খুলনা | শুক্রবার | ০৬ জুন ২০২৫ | ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সাতক্ষীরায় সেতুর অ্যাপ্রোচ রোডে ধস চরম দুর্ভোগে ৩ উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা |
০৩:০৮ এ.এম | ০৩ জুন ২০২৫


সাতক্ষীরার মরিচ্চাপ নদীর উপর নির্মিত এল­ারচর সেতুটির এক পাশের অ্যাপ্রোচ রোড ধসে পড়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে তিন উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। গত ১৮ মে রাতে সেতুটির দক্ষিণ পাশের এ্যাপ্রো রোড ধ্বসে পড়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে নদীর দুই পাড়ে বসবাসকারী সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা এবং আশাশুনি উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। 
স্থানীয়রা জানান, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি ইউনিয়নের বালিথা, এল­ারচর, শিমুলবাড়িয়া, ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের দহাকুলা, মেলে­কপাড়া, বড়খামার, উমরাপাড়া, পৌরসভার কুখরালি, চালতেতলা, গড়েরকন্দা, দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের বিলশিমুলবাড়িয়া, চরবালিথা, শ্যামনগর, ঢালিরঘের, আন্দোলপোতা, শশাডাঙ্গা, গবরাখালি, টিকেট, পুঁটিমারি, রঘুনাথপুর এবং আশাশুনি উপজেলার শোভনালী ইউনিয়নের সরাফপুর, হাজিপুর, বাউচাষ, শালখালি,বদরতলাসহ অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষ এ সেতু দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন। 
স্থানীয়রা আরও জানান, এল­ারচর সেতু দিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী, সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার মানুষ যাতায়াত করেন। সেতুটির দক্ষিণ পাশের অ্যাপ্রোচ রোড ধসে পড়ার পর তারা সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। মরিচ্চাপ নদী পারাপারে আশেপাশে বিকল্প কোন মাধ্যম না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নারী-শিশুসহ সব বয়সের মানুষ এই সেতু দিয়ে পারাপার হচ্ছেন। 
একই সাথে ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় সেতুর ওপারে দেবহাটার অংশে পণ্য আনা-নেওয়া করা যাচ্ছে না। এতে করে বিপাকে পড়েছেন চিংড়ি ও সবজি চাষিরা। যেকোন সময় সেতুটির দক্ষিণ পাশের এ্যাপ্রোচ রোডের সম্পূর্ণ অংশ ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তারা।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি ইউনিয়নের মেম্বর ও গণমাধ্যমকর্মী আরশাদ আলী সেতুটির অ্যাপ্রোচ রোড ধ্বসে পড়ায় জনদুর্ভোগের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ষাটের দশকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় নদীতে ভেড়িবাঁধ ও স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়। নদী শাসনের ফলে মরিচ্চাপ নদী মরা নদীতে পরিণত হয়। নদীর উপর নির্মাণ করা এল­ারচর সেতু। এরপর দুই-তিন বছর আগে খনন করা হয় মরিচ্চাপ নদী। যদিও নদীটি খননের সময় আদি ম্যাপ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ করে খনন করা হয়নি। নদী খননের পর বর্তমানে জোয়ার-ভাটা প্রবাহিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় গত ১৫দিন আগে ১৮ মে রাতে এল­ারচর সেতুটির দক্ষিণ পাশের এ্যাপ্রোচ রোড বা সংযোগ সড়ক ধসে পড়ে। এতে করে তিন উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। ঝুঁকি নিয়ে তারা ওই সেতু পার হয়ে চলাচল করছেন। 
তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানানোর পরও এখন পর্যন্ত সেতুর সংযোগ সড়কটি সংস্কারের কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে সড়কটির সম্পূর্ণ ধসে পড়ে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। 
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শোয়াইব আহমাদ সোমবার(২ জুন) সকালে এল­ারচর সেতুটি পরিদর্শন করে জানান,  সেতুটি অনেক পুরাতন। সেতুটির প্রশস্ততা নদীর চেয়ে কম। জোয়ার-ভাটার স্রোতের টানে হয়তো সেতুটির সংযোগ সড়ক ধ্বসে গিয়েছে। আপাতত সেতুর পাশে ব্লক দ্বারা সংস্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাতে মানুষ আপাতত চলাচল করতে পারে। তিনি আরো বলেন, সেতুটি পুনঃনির্মাণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে। প্রস্তাবটি অনুমোদনের পর এল­ারচ এলাকায় একটি নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে।