খুলনা | সোমবার | ২৩ জুন ২০২৫ | ১০ আষাঢ় ১৪৩২

অল্প কিছু সংশোধনীসহ সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন

‘বরাদ্দ বাড়লো সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কালো টাকা সাদার সুযোগ নেই’

খবর প্রতিবেদন |
০৪:৪২ পি.এম | ২২ জুন ২০২৫


২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া কালো টাকা সাদা করার সুযোগও বন্ধ করা হয়েছে। অল্প কিছু সংশোধনীসহ সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। রোববার দুপুরে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বাজেট অনুমোদন হয়। পরে বিকেলে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তুলে ধরেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটের তিনটি জায়গায় পরিবর্ত করে বাজেট পাস করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রস্তাবিত সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ৮১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। সেটি বাড়িয়ে ৯১ হাজার সাতশ’ কোটি টাকা করে বাজেট পাস করা হয়েছে। এতে এই খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা।
উপদেষ্টা জানান, এছাড়া আমরা জিডিপির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ ধরেছি। আর মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।
এছাড়া বাড়তি কর দিয়ে কালো টাকা বৈধ করার যে সুযোগ প্রস্তাবিত বাজেটে দেওয়া হয়েছিল, তা বাতিল করা হয়েছে। ফলে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা।
নির্বাচিত সংসদ না থাকায় গত ২ জুন টেলিভিশনে বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে যার আকার ধরা হয় ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। আর এনবিআরকে আদায়ের লক্ষ্য দেয়া হয় ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি। বাজেট ঘাটতি ধরা হয় জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। 
নতুন বাজেটের মাধ্যমে সাড়ে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য অন্তবর্তী সরকারের। তবে, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখার পর নানা মহলের সমালোচনায় তা বাদ পড়তে পারে চূড়ান্ত অনুমোদনে। নতুন বাজেটের পাশাপাশি, চলতি অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটেরও অনুমোদন দেবে উপদেষ্টা পরিষদ।
নিয়ম অনুযায়ী রোববার অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে নতুন বাজেট পাস হয়। তার আগে অর্থবিলে স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন।
প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার পর সর্বসাধারণের জন্য অনলাইনে মতামত দেওয়ার সুযোগ দিয়েছিল সরকার। কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা ও অর্থনীতিবিদরা প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে নানা মতামত তুলে ধরেন। তবে প্রস্তাবিত বাজেটের কিছু বিষয়ে আপত্তি এলেও তেমন বড় কোনো পরিবর্তন আসছে না।
নিয়ম অনুযায়ী, নতুন এই বাজেট কার্যকর করা হবে ১ জুলাই থেকে। প্রতিবছর বাজেট নিয়ে সংসদে তুমুল তর্কবিতর্ক হয় সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের মধ্যে। এখন সংসদ কার্যকর নেই। তাই এ নিয়ে কোনো আলোচনাও নেই।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবার সংসদ ছাড়াই আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এই বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। গত ২ জুন, সোমবার, রাষ্ট্রীয় স¤প্রচার মাধ্যম বিটিভি এবং অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার এই নতুন বাজেট একযোগে প্রচারিত হয়।
প্রস্তাবিত এ বাজেট নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গত ১৯ জুন পর্যন্ত নাগরিকদের কাছ থেকে মতামত গ্রহণ করা হয়। এরপর কিছু সংযোজন বিয়োজন কর বাজেটের খসড়া চূড়ান্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়।
বাজেটের এ চূড়ান্ত খসড়া আজ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে তা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে। এক্ষেত্রে আজই বরাদ্দ সংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশ এবং শুল্ক-কর সংক্রান্ত আরেকটি অধ্যাদেশ জারি করার কথা রয়েছে।
নির্বাচিত সরকারের আমলে বাজেট জাতীয় সংসদেই উপস্থাপন করা হয়। পরে মাস জুড়ে সেই প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা হতো সংসদে। জুন মাসের শেষ দিকে সংসদে পাস হতো নতুন অর্থবছরের বাজেট। এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই। তবে বাজেট ঘোষণার পর প্রস্তাবিত বাজেটের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নাগরিকদের কাছে মতামত নেওয়া হয়।