খুলনা | শনিবার | ০৭ জুন ২০২৫ | ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত হবে আরাফাতের ময়দান

পবিত্র হজ আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:৪২ এ.এম | ০৫ জুন ২০২৫


পবিত্র হজ আজ। আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হবেন লাখো মুসলিম। লাব্বাইক আল­াহুম্মা লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত হবে আরাফাতের ময়দান। বান্দা আল্লাহকে উদ্দেশ্য করে তার উপস্তিতির জাানান দেবে। মাফ চাইবে জীবনের সকল গুনাহ হতে পরিত্রাণ পেতে। বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ রাত শব-ই-ক্বদর। আর বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হলো আরাফাতের দিন। এই দিনে আল্লাহ তায়ালা সপ্তম আসমান থেকে প্রথম আসমানে চলে আসে বান্দার জন্যা। এই দিনে আল­াহ বান্দাকে সব কিছু দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকেন। এই দিনে দোয়া কবুল করেন আল­াহ। ইতোমধ্যে পবিত্র হজ পালন করতে সৌদি আরবের মক্কায় সমবেত হয়েছেন বিশ্বের লাখ লাখ হজযাত্রী। তারা বুধবার ইহরাম বেঁধে সারাদিন মিনায় অবস্থান করেন। গত মঙ্গলবার থেকেই অনেকে মিনায় যাওয়া শুরু করেছেন। এর মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়  পবিত্র হজের কার্যক্রম।
আজ বৃহস্পতিবার হজের মূল কার্যক্রম হিসেবে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করবেন হজযাত্রীরা। হজের অংশ হিসেবে হজযাত্রীরা ৮ থেকে ১২ জিলহজ মিনা, আরাফাত, মুজদালিফা ও মক্কায় অবস্থান করবেন। এরপর সাঈ, তাওয়াফ ও দমে শোকর আদায়ের মাধ্যমে পাঁচ দিনব্যাপী হজের কার্যক্রম শেষ হবে।
নিয়ম অনুযায়ী, গত (সৌদি সময় অনুযায়ী ৭ জিলহজ) সন্ধ্যার পর মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারাম বা নিজ আবাসন থেকে হজের নিয়ত করে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে মিনার উদ্দেশ্যে রওনা হন হজযাত্রীরা। তাদের পরনে সেলাইবিহীন দুই টুকরা সাদা কাপড়। ৮ জিলহজ জোহরের নামাজের আগে মিনায় পৌঁছা সুন্নত। সেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় ও রাতযাপন করাও সুন্নত। তাই হাজীদের সবার জন্য আলাদা তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে তারা তালবিয়া, জিকির, তিলাওয়াত ও দোয়ায় মগ্ন থেকে সারাদিন অবস্থান করবেন।
আজ বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজ পড়ে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে আরাফাতের ময়দানে যাবেন হজযাত্রীরা। সেখানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত হাজিদের ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখর হবে পুরো ময়দান। এখানে অবস্থান করে তিলাওয়াত, জিকির, নামাজ, খুতবা শোনাসহ ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে হজের মূল কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা হজের আবশ্যিক বিধান। মূলত হজের অন্যতম শর্ত হলো আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা। হজের অন্যান্য আরকান-আহকাম পালন করে যদি কেউ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান না করে, তবে তার হজ পালন হবে না। তাই আরাফাতের ময়দানে অবস্থানই হলো হজের মূল শর্ত। মহানবী (সঃ) এই আরাফাতের ময়দানেই বিদায়ী হজের শেষ ভাষণ দিয়েছিলেন। এই ময়দানেই আদি পিতা আদম ও মা হাওয়ার সঙ্গে দুনিয়াতে প্রথম দর্শন হয়। যে কারণে এই আরাফাতের ময়দানটি মুসলিম বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের মহামিলনের স্থল। যা বাস্তবে রূপে নেবে আজকের লাখো হজযাত্রীর উপস্থিতির মধ্য দিয়ে।
