খুলনা | শনিবার | ২১ জুন ২০২৫ | ৭ আষাঢ় ১৪৩২

বঙ্গোপসাগরে বজ্রমেঘ, মৌসুমি বায়ুর কবলে উপকূল : ভারী বৃষ্টির আভাস

খবর প্রতিবেদন |
০১:৪৫ এ.এম | ২১ জুন ২০২৫


সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বজ্রমেঘ তৈরি হচ্ছে এবং বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, উপক‚লীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দর গুলোর ওপর দিয়ে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিসহ দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এ অবস্থায় দেশের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর গুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
শুক্রবার আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলামের সই করা আবহাওয়ার সতর্ক বার্তায় এসব তথ্য জানানো হয়। এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপক‚লের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। দেশজুড়ে বৃষ্টির হচ্ছে উলে­খ করে আবহাওয়া অফিস জানায়, এই বৃষ্টিপাত আগামী ২৫ তারিখ পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, বর্তমানে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বঙ্গোপসাগরের উত্তরাংশে এবং বাংলাদেশে প্রবলভাবে সক্রিয় রয়েছে। এটি মূলত বর্ষাকালের একটি স্বাভাবিক জলবায়ুগত প্রক্রিয়া হলেও যখন তা বেশি সক্রিয় হয়, তখন তা ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও বাতাসের গতি বাড়িয়ে তোলে, যার ফলে উপক‚লীয় এলাকাগুলো ঝুঁকির মুখে পড়ে। এই সময়ে নদীবন্দর, জেলেদের মাছ ধরার নৌকা ও সামুদ্রিক যাত্রার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন হয়।
সক্রিয় মৌসুমি বায়ু কি? : বিষয়টি নিয়ে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক জানান, সাধারণত দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রতি বছর জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কালে বঙ্গোপসাগর হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এটি ভারত মহাসাগরের উষ্ণ জলীয় বাষ্প বহন করে আনে এবং ভূমি এলাকায় পৌঁছেই ওই বাষ্প ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টির সৃষ্টি করে। যখন এই বায়ু প্রবল ভাবে সক্রিয় হয়, তখন বৃষ্টিপাতের মাত্রা বেড়ে যায়, সঙ্গে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন, মৌসুমি বায়ুর এই সক্রিয়তা মূলত বঙ্গোপসাগরের ওপর নি¤œচাপ বা লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। নি¤œচাপ যত শক্তিশালী হয়, বায়ুর গতি ও আর্দ্রতা তত বাড়ে। এতে করে উপক‚লীয় এলাকাগুলোতে সাগরের ঢেউও অস্বাভাবিক রকমের উঁচু হতে পারে এবং সমুদ্র বন্দরগুলোকে সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে হয়।
সেজন্য, আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে এই অবস্থায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার ট্রলার ও নৌযানগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপক‚লের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলে। সেই সঙ্গে জেলেদের গভীর সাগরে না যাওয়ার জন্যও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, বঙ্গোপসাগরে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর ফলে বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা, কক্সবাজার, পটুয়াখালী, ভোলা, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠিসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
৪ দিনের টানা বর্ষণে রামপালে জনজীবন বিপর্যস্ত : রামপালে চার দিনের টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উপজেলার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। অবিরাম বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন রিকশাচালক, দিনমজুর, ও কর্মজীবী মানুষ। কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও ডুবে গেছে চলাচলের রাস্তা। গত ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩.৬ মিলিমিটার। মোংলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
টানা বৃষ্টির কারণে রামপালের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে গেছে। ফলে অনেক সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। বিশেষ করে বেশী বিপাকে পড়েছেন রিকশা চালক ও দিনমজুর শ্রেণির লোকজন।
রিকশাচালক খলি রাজ্জাক বলেন, আজ চার দিন ধরে বৃষ্টি থামছে না। রাস্তায় পানি জমে আছে। রিকশা চালাতে খুব কষ্ট হয়। যাত্রীও কম। আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু মাথার ওপর কিস্তির খাড়া আছে।
সবজি বাজারের দিনমজুর শহিদুল ইসলাম বলেন, বাজারে ক্রেতা কম তাই কাজ নাই। সকালে বের হই, কিন্তু কোথাও কাজ জোটে না।
বাজার করতে আসা মোতাহার মলি­ক বলেন, বাজার করতে বের হয়েছি, এখন  মনে হয় যুদ্ধ করতে বের হয়েছি। এক হাতে ছাতা, আরেক হাতে জুত ও ব্যাগ, একদিকে রাস্তা খারাপ, অন্যদিকে ড্রেনের অবস্থা বাজে, সব মিলিয়ে আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই। এভাবে বৃষ্টির মাত্রা বৃদ্ধি পেলে জনভোগান্তি বাড়বে বলে সচেতন মহল মনে করেন।
তবে মৎস্য দপ্তর ও ত্রাণ দপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, বৃষ্টিতে রাস্তা ঘাট তলিয়ে গেলেও মাছ ভসে যায়নি বা রাস্তার কোন ক্ষতি হয়নি। তবে তারা অতি বৃষ্টির দিকে নজর রাখছেন।
মোংলা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ হারুন আর রশিদ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩.৬ মিলিমিটার। আগামী দিনও এ বৃষ্টির ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।