খুলনা | মঙ্গলবার | ২০ মে ২০২৫ | ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দুই সপ্তাহেও ক্লাসে ফেরেননি শিক্ষকরা

সেশনজটের কবলে কুয়েটে নয়া মেরুকরণ দুই গ্রুপে বিভক্ত শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:৩১ এ.এম | ২০ মে ২০২৫


দুই সপ্তাহেও ক্লাসে ফেরেননি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষকরা। তিন মাস যাবত স্থবির কুয়েট। লাঞ্ছনাকারীদের শাস্তির দাবিতে গতকাল সোমবার অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকবৃন্দ। এই আন্দোলনে একাত্মতা জানিয়ে অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে খোলা চিঠি লিখে শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একাংশ। চলতি সংকটের মধ্যে সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গেছেন ঢাকায়। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে নানা কানাঘুষা চললেও পরে নিশ্চিত হওয়া গেছে তিনি আজ (মঙ্গলবার) ফিরবেন। 
গতকাল দুপুর ১২টায় কুয়েটের শিক্ষকরা প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় উপাচার্যের কক্ষে গিয়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। কিছু সময় পর তারা প্রশাসনিক ভবনের নিচে আসেন এবং বেলা ১টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। শিক্ষকদের আন্দোলনস্থলে এসে একাত্মতা প্রকাশ করেন ১৯ ব্যাচের প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী।  
শিক্ষার্থী শাফতি আশারি, জিহাদ, ইউসুফ ও শিহাব জানান, আর এক মাস একাডেমিক কার্যক্রম চালু থাকলে আমরা পাস করে বেরিয়ে যেতাম। কিন্তু তিন মাস ধরে অচলাবস্থার মধ্যে পড়েছি। আমরা চাই, দ্রুত ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হোক।
তারা বলেন, যারা শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করেছে, তাদের শাস্তি চাই। তদন্ত কমিটি যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তার ভিত্তিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সঙ্গে আমরা একমত। তবে নিরাপরাধ কেউ যেন শাস্তি না পায়। 
অন্যদিকে, তিন মাস ধরে আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থী মোঃ মহিরুজ্জামান উপল, সৈকত ও ঝলক জানান, তারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী ও শিক্ষকদের লাঞ্ছনাকারীদের শাস্তি চান। কিন্তু অপসারিত উপাচার্যের সময়ে করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী নয়। নতুন করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির মাধ্যমে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। তারা জানান, আপাতত তাদের কোনো কর্মসূচি নেই।  
তারা আরও জানান, বিচার বিভাগীয় তদন্তে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী ও শিক্ষকদের লাঞ্ছনাকারী হিসেবে দোষী সাব্যস্তদের পক্ষে কেউ দাঁড়াবে না।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোঃ ফারুক হোসেন জানান, লাঞ্ছনাকারী শিক্ষার্থীদের শাস্তি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাস-পরীক্ষা নেবেন না। গত ৪ মে থেকে তারা ক্লাস বর্জন ও গত রোববার থেকে প্রশাসনিক কাজ বর্জন করছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচির কথা আগেই উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হযরত আলীকে জানিয়েছিলাম। তিনি শিক্ষকদের না জানিয়ে ঢাকায় গেছেন। একজন শিক্ষককে উপাচার্যের রুটিন কাজ চালানোর জন্য মৌখিকভাবে বলেছেন। আজ (মঙ্গলবার) ক্যাম্পাসে ফিরবেন।’
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোঃ সাহিদুল ইসলাম জানান, আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তারা প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন। বিশ্ববিদ্যালয় আইনের বাইরে গিয়ে প্রশাসন দোষীদের বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে। এ কারণে কুয়েটের শিক্ষা কার্যক্রম সংকটের মধ্যে পড়েছে।  
শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষার্থীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এক পক্ষ শিক্ষকদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। আর যারা বিভিন্ন দাবিতে গত তিন মাস আন্দোলন করেছে, তারা আপাতত চুপচাপ রয়েছে। কিছুটা চাপেও পড়েছে। এখন তারা কী করবে তা বুঝে উঠতে পারছেন না। 
এ ব্যাপারে কুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল­াহ ইলিয়াছ আক্তার বলেন, সংকট নিরসনের জন্য কুয়েট কর্তৃপক্ষ সাধ্যমতো চেষ্টা করছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ ফেব্র“য়ারি সংঘর্ষের জেরধরে কুয়েটে বন্ধ রয়েছে ক্লাস ও পরীক্ষা। তিন মাস অচলাবস্থা চলায় সেশনজট বেড়েছে। নতুন ব্যাচের ক্লাস এখনও শুরু হয়নি। ফলে বিপাকে পড়েছেন কুয়েটের ৭ হাজার ৫৬৫ জন শিক্ষার্থী।