৯ জিলহজ আরাফার ময়দানে অবস্থান করে আগামীকাল ১০ জিলহজে (শুক্রবার) পশু কোরবানি করবেন হাজিরা। পশু কোরবানি শেষে আরও দুইদিন থাকে হজের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা। হজ সম্পন্ন করতে সবমিলিয়ে সময় লাগে পাঁচদিন।
এ বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত ১৪ লাখ ৭০ হাজারের বেশি আন্তর্জাতিক হাজিদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন কয়েক লাখ অভ্যন্তরীণ হাজি।
মক্কা ও পবিত্র স্থানসমূহের রাজকীয় কমিশনের সাধারণ পরিবহন কেন্দ্রের হজ ও ওমরাহ বিভাগের মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আল-কারনি জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজিরা ইতোমধ্যেই মক্কায় পৌঁছেছেন এবং অভ্যন্তরীণ হাজিরাও মক্কায় এসে ‘তাওয়াফুল কুদূম’ সম্পন্ন করে মঙ্গলবার রাতেই মিনার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
তিনি বলেন, গত ৩৬ দিন ধরে মক্কা ও মদিনায় আগমন করেছেন আন্তর্জাতিক হাজিরা। তাদের যাতায়াত ব্যবস্থায় এখন পর্যন্ত কোনো ধরণের বিঘœ ঘটেনি। অভ্যন্তরীণ হাজিরা সোমবার রাত ও মঙ্গলবার মক্কায় এসে তাওয়াফ সম্পন্ন করেছেন।
ড. কারনি আরও জানান, আজ বৃহস্পতিবার, ৯ জিলহজ সকালে মাশায়ির ট্রেনে প্রায় ৩ লাখ ১৬ হাজার হাজি, বহুমুখী পরিবহন এবং ঐতিহ্যবাহী পরিবহন ব্যবস্থায় প্রায় ৭ লাখ ২০ হাজার হাজি আরাফাতে পৌঁছাবেন বলেন তিনি।
মিনা অঞ্চলের ঐতিহাসিক আল-খায়ফ মসজিদে হাজিদের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স, দাওয়াহ ও গাইডেন্স মন্ত্রণালয়। এতে ২৭ হাজার বর্গমিটার এলাকায় জায়নামাজ বিছানো হয়েছে। এটি একটি সমন্বিত পরিচালনা ও প্রযুক্তিগত ব্যবস্থার অংশ, যা হাজিদের নিরাপদ ও আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করবে।
এ বছর আল-খায়ফ মসজিদে বড় ধরনের উন্নয়ন হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ও বায়ুচলাচল ব্যবস্থার আধুনিকায়ন। নতুন সংযোজিত হয়েছে উন্নত কুলিং ইউনিট, স্মার্ট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও কার্বন ডাই-অক্সাইড পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফ্যান ও কুলার চালু করে হাজিদের আরাম বাড়াবে।
প্রচণ্ড গরমের আশঙ্কায় সৌদি কর্তৃপক্ষ হাজিদের নিরাপত্তা ও আরাম নিশ্চিত করতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী ড. আব্দুল­াহ আসির জানান, হজের জন্য এবার ৫০,০০০ স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রশাসনিক কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন, যা পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে অনেক বেশি।
তীব্র গরমজনিত অসুস্থতার চিকিৎসায় ৭০০টির বেশি হাসপাতালের শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যেখানে ফ্যান লাগানো আছে। গত বছরের তুলনায় এবারের চিকিৎসা সক্ষমতা ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে,” বলেন তিনি।
চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে হজ করতে সৌদি আরব গেছেন ৮৭ হাজার ১৫৭ জন। গত ২৯ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ, সৌদি এয়ারলাইন্স ও ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্সের ২২৪টি ফ্লাইটে তাঁরা সৌদি আরবে যান। হজযাত্রীদের ফিরতি ফ্লাইট আগামী ১০ জুন থেকে শুরু হয়ে ১০ জুলাই পর্যন্ত চলবে।