খুলনা | মঙ্গলবার | ১৭ জুন ২০২৫ | ৩ আষাঢ় ১৪৩২

ইসরাইলি হামলায় নিভে গেল তরুণ ইরানি কবির প্রাণ প্রদীপ

খবর প্রতিবেদন |
০১:৫১ এ.এম | ১৭ জুন ২০২৫


‘আমি পুড়ে যাই,
আমি বিবর্ণ হয়ে যাই,
আমি এক নীরব তারা হয়ে উঠি,
যে তোমার আকাশে ধোঁয়া হয়ে যায়...’
নিজের নোট বইয়ে ইরানের তরুণ কবি পারনিয়া আব্বাসির লেখা শেষ কয়েকটি পঙতি। আর ক’দিন পরেই নিজের ২৪তম জন্মদিন পালন করতেন তিনি। কিন্তু ইসরাইলের এক হামলায় ২৩-এই থেমে গেছে তার কলম। গত শুক্রবার ভোরে তেহরানে পারনিয়ার পরিবারের সব সদস্য নিহত হয়েছেন।
পারনিয়ার বান্ধবী মরিয়ম জানান, ক্ষেপণাস্ত্রটি পারনিয়াদের ভবনের ঠিক মাঝখানে আঘাত হানে। যে কারণে ভবনের পুরো একটি অংশ ধসে পড়ে, ভবনের আরও বেশ কয়েকজন বাসিন্দা নিহত হয়েছেন।
প্রিয় বান্ধবীর এমন মৃত্যুতে মরিয়ম বাকরুদ্ধ। কান্না জড়ানো গলায় মরিয়ম জানান, ‘সে সবই ছিল। একজন কবি, একজন শিক্ষক ও একজন কন্যা। মাত্র কয়েক দিন আগে ব্যবস্থাপনায় স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল। ইরানের মেলি­ ব্যাংকের কেন্দ্রীয় শাখায় নিজের চাকুরি ধরে রাখতে সে ভর্তি স্থগিত রেখেছিল।’
পারনিয়াদের ধসে পড়া ভবনের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন তুলেছে। ওই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি গোলাপি রঙের ম্যাট্রেস, সেটির এক প্রান্ত রক্তে ভেসে যাচ্ছে, রক্তের ওপর কয়েক গোছা চুল, যেন কংক্রিটের চাদর মুড়ি দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে কেউ।
ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে সবার প্রথমে পারনিয়ার মৃতদেহ বের করে আনেন উদ্ধারকর্মীরা। এরপর আনা হয় তার ভাই পারহামের মৃতদেহ, ১৬ বছরের এ কিশোরের জীবন সবে শুরু হয়েছিল।
পারনিয়ার বাবা অবসরে যাওয়া শিক্ষাকর্মী আর মা মেলি­ ব্যাংকের সাবেক কর্মীর মৃতদেহ তখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। কয়েক ঘণ্টা পর ভারী যন্ত্রপাতি এনে কংক্রিটের স্তূপ সরিয়ে তাদের মৃতদেহ বের করা হয়।
মুখে শুধু সামরিক ও পরমাণু স্থাপনায় হামলার কথা বললেও আদতে ফিলিস্তিন, লেবানন, ইয়েমেনের মতো ইরানেও নিরাপরাধ সাধারণ মানুষের ওপরই হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। তাদের হাতে ফিলিস্তিনের পাঁচ বছরের শিশু হিন্দ রাজাবের ছোট্ট শরীর যেমন গুলিতে ঝাঁঝরা হয়েছিল, তেমনি তরুণ পারনিয়ার কবিতার নোট বইও রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে।