খুলনা | সোমবার | ১৯ মে ২০২৫ | ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পাঠদানে ফেরেননি শিক্ষকরা, এবার কুয়েটের প্রশাসনিক কার্যক্রমও বন্ধের ঘোষণা শিক্ষক সমিতির

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:৪১ এ.এম | ১৯ মে ২০২৫


সংকটের আবর্তে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট)। গত ৪ মে থেকে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও রোববার পর্যন্ত ক্লাসে পাঠদানে ফেরেননি শিক্ষকরা। তার আগে শিক্ষক সমিতি জানায়, ৭ কার্যদিবসের মধ্যে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জড়িতদের বিচার না করা হলে ক্লাসে পাঠদান থেকে বিরতি থাকার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজও বন্ধ রাখবে। তারই অংশ হিসেবে সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে কুয়েটে সংঘর্ষ ও শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় দোষীদের বিচারিক কার্যক্রম শেষ না হলে একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি সব প্রকার প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক সমিতি।
রোববার দুপুরে প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা শেষে এ সিদ্ধান্ত নেন তারা। এর আগে শিক্ষকরা তাদের দাবির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় আইনের বাইরে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন দোষীদের বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করে রেখেছে। যার কারণে কুয়েটের শিক্ষা কার্যক্রম সংকটের মধ্যে পড়েছে। মাত্র কয়েকজন শিক্ষার্থীর স্বার্থ রক্ষায় ও উপর মহল নামক অদৃশ্য শক্তিকে তুষ্ট করছে বর্তমান প্রশাসন। সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে প্রশাসন কোনো সন্তোষজনক সিদ্ধান্ত না নিলে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক সমিতি।  
এদিকে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু, নতুন নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন এবং পাঁচ দফা বাস্তবায়নের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে কুয়েটের শিক্ষার্থীরা আবার খোলা চিঠি দিয়ে আলোচনায় বসার অনুরোধ জানিয়েছেন।
সেই সঙ্গে ১৮ ফেব্র“য়ারির হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছেন। এ ছাড়া দ্রুত ক্লাস শুরুর দাবি জানিয়ে খোলা চিঠিতে বলা হয়, ক্লাস বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে ১৯ ব্যাচ প্রচণ্ড মানসিক চাপে, ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা ও হতাশায় বিপর্যন্ত।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ ফেব্র“য়ারি কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ভিসি, প্রোভিসি ও ডিএসডাব্লিউর পদত্যাগ দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। ওই সময় কতিপয় শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মাছুদতে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করে। এ সময় অন্যান্য শিক্ষকরাও আঘাতপ্রাপ্ত হন। এক পর্যায়ে ছাত্ররা ভিসিকে কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে এবং তাকে চিকিৎসা নিতেও বাধা দেয়। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ‎পরবর্তীতে গত ১৩ জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগেই কিছু শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে এবং পুনরায় আন্দোলন শুরু করে। দীর্ঘ প্রায় আড়াই মাস টানা আন্দোলন এবং ভিসির পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আমৃত্যু অনশন কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ শরীফুল আলমকে প্রত্যাহার করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এ এস এম কাসেম স্বাক্ষরিত দু’টি পৃথক প্রজ্ঞাপনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। বৃহস্পতিবার (১ মে) কুয়েটের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ হযরত আলী। শুক্রবার (২ মে) রাতে তিনি কুয়েটে পৌঁছান। শনিবার (৩ মে) আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। তারপর থেকে বর্তমান উপাচার্য একের পর এক বৈঠক করে চলেছেন, শিক্ষার্থী ও শিক্ষিকদের সঙ্গে। ইতোমধ্যে কুয়েট প্রশাসন ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে শোকজ নোটিশ প্রদান করে এবং গত ১৫ মে’র মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। এরপর আবারও শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে এবং পাল্টা তারা বর্তমান তদন্ত কমিটি বাদ দিয়ে নতুন নিরপেক্ষ কমিটি গঠনের দাবি জানায়। পাল্টা শিক্ষকরাও জানায়, শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাসে ফিরবেন না এবং ৭ কর্মদিবসের আল্টিমেটাম দেয়। প্রায় তিন মাস ধরে কুয়েটের অচলাবস্থার অবসান না হওয়ায় চিন্তিত সাধারণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবক।
এরই মধ্যে কুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক প্রফেসর ড. এম এম এ হাসেমের বিরুদ্ধে অনলাইনে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ও অনলাইন বুলিং করার প্রতিবাদে রোববার ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছে শিক্ষক-কর্মকর্তারা। অপর দিকে রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা গত ১৮ ফেব্র“য়ারির অনাকঙ্খিত ঘটনার নিন্দা জানিয়ে প্রকৃত জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার দাবি জানিয়ে উপাচার্যের নিকট লিখিত আবেদন করেছে। সেখানে তারা ছাত্রদের ৫ দফা দাবি বাস্তবায়ন এবং কতিপয় শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষক লাঞ্ছিত করার ঘটনার নিন্দা এবং দোষীদের শাস্তি দাবি করেছে।