খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২৯ মে ২০২৫ | ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

২ ছাত্র উপদেষ্টাসহ তিনজনের পদত্যাগ, ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে দ্রুত রোডম্যাপ প্রণয়নের দাবি

প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি বিএনপি, সংস্কারে ঐকমত্য

খবর প্রতিবেদন |
১১:২৭ পি.এম | ২৪ মে ২০২৫


বিএনপি কখনো প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ চায়নি। বরং শুরু থেকেই এই সরকারকে সহযোগিতা করে আসছে দলটি। সরকারের সংস্কারের বিষয়েও ঐকমত্য বলে জানিয়েছে বিএনপি।
বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি’র একটি প্রতিনিধি দল। স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে দলটিতে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সালাহউদ্দিন আহমেদ।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রবেশ করেন। বৈঠক শেষে রাত পৌনে ৯টার দিকে যমুনার সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
বৈঠকের বিষয়বস্তু আগে জানানো হয়নি উল্লেখ করে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি শুরু থেকেই একটি সুস্পষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপের দাবি জানিয়ে আসছে। এই দাবি আমরা প্রকাশ্যেই করে এসেছি। পাশাপাশি, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে বিতর্কিত সদস্যদের বাদ দিয়ে নতুন করে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছি।
খন্দকার মোশাররফ আরও বলেন, বিএনপির প্রতিটি নেতা-কর্মী রাজনৈতিক ভাবে, ব্যক্তিগত ভাবে এবং পারিবারিক ভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আওয়ামী লীগের আমলে। তাই এই বিচারকার্য সম্পন্ন করার জন্য বিএনপি যখন ক্ষমতায় যাবে, তখন একটি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমেই এসব বিচারের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচন বিষয়ে সংস্কার কার্যক্রম অবিলম্বে শেষ করে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দ্রুত একটি রোডম্যাপ প্রণয়নের দাবি আমরা জানিয়েছি। বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বাস করে, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হবে।
নির্বাচন বিলম্বিত হলে দেশে স্বৈরাচার ফিরে আসার সম্ভাবনা বাড়বে বলেও মন্তব্য করেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, নির্বাচন যত বেশি বিলম্ব করা হবে, আমরা মনে করি জাতির কাছে আবারও স্বৈরাচার ফিরে আসার সম্ভাবনা ততো বেশি বাড়বে। আর এর দায়-দায়িত্ব বর্তমান সরকার ও সংশ্লিষ্টদের উপরেই বর্তাবে।
গুজবের বিষয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, বিএনপি কখনো প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি, বরং শুরু থেকেই সরকারকে সহযোগিতা করে আসছে।
বৈঠকে তিনটি প্রধান বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি জানান, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন, বিচারকার্য এবং নির্বাচন সংস্কার নিয়ে তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছেন। সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া এবং বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
বৈঠকের ফলাফল নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এখনই আমাদের প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় আসেনি। যে আলোচনা হয়েছে তা উনারা প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে জানাবে। তারপরে আমরা প্রতিক্রিয়া জানাতে পারব।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানান, বৈঠকে সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং সংস্কারের বিষয়ে তারা ঐকমত্যে পৌঁছেছেন।
খসরু বলেন, সংস্কারের বিষয়ে আমরা তাদের সঙ্গে একমত হয়েছি। আর সংস্কারগুলো ঐক্যমতের ভিত্তিতেই হবে। আর এটা খুব দ্রুতই বাস্তবায়ন হবে। এখানে কোনো দ্বিমত পোষণ করা হয়নি। নির্বাচনের বিষয়ে এমন কথাও হয়েছে, চাইলে ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে।
এ বিষয় কোনও আশ্বাস দিয়েছেন কিনা, জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন বলেন, আশ্বাস দিয়েছেন, ওনারা দেখবেন। আমরা আমাদের বক্তব্য দিয়েছি।
বিএনপি’র আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মূলত সংস্কার বিচার এবং নির্বাচন এই তিনটার ওপর আলোচনা হয়েছে। সংস্কারের বিষয়ে আমরা পরিষ্কার এবং ওনারা একমত হয়েছেন, সংস্কার যেখানে ঐকমত্যের ভিত্তিতে হওয়ার কথা, তার ভিত্তিতে সংস্কার কাজ সম্পন্ন হবে। সেই কাজ অতি সহসা সম্পন্ন করা সম্ভব। এখানে কোনও দ্বিমত পোষণ করেননি। বিচার ব্যবস্থা বিচার বিভাগ করবে এবং বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারে যে আলোচনা হয়েছে, এখানে ওনাদের কোনও দ্বিমত নেই। সুতরাং, ডিসেম্বরের আগেও নির্বাচন করা সম্ভব। এই আলোচনাও হয়েছে। 
দলটির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, যদি দ্রুত নির্বাচন দেওয়া হয়। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলেছি, আজকে বাংলাদেশে যে নৈরাজ্য হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবনতি হচ্ছে, এক ঘোষণার ফলশ্র“তিতে বাংলাদেশে শান্তিশৃঙ্খলা এবং গণতন্ত্র ফিরে আসবে।
পদত্যাগ দাবি : অন্তর্বর্তী সরকারের দুই ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি জানিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের পদত্যাগ দাবি জানিয়েছে দলটি। শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এ দাবির কথা জানান।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তাদের পদত্যাগের কথা আমরা লিখিত বক্তব্যে জানিয়েছি। আগেও জানিয়েছি। নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং দুই ছাত্র উপদেষ্টার কারণে এ সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণœ হচ্ছে। তাদেরকে বাদ দেওয়ার জন্য আজকেও লিখিত বক্তব্যে দিয়েছি, মুখেও বলেছি।
কোনো আশ্বাস পেয়েছেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেই আশ্বাস উনারা দেবেন। আমরা আমাদের বক্তব্য দিয়েছি।  
তবে বিএনপি কখনো প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ চায়নি বলে জানিয়েছেন সালাউদ্দিন আহমদ। শুরু থেকেই এই সরকারকে সহযোগিতা করে আসছে দলটি-এমন দাবি তার। এছাড়া সরকারের সংস্কারের বিষয়েও ঐকমত্য বলে জানিয়েছে বিএনপি।
বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসতে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে যমুনায় প্রবেশ করে বিএনপি’র প্রতিনিধিদল। বৈঠক শেষে রাত পৌনে ৯টার দিকে যমুনার সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, নির্বাচন বিষয়ে সংস্কার কার্যক্রম অবিলম্বে শেষ করে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দ্রুত একটি রোডম্যাপ প্রণয়নের দাবি আমরা জানিয়েছি। বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বাস করে, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হবে।