খুলনা | সোমবার | ২৩ জুন ২০২৫ | ৯ আষাঢ় ১৪৩২

গ্রেফতার সাবেক সিইসি নুরুল হুদাকে জুতার মালা পরালো জনতা

শেখ হাসিনা ও সাবেক তিন সিইসিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে বিএনপি’র মামলা

খবর প্রতিবেদন |
১২:৫৩ এ.এম | ২৩ জুন ২০২৫


আওয়ামী লীগ আমলে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম-কারচুপির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে আসামি করে মামলা করেছে বিএনপি। মামলার মোট আসামি ২৪ জন। এর মধ্যে আছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের সাবেক ৪ আইজিপি। রোববার বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানায় বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোঃ সালাহ উদ্দিন খান বাদী হয়ে এ মামলা করেন (নম্বর-১১)।
মামলার আসামিরা হলেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ, তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার মোঃ আব্দুল মোবারক, আবু হানিফ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) জাবেদ আলী, শাহ নেওয়াজ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা, তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, তৎকালীন পুলিশের আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী, তৎকালীন ঢাকা মহানগরের পুলিশ কমিশনার, সাবেক ডিজি র‌্যাব ও সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, সাবেক এসবি প্রধান মোঃ মনিরুল ইসলাম, সাবেক ডিজিএফআই প্রধান (নাম অজ্ঞাত), সাবেক এনএসআই প্রধান ও সাবেক ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল আলম। 
মামলার বিষয়টি নৈশ্চিত করে শেরে বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ ইমাউল হক বলেন, আগে নির্বাচন কমিশনে যেসব কর্মকর্তা ছিলেন অভিযোগকারীর দৃষ্টিতে তারা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান থাকার পরও ভয়-ভীতি দেখিয়ে ভোট সম্পন্ন করেন এবং জনগণের ভোট ছাড়াই প্রার্থীদের বিজয়ী করেন। এই কাজগুলো দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করে ২৪ জনকে আসামি করে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
মামলার বাদী বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন খান বলেন, ২০১৪,২০১৮ ও ২০২৪ সালের ভোট পরিচালনাকারী প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্য, বিভিন্ন সংস্থার এন এস আই, ডিজিএফআই, এসবি প্রধানসহ তারা সম্মিলিতভাবে প্রশাসনিক নির্বাচন করেছেন। দিনের ভোট রাতে করে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন শেখ হাসিনা। তাই তিনিসহ ১৯ জনকে আসামি ও অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামি করে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। 
নির্বাচন কমিশনারদের সংবিধান লঙ্ঘনের দায় এবং অপরাধ করার দায়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি পত্রের মাধ্যমে ২০১৮ সালেও নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছিলাম। সে অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ছায়া লিপি ও আলামতসহ আজ অভিযোগ জমা দিয়েছি শেরে বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে।
জুতার মালা : সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) একেএম নুরুল হুদার গলায় জুতার মালা পরিয়েছে জনতা। রোববার সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর উত্তরায় স্থানীয় জনতা তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। উত্তরা-পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ হাফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রোববার রাতে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। মামলা দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।
নুরুল হুদাকে আটক করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিও দেখা যায়, স্থানীয় জনতা তাকে ঘিরে রেখেছে। তার গলায় জুতা ঝুলিয়ে স্থানীয়রা বিভিন্ন শ্লোগান দিচ্ছিলেন। 
নুরুল হুদা গলায় জুতার মালা পরিহিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় তার সামনে দাঁড়িয়ে একজন বলেন, ‘ও যে স্বৈরাচার সৃষ্টি করেছে এটা (জুতার মালা) তার উপহার। ও আর স্বৈরাচার সৃষ্টি করতে পারবে না।’
ফেসবুক ব্যবহারকারী মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম লিখেছেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা কট... পরানো হলো জুতার মালা।
‘ফ্যা'সি'স্ট হাসিনার অবৈধ নির্বাচনের হোতা নুরুল হুদাকে জুতার মালা পরালো জনতা’ উলে­খ করে তিনি আরও লিখেছেন-আগামীতে যে বা যারা সম্ভাব্য ফ্যাসিবাদের দালালি করে জনগণের ভোটাধিকার হরণে সহযোগিতা করবে তাদের জন্য এ দৃশ্যে রয়েছে শিক্ষা।
এই ফেসবুক ব্যবহারকারী আরও লিখেছেন-আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অবৈধভাবে ‘জনতার মঞ্চ’-এ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার তাকে যুগ্ম-সচিব হিসেবে কর্মরত অবস্থায় ২০০১ সালে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায়। পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে অন্যান্য কর্মকর্তাসহ নুরুল হুদা ভূতাপেক্ষা পদোন্নতি পেয়ে সচিব হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। কেএম নুরুল হুদা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এছাড়াও তিনি পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব এবং সংসদ সচিবালয়ের যুগ্ম-সচিব ছিলেন।
২০১৭ সালের ১৫ ফেব্র“য়ারি এ কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করে। দ্বিতীয়বারের মতো সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে কেএম নূরুল হুদা কমিশনকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। পাঁচ বছরের মেয়াদে একাদশ সংসদ নির্বাচন, সংসদীয় আসনে উপ-নির্বাচনসহ বিভিন্ন স্তরের প্রায় পাঁচ হাজার নির্বাচন সম্পন্ন করেছে কমিশনটি।
বেশির ভাগ ভোট নিয়ে বিভিন্ন মহলে উঠেছে নানা প্রশ্ন। এমনকি সমালোচনা ছিল কমিশনের ভেতরেও। তবে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল, জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে তৃণমূলের ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারসহ আলোচিত কিছু পদক্ষেপ দেখা গেছে এ কমিশনের আমলে।
অবশ্য কমিশন দাবি করে-‘দে ডিড দেয়ার বেস্ট’। আইনের মধ্যে সর্বোচ্চটা করার চেষ্টা করেছে তারা।
প্রহসনের নির্বাচন করার অভিযোগে সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) ২৪ জনের নাম উলে­খ করে মামলার আবেদন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
সাবেক এই তিন সিইসি হলেন ২০১৪ সালের নির্বাচনের তৎকালীন সিইসি কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ, ২০১৮ সালের নির্বাচনে তৎকালীন সিইসি এ কে এম নুরুল হুদা ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।