খুলনা | সোমবার | ১৬ জুন ২০২৫ | ৩ আষাঢ় ১৪৩২

ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলা, জেরুজালেম তেল আবিব ও তেহরানে বিস্ফোরণ

খবর প্রতিবেদন |
০১:৩১ এ.এম | ১৫ জুন ২০২৫


ইসরায়েল ও ইরান একে অপরকে লক্ষ্য করে শনিবার রাতভর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এর ফলে জেরুজালেম, তেল আবিব এবং তেহরানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এরপর থেকেই জেরুজালেমের পুরোনো শহর সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে। শুক্রবার ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির প্রাণকেন্দ্র ও দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর ওপর হামলা চালায় ইসরায়েল। এ ঘটনার পরই ইরান পাল্টা জবাব দেয়।
ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে প্রথমে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইরান। এরপর ইসরায়েলের দিকে একের পর এক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। এই হামলা চলাকালে জেরুজালেম ও তেল আবিবের আকাশ অন্ধকারের মধ্যেও বিস্ফোরণের আলোয় ঝলমল করে ওঠে এবং নিচের ভবনগুলো কেঁপে ওঠে। এ সময় জনগণকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার জন্য একাধিক সতর্কতা জারি করা হয়। বিবিসির আইওন ওয়েলস জানিয়েছেন, জেরুজালেমে একটি বিস্ফোরণের শব্দ তিনি নিজ কানে শুনেছেন।
ইসরায়েলি কর্মকর্তা ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইরানের পাল্টা হামলায় এখন পর্যন্ত তিনজন নিহত ও কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়েছে।ইরানের রাজধানী তেহরানের একটি আবাসিক কমপ্লেক্সে ইসরায়েলি হামলায় ২০ শিশুসহ প্রায় ৬০ জন নিহত হয়েছেন। শনিবার ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে। 
প্রতিবেদনে জানা যায়, শুক্রবার ভোররাতে শুরু হওয়া এই হামলা ছিল ইসরায়েলের পক্ষ থেকে ইরানের ওপর তৃতীয় দফা আক্রমণ। শুক্রবার স্থানীয় সময় ভোররাতে ইসরায়েল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে একটি সামরিক অভিযান শুরু করে। এটিকে এখন পর্যন্ত ইরানের মাটিতে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় সামরিক হামলা হিসেবে উলে­খ করা হচ্ছে। অভিযানে অন্তত ২০০টি যুদ্ধবিমান অংশ নেয় এবং ১০০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে একযোগে হামলা চালানো হয়।
এর আগে গত ১৩ জুন শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে ইরানের রাজধানী তেহরানসহ অন্তত ৮টি শহরে বড় ধরনের বিমান হামলা করে ইসরায়েলের বিমানবাহিনী (আইএএফ)। এতে নিহত হয়েছেন অন্তত ৭৮ জন এবং আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৩০০ জন। এছাড়া ইরানের সেনাপ্রধান মোহাম্মদ বাঘেরিসহ সামরিক বাহিনীর ২০ জন কর্মকর্তাও নিহত হয়েছেন। ইরানের পরমাণু প্রকল্প ও সামরিক বাহিনীর স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়েছিল। 
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, হামলায় ইরানের অন্তত ১০০টি স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইরানের প্রতিরক্ষা বাহিনী এ সামরিক অভিযানের নাম দিয়েছে ‘দ্য রাইজিং লায়ন’।
বেসরকারি হিসাবেও দেখা গেছে, হতাহতের সংখ্যা সরকারি ঘোষণার চেয়ে বেশি হতে পারে। অনেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৃতের সংখ্যা ৭৮ ছাড়িয়ে গেছে এবং আহতের সংখ্যা ৩৩০ এর কাছাকাছি।
হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু স্থাপনা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি, সামরিক ইনস্টলেশন এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এসব হামলার ফলে ইরানের সেনাবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা এবং বেশ কয়েকজন পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সূত্র। এই হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানসহ পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্তত ৯ বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন।
শনিবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইরানের পরমাণু প্রকল্পে যুক্ত ৯ জন শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। অন্যদিকে, জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ইরানে কমপক্ষে ৭৮ জন নিহত ও ৩২০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক। এর মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।
অতর্কিত হামলার পর শুক্রবার রাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি’ সেনা অভিযান শুরু করে ইরান। এতে এক ইসরায়েলি নারীসহ নিহত ৩ এবং ৪১ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, দেশটির খোররামাবাদ, কেরমানশাহ ও তাবরিজ শহরে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে; যা সম্ভাব্য নতুন ইসরায়েলি হামলার ইঙ্গিত।
তাবরিজ শহরের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, শহরের আকাশে কালো ধোঁয়া উড়ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসরায়েলি এক সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরায়েল আরও হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই হামলা এখনও শেষ হয়নি।
এর আগে, শুক্রবার ভোরের দিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বিমান ও ড্রোন ব্যবহার করে ইরানের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। 
ইসলায়েলি হামলার প্রতিশোধে ইসরায়েলের বাণিজ্যিক রাজধানী তেল আবিবসহ গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য শহরে ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের আঘাতে জেরুজালেম ও তেল আবিবের বেশ কিছু স্থাপনা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ইরানি হামলায় ইসরায়েলে অন্তত তিনজন নিহত ও আরও কয়েক ডজন আহত হয়েছেন।
ইরানের পরমাণু স্থাপনা ধ্বংসের ব্যাপার ইসরায়েল দৃঢ় প্রতিজ্ঞ উলে­খ করে সিএনএনকে ইয়েশিয়েল লেইটার বলেন, আমাদের হিসেব বলছে, আগামী ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে আমরা ইরানের পরমাণু প্রকল্প সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফেলতে পারবো। মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্ববাসীর মঙ্গলের জন্য এটা আমাদের করতে হবে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। তার মতে, এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা ধ্বংস করা।
অন্যদিকে, ইরান সরকার তাদের নাগরিকদের প্রতি দেশের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়ানোর আহŸান জানিয়েছে। তারা এ হামলার কঠোর প্রতিশোধ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে এবং জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই আগ্রাসনের যথাযথ জবাব দেওয়া হবে।
আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং কোনো ধরনের সংঘর্ষ যাতে আরও বিস্তৃত না হয়, সে জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। 
সূত্র: আল-জাজিরার, রয়টার্স, এএফপি।