খুলনা | শুক্রবার | ২০ জুন ২০২৫ | ৬ আষাঢ় ১৪৩২

উপাধ্যক্ষসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ নিয়েও দুর্নীতি

প্রশ্নপত্র ফাঁস ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ খুলনার মুহসিন মহিলা কলেজে

এন আই রকি |
০১:৫৪ এ.এম | ১৯ জুন ২০২৫


খুলনার মুহসিন মহিলা কলেজে উপাধ্যক্ষসহ সাতটি পদে নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস, আর্থিক লেনদেন এবং নির্ধারিত সময়ে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়াসহ নানান অভিযোগ মিলেছে। ইতিমধ্যে একাধিক পরীক্ষার্থী লিখিত ভাবে অভিযোগগুলো কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর দাখিল করেছে। দীর্ঘ প্রায় আট বছর পর কলেজটিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরেই বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের দাবি নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে যারা জড়িত তাদের পরিবর্তন করে পুনরায় নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে স্বচ্ছতা  ফিরে আসবে। 
জানা যায়, গত ১০ এপ্রিল কলেজটিতে অফিস সহায়ক, ল্যাব সহকারী (জীববিজ্ঞান), ল্যাব সহকারি (রসায়ন), ল্যাব সহকারী (পদার্থ), অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, ল্যাব সরকারি (আইসিটি) এবং উপাধ্যক্ষসহ আটটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি  প্রকাশ করা হয়। গত ১৩ জুন সকালে সকল পদে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে ল্যাব সহকারী (আইসিটি) পদে পর্যাপ্ত পরিমাণ আবেদন জমা না পড়ায় পরীক্ষা স্থগিত হয়। পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধির টিম দেরিতে আসায় নিয়োগ পরীক্ষা দুই ভাগে নেয়া হয়। পরীক্ষার দুই দিন পর ১৫ জুন চারজন পরীক্ষার্থী নিয়োগের অনিয়ম নিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। 
নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া একাধিক পরীক্ষার্থী  জানান, তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ভাবে প্রতিপদের বিপরীতে ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়েছিল। তাছাড়া প্রবেশপত্র সকালে পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও সেটি দুপুর সাড়ে ১২টায় এবং বিকেল সাড়ে ৩টার পর অনুষ্ঠিত হয়েছে।  পরীক্ষার প্রশ্নে যা এসেছে সেগুলো আগেই ফাঁস হয়ে গেছে যার কারণে পরীক্ষার হলের বেঞ্চে অনেক প্রশ্নের উত্তর লেখা ছিল। তাছাড়া নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হওয়ার অল্প সময়ের আগে  পূর্ব নির্ধারিত পরীক্ষার হল থেকে পরীক্ষার হল পরিবর্তন করা হয়। তারা দাবি করেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে যারা জড়িত সেই টিম পরিবর্তন করে এবং পুনরায় নিয়োগ পরীক্ষা নিলে স্বচ্ছতার সাথে নিউ প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে। বিভিন্ন সময় দেখা যায়, নিয়োগ পরীক্ষার সময় কর্তৃপক্ষ কলেজ থেকেই নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা বেশি করে। এতে করে আর্থিক দুর্নীতি প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। 
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক এবং কলেজটির নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোনীত প্রতিনিধি মোঃ আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকার  বলেন, প্রতিটি পদে পরীক্ষার প্রশ্নের জন্য আলাদা প্রতিনিধি দল ছিল। আমরা সকালে কলেজে উপস্থিত হয়ে পরীক্ষার প্রশ্ন করি। এই কারণে পরীক্ষা নিতে বিলম্ব হয়েছিল। প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন,পরীক্ষার দিন শুক্রবার টাকায় নামাজের বিরতি ছিল। তাছাড়া প্রশ্নপত্র ফটোকপির সাথে আমরা জড়িত ছিলাম না। প্রশ্নপত্র কিভাবে ফাঁস হয়েছে এ বিষয়ে আমি জানিনা। তবে নিয়োগ বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে কলেজের পরিচালনা পরিষদ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। 
মুহসিন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল লতিফ জানান, পরীক্ষা নির্ধারিত সময় অনুষ্ঠিত হয়নি। প্রশ্নপত্র করতে বিলম্ব হওয়ায় পরীক্ষা দেরি করে নেয়া হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে আমি শুনেছি, তবে এ বিষয়ে আমি বিস্তারিত জানি না। তিনি স্বীকার করেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া লেনদেনের অভিযোগ এনে উপাধ্যক্ষ পদে দুইজন,  ল্যাব সহকারী (পদার্থ) এবং অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী পদে একজন করে পরীক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। 
কলেজটির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি শেখ কামরুজ্জামান বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সাথে করার চেষ্টা করা হয়েছে। অনেকের হয়তো অনুরোধ রাখতে না পারায় এই ধরনের বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তবে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে যে সকল অভিযোগ উঠেছে সেগুলো আমলে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হবে। প্রয়োজনে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হবে। নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে কোন ধরনের অস্বচ্ছতার সুযোগ নেই।