খুলনা | সোমবার | ২৬ মে ২০২৫ | ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ভারতকে ‘কঠোর হুঁশিয়ারি’ দিয়ে যা বলল পাকিস্তান সেনাবাহিনী

খবর প্রতিবেদন |
০৬:২৭ পি.এম | ২৫ মে ২০২৫


পাকিস্তান জাতির ঐক্য, শক্তি ও শান্তির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে ভারতকে আবারও ‘কঠোর হুঁশিয়ারি’ দিয়েছেন দেশটির সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী। ভারত যদি ভবিষ্যতে কোনো ধরনের ‘দুঃসাহসিকতা’ থেকে বিরত না থাকে তাহলে কঠোর জবাব দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

রোববার এক বিবৃতিতে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন। খবর সামা টিভি।

পাকিস্তান আইএসপিআর-এর ডিজি বলেন, ‘ভারত ভেবেছিল, তারা আঘাত করবে আর পাকিস্তান চুপ থাকবে। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তান এক লৌহদৃঢ় প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়েছিল এবং ভারতের কৌশলের একের পর এক ত্রুটি উন্মোচন করেছিল’।

ভেতরের বিভাজনের ধারণা নাকচ করে দিয়ে আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, ‘তারা মনে করেছিল পাকিস্তানের জনগণ ও সেনাবাহিনী বিভক্ত— কিন্তু এটা ভুল ধরণা, পাকিস্তান কখনোই বিভক্ত নয়। এই জাতি ও সেনাবাহিনী সবসময়ই একত্রিত ছিল’।

ভারতের আগ্রাসনের জবাবে পাকিস্তানের পরিকল্পিত প্রতিক্রিয়ার বিবরণ দিতে গিয়ে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ভারতের ২৬টি স্থানে জবাব দেওয়া হবে’।

একটি বিশেষ ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মুজাফফরাবাদে যখন সাত বছর বয়সি ইর্তিজা ভারতীয় ব্রিগেড সদর দপ্তরের নির্দেশে গোলাবর্ষণে শহিদ হয়, তখন আমরা ওই ব্রিগেড সদর দপ্তর ধ্বংস করে দেই’।

ভারতের বিমান হামলার প্রসঙ্গ টেনে আহমেদ শরীফ বলেন, ‘৬ ও ৭ তারিখে ভারতের বিভিন্ন বিমান ঘাঁটি থেকে জেট উড়ে এসে পাকিস্তানি শিশুদের লক্ষ্যবস্তু করে— আমরা সেই বিমান ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করে জবাব দিয়েছি’।

ভারত হামলা চালিয়ে আজাদ কাশ্মীরের বহু সংখ্যক মসজিদ-মাদ্রাসা ও ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংস করে দেয়। তবে পাকিস্তান কোনো বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়নি।

এ বিষয়ে তিনি জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তান কখনোই বেসামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে আঘাত করেনি। তার ভাষায়, ‘আমাদের বাহিনী কি কোনো মন্দির, জনবসতি বা বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা করেছে? না। আমরা শান্তিপ্রিয়, শান্তিকেই অগ্রাধিকার দেই’।

এরপরই তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যদি ভারত আবার সেই একই ভুল করে, তাহলে আমাদের জবাব আরও কঠোর হবে’।

আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পাক আইএসপিআর ডিজি দাবি করেন, ‘পাকিস্তানে প্রতিটি সন্ত্রাসী হামলার পেছনে ভারতের চেহারা স্পষ্ট’।

তিনি বলেন, ‘যারা মসজিদে বোমা ফেলে, নিরীহ মানুষ হত্যা করে— তাদের ইসলাম বা খাইবার পাখতুনখোয়ার গৌরবময় ঐতিহ্যের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। এরা ভারতের অনুসারী, সন্ত্রাসী’।

চরমপন্থি মতাদর্শের সমালোচনা করে আহমেদ শরীফ বলেন, ‘যখন খারিজি (সন্ত্রাসী) নেতারা বলেন— শরীয়াহ নাকি অমুসলিমদের সাহায্য নিতে অনুমতি দেয়— আসলে তারা এটা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। ইসলাম কখনো সত্য ও মিথ্যার সহাবস্থানে বিশ্বাস করে না। ইসলাম ও এই খারিজিরা একসঙ্গে চলতে পারে না’।

তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা ভারতের কাছে সাহায্য চাও —এটা সেই দেশ, যারা কাশ্মীরি নারীদের মর্যাদা লঙ্ঘন করে। তোমাদের লজ্জা হওয়া উচিত’।

পাকিস্তান আইএসপিআর প্রধান এ সময় আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপরও গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘আফগানিস্তান আমাদের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ মুসলিম প্রতিবেশী। পশতুন ভাই আমাদেরই ভাই। সমস্যা সেই অভিজাতদের নিয়ে, যারা ভারতের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে’।

আফগান জনগণের উদ্দেশে তিনি আহ্বান জানান, ‘আমাদের আফগান ভাইদের বলি— সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিও না। ভারতের নীতির হাতিয়ার হয়ো না’।

সবশেষে খাইবার পাখতুনখোয়ার জনগণের উদ্দেশ্যে সেনা মুখপাত্র বলেন, ‘খাইবার পাখতুনখোয়ার সাহসী জনগণ ও গোত্রবাসীদের বলছি— সময় এসেছে আবার বলার, কাশ্মীর হবে পাকিস্তানের’।