক দলগুলোর সংঘর্ষজনিত জনদুর্ভোগে পড়ে, তাহলে সেটা হবে দুঃখজনক। সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে সরকারকে অনতিবিলম্বে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে পরিস্থিতি শান্ত করতে হবে।