খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২৯ মে ২০২৫ | ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে সবার দায়িত্বশীলতা প্রত্যাশিত

|
১২:২৮ এ.এম | ২৬ মে ২০২৫


জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অংশী পক্ষগুলোর মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে বিভক্তি ও মতভেদ দেশে এক রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি করেছে। পরিস্থিতি এতটাই চরমে পৌঁছেছে যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ‘পদত্যাগ’ করবেন কি না, সে প্রশ্নও আলোচিত হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী দেশের বর্তমান বিরোধপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তিনি হতাশ ও ক্ষুব্ধ। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের দায়িত্বশীল, বাস্তবসম্মত ও দূরদর্শী পদক্ষেপই দেশকে এই সংকটময় পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিতে পারে। ছাত্রদের নেতৃত্বে সব রাজনৈতিক দল ও জনগণ গত বছরের ৫ আগস্ট যেভাবে দেশের ওপর চেপে বসা স্বৈরশাসনকে বিদায় করেছে, তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন। জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান দেশের মানুষের মনে অনেক স্বপ্ন ও আশার জন্ম দিয়েছিল। নতুন কোনো স্বৈরতন্ত্র চেপে বসার ঝুঁঁকি থেকে চিরতরে মুক্তি ও উন্নত গণতন্ত্রের পথে যাত্রার মাধ্যমে এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা তৈরি করেছিল। বাস্তবতা হচ্ছে, গত প্রায় ১০ মাসে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে, যা আশার বদলে হতাশা তৈরি করেছে। একদিকে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে গণ-অভ্যুত্থানের অংশী পক্ষগুলোর মধ্যে বিরোধের মাত্রা অব্যাহতভাবে বেড়ে যাওয়া, বিভিন্ন ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা ও অসহযোগিতামূলক আচরণ, মবতন্ত্র, প্রায় প্রতিদিনই রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক কোনো না কোনো পক্ষের সড়ক অবরোধ, অন্যদিকে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের নানা দুর্বলতা পরিস্থিতিকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগই কি বর্তমান সমস্যার সমাধান? আমরা মনে করি, এ সময় এ ধরনের কোনো উদ্যোগ বর্তমান সংকটকালীন পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করতে পারে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের বরং এই আত্মানুসন্ধান জরুরি যে কেন এবং কী কী কারণে এত স্বতঃস্ফূর্ত একটি গণ-অভ্যুত্থানের ১০ মাসের মাথায় এই পরিস্থিতি তৈরি হলো?
আমরা মনে করি, গণ-অভ্যুত্থানের রাজনৈতিক শক্তিগুলোর উচিত নিজেদের মধ্যকার বিভেদ দূর করার দ্রুত ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া। গণ-অভ্যুত্থানে প্রাণ দেওয়া সহস্রাধিক শহিদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থ বিবেচনার বাইরে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোকে ন্যূনতম কিছু ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে নিজ নিজ অবস্থানে অটল না থেকে বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতামূলক অবস্থান নেবে, এটাই প্রত্যাশিত। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো থেকে এ ব্যাপারে সদিচ্ছা দেখা গেলে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে দক্ষতার যে প্রশ্ন বা অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতার যেসব দিক আলোচিত হচ্ছে, তা-ও বিবেচনায় নেওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। সামগ্রিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ রদবদল বা পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে কাউকে কাউকে বাদ দেওয়া, নতুন সদস্য যোগ করার বিষয়গুলো বিবেচনা করা যেতে পারে। এ ধরনের উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকারের দক্ষতার ঘাটতি দূর করতে ও গতিশীলতা বাড়াতে সহায়তা করবে বলে আমরা মনে করি।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়সীমা ঘোষণা করেছেন। এটা স্পষ্ট যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই সময়সীমা নিয়ে একধরনের বিভ্রান্তি রয়েছে। আমরা মনে করি, এই বিভ্রান্তি দূর করা প্রয়োজন। এ বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের মধ্য ফেব্র“য়ারি-এই সময়সীমার মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট মাস নির্ধারণ ও সেই সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো নির্ধারণ করে দিলে নির্বাচন নিয়ে সংশয় অনেকটাই কেটে যাবে। দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষ ও রাজনৈতিক শক্তিগুলোর কাছ থেকে আমরা দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করছি। বিশেষ করে সরকার, দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি, গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতৃত্ব ও অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তি এবং সশস্ত্র বাহিনী-এসব পক্ষের মধ্যে কাজের সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। কোনো পক্ষের ভুল অবস্থান বা হঠকারী সিদ্ধান্ত দেশকে গভীর সংকটে ফেলতে পারে। আমরা আশা করব, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না।