খুলনা | বুধবার | ১৮ জুন ২০২৫ | ৪ আষাঢ় ১৪৩২

ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তার বাসায় ইসরায়েলের হামলা

শতাধিক বাংলাদেশিকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু

খবর প্রতিবেদন |
০১:৩৪ এ.এম | ১৮ জুন ২০২৫


ইরানের রাজধানী তেহরানে সোমবার ইসরায়েলের চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত এক কর্মকর্তার বাসভবন আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। এতে বাড়িটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সৌভাগ্যক্রমে হামলার সময় বাংলাদেশি ওই কর্মকর্তা বাসায় না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
ওয়ালিদ ইসলাম নামে ওই কর্মকর্তা ইরানে বাংলাদেশি দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি হিসেবে কর্মরত। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমার বাসা পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দিয়েছে।’
বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মূলত তেহরানের ‘জর্ডান’ এলাকায় বসবাস করেন, যা শহরের তৃতীয় জেলার মধ্যে পড়ে। ওই এলাকাতেই ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনসহ আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা অবস্থিত, যেগুলোকে লক্ষ্য করেই সোমবার ইসরায়েল ঘোষণা দিয়ে হামলা চালায়।
হামলার পূর্বে বাসিন্দাদের ওই এলাকা থেকে সরে যেতে বলা হয়েছিল। ফলে প্রাণহানি তুলনামূলক ভাবে কম হলেও, ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়েছে অসংখ্য স্থাপনা।
তেহরানে বাংলাদেশি দূতাবাসের কর্মকর্তা ওয়ালিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের আশপাশে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। শুধু কিছু কূটনৈতিক আবাসন কোনো ভাবে টিকে আছে।’
ইসরায়েলের হামলার আশঙ্কায় সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ মিশনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ সরকার। এরপর তারা দূতাবাস এলাকা ত্যাগ করে তেহরানের অন্যান্য নিরাপদ অঞ্চলে অবস্থান নেন।
তবে ক্রমাগত হামলার বিস্তৃতি বিবেচনায় নিয়ে এখন প্রবাসী বাংলাদেশিদের তেহরানের বাইরের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ঢাকায় মঙ্গলবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিক বলেন, তেহরানে অবস্থানরত প্রবাসী ও দূতাবাস কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আমরা তাদের সুরক্ষিত স্থানে সরিয়ে নিতে কাজ করছি।
তিনি জানান, বর্তমানে তেহরানে অবস্থানরত প্রায় ৪০০ বাংলাদেশি সবাই নিরাপদে আছেন, তবে পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত তাদের উপর নজর রাখা হচ্ছে।
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব  রুহুল আলম সিদ্দিকী জানান,  তেহরানে আছেন, এমন ১০০ জনের মতো বাংলাদেশি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাদেরসহ দূতাবাসে যত পরিবার আছে তাদেরকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি বলেন, ‘দূতাবাসের কর্মকর্তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। এখনকার সিদ্ধান্ত হচ্ছে তেহরান থেকে যতটুকু দূরত্বে গেলে নিরাপদে থাকা যাবে, তারা যেন ততটুকু দূরত্বে গিয়ে থাকেন। অর্থাৎ নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়া।’
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে অর্থ পাঠানোর বিষয়টি বেশ কঠিন। তবে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য যে বাড়তি অর্থ লাগবে, সেটি আমরা পাঠানোর চেষ্টা করছি। ব্যংকিং চ্যানেল সেখানে কাজ করে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু বিমান চলাচল বন্ধ। তাই এ মুহূর্তে ইরান ত্যাগ করার কোনও ব্যবস্থা নেই। স্থলপথে হয়তো কষ্ট করে তেহরান ত্যাগ করা সম্ভব। কিন্তু সেটিও নিরাপদ নয়। এ কারণে আমরা তাদেরকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে নির্দেশনা দিয়েছি।’ এই নির্দেশনা কার্যকর করতেও সময় লাগবে বলে তিনি জানান।
রুহুল আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘১০০ জনকে রাখার মতো একটি জায়গা পাওয়া সম্ভব নয়। তাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় রাখতে হবে। সবাইকে একসঙ্গে সরিয়ে নেওয়া যাবে না। তাছাড়া সব মিলিয়ে সেখানে একটি যুদ্ধাবস্থা বিদ্যমান।’
ইরানে বেশকিছু সংখ্যক ভারতীয় নাগরিক আছেন। ভারত তাদের নাগরিকদের তেহরান থেকে সরিয়ে ইরানের ভেতরে নিরাপদ স্থানে নিয়ে গেছে। ভারতীয়দের একটি সুবিধা হচ্ছে তাদের ব্যংকিং চ্যানেলের অসুবিধা নেই। পাকিস্তানি নাগরিকরা ইরান-পাকিস্তান সীমান্ত দিয়ে নিজ দেশে যেতে পারবে। ওই সীমান্ত খোলা আছে, বলে তিনি জানান।