খুলনা | বুধবার | ২৫ জুন ২০২৫ | ১১ আষাঢ় ১৪৩২

জুলাই আন্দোলনে গুম : খুলনার ২৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ অপরাধ ট্রাইব্যুনালে

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:৪২ এ.এম | ২৫ জুন ২০২৫


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক সাজিদুল ইসলাম বাপ্পীকে ১২ ঘণ্টা গুম করে রাখার ঘটনায় খুলনার সাবেক মেয়র, সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক পুলিশ কমিশনারসহ মোট ২৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সামনে, থেকে আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে ২০২৪ সালের ১৬ জুলাইতে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত তাকে গুম করা হয়েছিল বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ উলে­খ করা হয়েছে। 
মঙ্গলবার ভিকটিম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক ও খুলনা জেলা শাখার সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বাদী হয়ে এই অভিযোগ দায়ের করেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ মাসুদ রানা বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, অভিযোগটি গ্রহণ করা হয়েছে। বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন : খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল, এস এম কামাল হোসেন, বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান, সালাম মূর্শিদী, শেখ হেলাল, যুবলীগ নেতা ও শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সোহেল, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, আক্তারুজ্জামান বাবু, রাশীদুজ্জামান মোড়ল, খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. সাইফুল ইসলাম, খুলনা মহানগর যুবলীগের সভাপতি শফিকুর রহমান পলাশ, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুনুর রশীদ, খুলনা মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ শাহাজালাল সুজন, কেএমপি কমিশনার মোজাম্মেল হক, আরসি ফুডের ইকবাল বাহার চৌধুরী, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সোনালী সেন, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার গোপিনাথ কানজিলাল, ডিবির উপ-কমিশনার নুরুজ্জামান, লবণচরা থানার সাবেক ওসি মনির, এসআই হাসান, এসআই সুমন মণ্ডল, সোনাডাঙ্গা থানার সাবেক ওসি মমতাজুল ইসলাম, মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাইফ, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের এডিডি (সাবেক সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমুর সাবেক পিএস) জহিরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর ও মুজগুন্নি আবাসিক এলাকার মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে জগলুল কাদের।
অভিযোগকারীর বিবরণ : বাদী সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি অভিযোগপত্রে বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই মাসের শুরু থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে খুলনায় আন্দোলন সংগঠিত করি। ৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পাই এবং মেসবাহ উদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে অংশ নিতে রওনা হই। সোনাডাঙ্গা থানা এলাকা থেকে পূর্বঘোষিত সড়ক ও রেল অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নিতে ইজিবাইকে করে নতুন রান্তার মোড়ের দিকে যাওয়ার সময়, যুব উন্নয়ন অধিদফতরের সামনে পৌঁছালে মুখোশধারী ও সশস্ত্র আওয়ামী লীগ ক্যাডার ও পুলিশের সমন্বয়ে ১০-২৫ জন আমাদের গতিরোধ করে। আমাকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে ফেলে। আমার সঙ্গে থাকা মেসবাহ উদ্দিন ও ইজিবাইক চালক ইদ্রীসসহ কয়েকজন আমাকে রক্ষা করতে এলে দেশীয় অস্ত্র দেখিয়ে সবাইকে ভয় দেখানো হয়। এরপর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আমাকে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে মুখে কাপড় গুঁজে ফেলা হয় যাতে চিৎকার করতে না পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে একটি প্রাইভেট কারে তুলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে অন্ধকার একটি ঘরে আটকে রাখে। আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য চাপ দেয়। আমি রাজি না হলে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। এমনকি পানি চাইলে গালিগালাজ করা হয়। দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা চোখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় রাখে। এরপর আমাকে খুলনার আড়ংঘাটা বাইপাস মোড় সংলগ্ন একটি ফাঁকা বাগানে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা আমাকে উদ্ধার করে।’
এতদিন পরে অভিযোগ করা প্রসঙ্গে সাজিদুল ইসলাম বাপ্পী বলেন, ‘পর দিন মামলা করতে থানায় গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে ব্যন্ততার কারণে অভিযোগ জানানো হয়নি।’
বাপ্পি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার শাসনামলে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ দমনের নামে যারা আমাকে গুম ও নির্যাতন করেছে, তাদেরকে অনতি বিলম্বে আইনের আওতায় আনা হোক। ভবিষ্যতে যাতে আর কেউ ন্যায্য দাবিতে রাজপথে নেমে আমার মতো গুমের শিকার না হয়, তার নিশ্চয়তা চাই। 
উলে­খ্য, ঘটনার সময় অনেকের মুখে মাস্ক ছিল, অনেককে চিনতে পারিনি। কেউ কেউ সরাসরি অংশ না নিয়ে সহায়তা করেছে বলেও সন্দেহ করি। আমি তদন্ত সংস্থার কাছে অনুরোধ করছি, সকল জড়িত ব্যক্তিকে খুঁজে বের করুন। অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শান্তি চাই।’