খুলনা | সোমবার | ০৯ জুন ২০২৫ | ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গাজায় ঈদের দ্বিতীয় দিনেও ইসরায়েলি সেনাদের হামলা, নিহত ৭৫

খবর প্রতিবেদন |
১০:৪৫ এ.এম | ০৮ জুন ২০২৫


মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহার মধ্যেও গাজায় থেমে নেই ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বর্বরতা। ঈদের দ্বিতীয় দিনে বোমা বর্ষণ ও সেনা অভিযানে অন্তত ৭৫ ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন। এদের মধ্যে একই পরিবারের ১৬ জন নারী-শিশু রয়েছেন। গাজা সিটিতে একটি আবাসিক ভবনে বোমা হামলায় এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ধ্বংসস্তূপের নিচে ৮০ জনের বেশি মানুষ আটকা পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানায় আল-জাজিরা।

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ ও অঞ্চলের মতো ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ঈদুল আজহা ছিল ৬ জুন। তার পরের দিন ৭ জুন ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর বোমা বর্ষণের ঘটনা ঘটে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহতদের মধ্যে ১৬ জন একই পরিবারের সদস্য এবং এই ১৬ জনের মধ্যে ৬ জন শিশুও রয়েছে। এই পরিবারটি বসবাস করত গাজার প্রধান ও মধ্যাঞ্চলীয় শহর গাজা সিটির সাবরা এলাকায়।

ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসেল আল জাজিরাকে বলেছেন, শনিবার গাজা শহরের সাবরা পাড়ায় একটি বাড়িতে হামলার আগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ‘কোনো সতর্কতা’ দেয়নি।

এটা ছিল পুরোপুরি ঠান্ডা মাথায় গণহত্যা। শনিবার যারা নিহত হয়েছেন, তাদের সবাই বেসামরিক এবং তাদের মধ্যে বেশ কয়েক জন নারী ও শিশু আছেন বলেন তিনি।

গাজা সিটির বাসিন্দা হামেদ কেহিল আল জাজিরাকে বলেন, অন্যান্য বছর এ সময় আমরা সকাল সকাল উঠে নিজেদের এবং বাচ্চাদের নতুন পোশাকে সাজিয়ে বন্ধু-আত্মীয় পরিজনদের সঙ্গে দেখা করতে যেতাম। আর এবার আমরা আমাদের শিশু ও স্বজনদের লাশ বহন করছি। গতকাল ভোররাতে আমাদের ঘুম ভেঙেছে হামলা, ধ্বংস আর আর্তনাদের শব্দে।

গাজা সিটির অপর বাসিন্দা হাসান আলখোর আল জাজিরাকে বলেন, গত প্রায় দুই বছর ধরে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী যা যা করেছে, সেজন্য যেন নেতানিয়াহু (ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী)-কে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতা করতে হয়।

এদিকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) শনিবার রাতে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে তাদের অভিযানের লক্ষ্য ছিল আসাদ আবু শারিয়া নামে মুজাহিদিন ব্রিগেডের প্রধানকে নিধন করা। আসাদ আবু শারিয়া ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে যে অতর্কিত হামলা চালিয়েছিল হামাস, তাতে অংশ নিয়েছিলেন।

এর আগে ঈদের দিন, অর্থাৎ ৬ জুনও দিনভর গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় গোলাবর্ষণ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী এবং তাতে নিহত হয়েছিলেন অন্তত ৪২ জন।

টেলিগ্রামে শেয়ার করা এক বিবৃতিতে হামাস হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছে যে, আবু শরিয়ার ভাই আহমেদ আবু শরিয়াও এই হামলায় নিহত হয়েছেন।

এদিকে শনিবার ইসরায়েলি বাহিনী দক্ষিণ গাজার রাফায় মার্কিন-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত একটি ত্রাণ বিতরণ স্থানের কাছে অপেক্ষারত কমপক্ষে আট ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।

গাজার বাসিন্দা সামির আবু হাদিদ এএফপি সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, কিছু লোক সাহায্য কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করার সাথে সাথেই ইসরায়েলি [বাহিনী] কেন্দ্রের কাছে অবস্থানরত সাঁজোয়া যান থেকে গুলি চালায়, প্রথমে বাতাসে এবং পরে বেসামরিক লোকদের উপর গুলি চালায়।

একজন নারী আল জাজিরাকে বলেন, আমাদের ক্ষুধার্ত শিশুদের জন্য এক মুঠো ভাত আনতে সাহায্য কেন্দ্রে যাওয়ার পর তার স্বামী হামলায় নিহত হয়েছেন।

গত ১৭ মাসে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে গাজায় নিহত হয়েছেন ৫৪ হাজার ৬৭৭ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৩০ জন। এই নিহত এবং আহতদের ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু।

ভয়াবহ সামরিক অভিযান চালানোর পাশাপাশি গত মার্চ থেকে গাজায় খাদ্য ও ত্রাণবাহী গাড়িও প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েলি বাহিনী। ফলে যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং খাদ্য, সুপেয় পানি, ও ওষুধের অভাবে নরকের জীবনযাপন করছেন গাজার ফিলিস্তিনিরা।

যে ২৫১ জন জিম্মিকে হামাসের যোদ্ধারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে এখনও অন্তত ৩৫ জন জীবিত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তাদের উদ্ধার করার ঘোষণা দিয়েছে আইডিএফ।