খুলনা | রবিবার | ১৫ জুন ২০২৫ | ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মোংলার নারকেলতলা এলাকার আশ্রয়ন প্রকল্প এখন অপরাধীদের অভয়ারণ্য

মোংলা প্রতিনিধি |
১১:২৬ পি.এম | ১৩ জুন ২০২৫


মোংলা উপজেলার নারকেলতলা আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকা এখন অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। ৮/১০ জনের এ অপরাধ চক্র ৫ আগস্টের আগে আ’লীগের নেতৃত্বস্থানে থাকলেও এখন অন্য একটি রাজনৈতিক দলের কাঁধে ভর করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এতে অসহায় ও নিরাপত্তহীনতায় ভুগছে আশ্রয়নে বসবাসকারী নারী-পুরুষ ও শিশুরা। এখানে সন্ধ্যা নামলেই মরণ নেশা গাঁজা-ইয়াবাসহ সব অপরাধমূলকসব কর্মকান্ডই চলছে। এতে যেমন ধ্বংস হচ্ছে উঠতি বয়সের যুব সমাজ, আর প্রতিনিয়ত আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে সাধারণ বসবাসকারীদের। প্রতিবাদ করায় তাদের হাতে এ পর্যন্ত নারী-পুরুষসহ বেশ কয়েজন জখমও হয়েছে। তবে প্রশাসন বলছে অভিযোগ পেয়েছি, ব্যবস্থা নেয়াসহ ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। 
থানার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মোংলা উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নের নারকেলতলা এলাকায় ৪টি আশ্রয়ন প্রকল্পে প্রায় হাজারো পরিবার বসবাস করে। হাসিনা সরকারের আমলে এ আবাসন পরিচালনার জন্য মোঃ আলাউদ্দিনকে সভাপতি ও আলমগীর হোসেনকে সম্পাদকসহ আরো ১৩ জনকে সদস্য করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি আবাসনে বসবাসকারীদের দেখভালসহ তাদের সুখ-দুঃখ, ভাল-মন্দ সুন্দর ও সঠিক ভাবে বসবাস করার জন্য দিক নির্দেশনাসহ সব কিছুই পরিচালনা করবে। কিন্তু ক্ষমতা পেয়ে নিজেরাই একটি বড় সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরী করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এলাকার অসহায় মানুষদের মারধর, ঘের দখল, জমি দখল, মাছ লুটসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে তারা। এই গ্র“পটি গত ৫ আগস্টের পর স্থানীয়দের কয়েকটি চিংড়ি ঘের জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের উপর চালানো হয় জুলুম অত্যাচার, নির্যাতন ও মারধর। 
উপজেলা থেকে বরাদ্দ দেয়া এ আবাসনে বড় বড় ৪টি পুকুর রয়েছে। কথা ছিল এ পুকুরে সকলে মিলে সুপেয় পানি ব্যবহার করবে এবং মাছ চাষ করে সকলে মিলে তা ভাগ করে নেবে। কিন্তু ওই সকল নেতৃবৃন্দ আবাসনের এ পুকুরে মাছ চাষ করে দীর্ঘ প্রায় ৮/১০ বছর সে মাছ বসবাসকারীদের না দিয়ে নিজেরা নিচ্ছে এবং বিক্রি করে তা আত্মসাৎ করছে। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এছাড়াও ওই আবাসন এলাকায় গাঁজা ইয়াবার মতো মরণ নেশা পাচার ও বিক্রির সাথে জড়িত রয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই। 
আবাসনে বসবাসকারীরা জানান দীর্ঘদিন পুকুর থেকে আত্মসাৎ করা মাছ এবং মাছ বিক্রির টাকার হিসাব চাইতে গেলে বিভিন্ন তালবাহানা করছে তারা। গত বেশ কয়েকদিন যাবৎ এ হিসাব-নিকাশ নিয়ে সমিতির নেতৃবৃন্দ ও বসবাসকারীদের মধ্যে বাক-বিতন্ডা হয়। এ নিয়ে ভ্যানচালক ওমর ফারুকসহ বেশ কয়েকজনকে মারধর করে আলাউদ্দিন, আলমগীর মলি­ক, ধনু মান্নানসহ অনেকে। থানায় দেয়া অভিযোগে এসব কথা উলে­খ রয়েছে। স¤প্রতি হিসাবের বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করে মুন্নি নামের এক নারী। এদিন রাতে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে আলাউদ্দিন, আলমগীর মলি­ক, ধনু মান্নান, ছালমা বেগম, শফি শেখ, মোঃ রাকিব মাতুব্বর ও মিজান মাতুব্বরসহ ১০/১২ জনে মিলে স্বামী পরিত্যক্ত হাজেরা খাতুন মুন্নিকে মেরে রক্তাক্ত জখম করে। এসময় ছোট্ট দুই শিশু মাকে বাঁচাতে গেলে তারদের মারধর করা হয়। এ ব্যাপারে আগেও বেশ কয়েকবার অভিযোগ করা হলে কোন ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। প্রতিবাদে মোংলা থানার সামনে ছোট্ট শিশুদের নিয়ে অবস্থান নেয় ভুক্তভোগীরা। এ সকল সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে মুন্নি বেগম ও ওমর ফারুকসহ অন্যান্য ভুক্তভোগীরা বাদি হয়ে থানাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে পৃথক বেশ কয়েকটি অভিযোগ দিয়েছে। 
মোংলা থানার ওসি মোঃ আনিসুর রহমান বলেন নারকেলতলা আবাসনে গরিব ও অসহায় লোকজন বসবাস করছে। সেখানে কমিটির বিরুদ্ধে এর আগেও বেশ অভিযোগ রয়েছে। স¤প্রতিও এক নারীসহ ২টি অভিযোগ হাতে পেয়েছি। ঘটনার শোনার পর পরই ওই এলাকায় পুলিশ পাঠানো হয়েছে এবং তদন্তও চলছে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।