খুলনা | বুধবার | ১৮ জুন ২০২৫ | ৪ আষাঢ় ১৪৩২

কালীগঞ্জ হাসপাতালের আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ: সেবা বঞ্চিত রোগীরা

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি |
১১:৩৭ পি.এম | ১৫ জুন ২০২৫


ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একমাত্র মূল্যবান আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করায় আধুনিক মেশিনটি অকেজো হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গেল তিন মাস ধরে রোগীদের আধুনিক রোগ নির্ণয়ের জন্য আল্ট্রাসনোর কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সেবা প্রত্যাশী রোগীরা। এতে করে হাসাপাতালে রোগ নির্ণয়ের জন্য আসা রোগীদের যেতে হচ্ছে বেসরকারি প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। যার কারণে রোগীদের সময় ও আর্থিকভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বেসরকারি হাসপাতালে বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আল্ট্রাসনো করতে গিয়ে গড় ৫ থেকে ৮ গুণ টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্নবিত্ত মানুষ। কবে নাগাদ আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটির সেবা কার্যক্রম নিয়মিত হবে তা নিশ্চিত করতে পারেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১৫ জুন জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) থেকে হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি প্রদান করা হয়। মেশিনটি স্থাপনের পর থেকে ২৯৬ টি আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করা হয়। আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ সনোলজিস্ট থাকার কথা থাকলেও উপজেলা হাসপাতালটির জনবল কাঠামো অনুযায়ি সনোলজিস্ট পদ নেই। পূর্বের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন নিজে বিশেষজ্ঞ সনোলজিস্ট না হলেও আল্ট্রাসনোগ্রাম করতেন। তিনি চলে যাওয়ার পর থেকে রোগীদের রোগ নির্ণয়ের সহজ ও আধুনিক এই যন্ত্রের ব্যবহার বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৮ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত মেশিনটি ব্যবহার করে আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করা হয়। 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালে প্রেগনেন্সি জনিত আল্ট্রাসনো ১১০ টাকা। আর পুরো পেটের আল্ট্রাসনো করতে ব্যয় হয় ২২০ টাকা। একই আল্ট্রাসনো বেসরকারি হাসপাতালে বা ডায়গনস্টিক সেন্টারে করতে খরচ ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা। ফলে হাসপাতালের আল্ট্রাসনো কার্যক্রম বন্ধ থাকায় রোগীদের ছুটতে হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেখানে বাধ্য হয়েই বাড়তি টাকা দিয়েই আল্ট্রাসনো করছেন রোগীরা। 
সরেজমিনে দেখা মেলে সাঁথিয়া নামের এক রোগীর সাথে। তিনি পেটের সমস্যা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন। ডাক্তার তাকে দেখে আল্ট্রাসনো করার পরামর্শ দিলেও অর্থাভাবে আল্ট্রাসনো করতে পারেননি। কেননা হাসপাতালের আল্ট্রাসনো বিভাগে গিয়ে জানতে পারেন মেশিনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কাছে বেশি টাকা না থাকায় আল্ট্রাসনো না করে বাড়ি ফিরে যান সাঁথিয়া। 
এসময় আরো কয়েকজন রোগী ও স্বজন জানান, একমাত্র আল্ট্রাসনো মেশিন দিয়ে এই হাসপাতালের আল্ট্রাসনোগ্রাফি জনিত পরীক্ষা কার্যক্রম চলছিলো। বর্তমানে আল্ট্রাসনো সেবা বন্ধ থাকা রীতিমতো দুঃখজনক। এই সেবা নিয়মিত চালু রাখার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের চিন্তা করা উচিৎ। অন্যথায় তাদের মতো দূর-দূরান্ত থেকে আসা চিকিৎসা সেবা নিতে আসা মানুষেরা পড়বে চরম ভোগান্তিতে। পাশাপাশি আর্থিকভাবে হবেন ক্ষতিগ্রস্ত।
হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ও অস্ত্রাসনোগ্রাফির সহকারী আসমা খাতুন জানান, একমাত্র আল্ট্রাসনো মেশিনের কার্যক্রম দীর্ঘদিন চলমান না থাকায় একদিকে যেমন সাধারণ রোগীরা সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন অন্যদিকে মূল্যবান এই মেশিনটিও সক্রিয়তা হারাচ্ছে। বিষয়টি উধর্ক্ষতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। 
কালীগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মোঃ রেজাউল ইসলাম জানান, সনোলজিস্ট না থাকাই বেশ কিছুদিন ধরে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি চালানো হচ্ছে না এবং বন্ধ রয়েছে আল্ট্রাসনো কার্যক্রম। এরমধ্যে আমি একদিন মেশিনটিতে পরীক্ষা করেছি। কবে নাগাদ মেশিনটির কার্যক্রম নিয়মিত হবে তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে দ্রুত আল্ট্রাসনো বিভাগ সচলের চেষ্টা অব্যাহত আছে।