খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২২ মে ২০২৫ | ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পাকিস্তানি গুপ্তচর সন্দেহে ইউটিউবার-ব্যবসায়ীসহ ৯ জন গ্রেফতার

খবর প্রতিবেদন |
০২:৩৬ পি.এম | ২১ মে ২০২৫


পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির সন্দেহে স্থানীয় এক ইউটিউবার, একজন ব্যবসায়ী ও এক ছাত্রসহ ৯ জন নারী-পুরুষকে গ্রেফতার  করেছে ভারতের পুলিশ।

পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশসহ একাধিক রাজ্যে অভিযান চালিয়ে এদের আটক করা হয়েছে বলে পৃথক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি বাংলা ও ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

গ্রেফতারদের মধ্যে সবথেকে বেশি আলোচনা হচ্ছে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য হরিয়ানার বাসিন্দা জ্যোতি মালহোত্রার নাম। তিনি পর্যটন সংক্রান্ত ভ্লগ বানান।

মালহোত্রা সহ মোট ৯ জনকে একই অভিযোগে গ্রেফতার করেছে ভারতের পুলিশ। গ্রেফতাররা হলেন-

জ্যোতি মালহোত্রা
ট্র্যাভেল ভ্লগার জ্যোতি মালহোত্রা, যিনি 'ট্র্যাভেল উইথ জেও' নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল চালান, তিনি হরিয়ানার হিসারের বাসিন্দা। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতীয় সামরিক তথ্য ভাগ করে নেওয়ার জন্য তাকে গত সপ্তাহে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পুলিশ জানায়, ৩৩ বছর বয়সী এই তরুণী পাকিস্তান হাই কমিশনের একজন কর্মকর্তার সংস্পর্শে এসেছিলেন এবং কমপক্ষে দুবার পাকিস্তান সফর করেছিলেন। পুলিশ আরো জানায়, পাকিস্তানি গোয়েন্দারা তাকে ভারতে তাদের সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।

দেবেন্দ্র সিং
পাতিয়ালার খালসা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র দেবেন্দ্র সিং (২৫)। ১২ মে, ফেসবুকে পিস্তল এবং বন্দুকের ছবি আপলোড করার জন্য তাকে হরিয়ানার কৈথাল থেকে গ্রেফতার  করা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে যে তিনি গত নভেম্বরে পাকিস্তান সফর করেছিলেন এবং ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে সংবেদনশীল তথ্য শেয়ার করেছিলেন, যার মধ্যে পাতিয়ালা সামরিক সেনানিবাসের ছবিও ছিল।

নওমান ইলাহি
হরিয়ানায় নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করা ২৪ বছর বয়সী নওমান ইলাহিকে কয়েকদিন আগে পানিপথ থেকে গ্রেফতার  করা হয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে তিনি পাকিস্তানে একজন আইএসআই হ্যান্ডলারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা ইসলামাবাদে তথ্য সরবরাহের জন্য পাকিস্তান থেকে তার শ্যালকের অ্যাকাউন্টে টাকা পেতেন।

আরমান
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ১৬ মে হরিয়ানার নুহ থেকে ২৩ বছর বয়সী আরমানকে গ্রেফতার  করা হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির সময় তাকে পাকিস্তানে সংবেদনশীল তথ্য পাচার করতে দেখা গেছে। পুলিশ জানিয়েছে, তাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে এবং সন্দেহভাজনকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

তারিফ
হরিয়ানার নুহ থেকে গ্রেপ্তার হওয়া দ্বিতীয় অভিযুক্ত ছিল তারিফ। আরমানের গ্রেফতারের দুই দিন পর, তাওয়াডু মহকুমার কাঙ্গারকা গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, পুলিশকে দেখে সে তার মোবাইলের কিছু চ্যাট মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল। তদন্তে জানা গেছে, তার ফোন থেকে পাকিস্তানি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরের কিছু ডেটাও মুছে ফেলা হয়েছিল।

শাহজাদ
উত্তর প্রদেশের রামপুরের ব্যবসায়ী শাহজাদকে রোববার মোরাদাবাদে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স গ্রেপ্তার করেছে। তিনি জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত সংবেদনশীল তথ্য তার হ্যান্ডলারদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন। তিনি একাধিকবার পাকিস্তান ভ্রমণ করেছিলেন এবং প্রসাধনী, পোশাক এবং মশলা পাচারের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

মোহাম্মদ মুর্তজা আলী
জলন্ধরে গুজরাট পুলিশের অভিযানের সময় মোহাম্মদ মুর্তজা আলীকে গ্রেফতার করা হয়। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের আইএসআইয়ের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, তার নিজের তৈরি একটি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তিনি এটি করছিলেন। তার কাছ থেকে চারটি মোবাইল ফোন এবং তিনটি সিম কার্ড পাওয়া গেছে।

এছাড়া গাজালা ও ইয়ামিন মোহাম্মদ নামে আরও দুইজনকে একই অভিযোগে পাঞ্জাব থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির কয়েকদিন পর এই গ্রেপ্তারের ঘটনা তাৎপর্যপূর্ণ। পহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পর ভারত পাকিস্তানের সন্ত্রাসী পরিকাঠামোকে দায়ী করেছিল।

হামলার জবাবে, ভারত পাকিস্তান এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী শিবিরগুলোতে হামলা চালানোর জন্য অপারেশন সিন্দুর শুরু করে। এর জবাবে পাকিস্তানও ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালায়। প্রতিশোধ হিসেবে, ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানের বিমানঘাঁটিতে হামলা চালায়।