খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২৬ জুন ২০২৫ | ১২ আষাঢ় ১৪৩২

এস আই সুকান্তকে ছেড়ে দেয়ার প্রতিবাদে উত্তাল খুলনা নগরী

তালা কেএমপি’র প্রধান ফটকে, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ, কমিশনারের অব্যাহতির দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:১৫ এ.এম | ২৬ জুন ২০২৫


ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে হামলা-গণগ্রেফতার ও সীমাহীন নির্যাতনকারী এবং মহানগর বিএনপি’র সভাপতি এড. শফিকুল আলম মনার বাড়িতে ভাঙচুরসহ চারটি মামলার আসামি এস আই সুকান্ত দাসকে পুলিশী হেফাজত থেকে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগে উত্তাল খুলনা মহানগরী। গতকাল বুধবার দুপুর ২টা থেকে রাত পর্যন্ত কেএমপির সদর দপ্তর ঘেরাও ছাড়াও প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। ফলে কেএমপির উর্ধ্বতনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত তারা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। 
আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে কেএমপি কমিশনারকে অপসারণ, অবিলম্বে অভিযুক্ত এসআই সুকান্ত কুমার দাসকে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি বিক্ষুব্ধদের। ফলে নগরীর খানজাহান আলী সড়কের রূপসা ট্রাফিক মোড় থেকে টুটপাড়া কারখানার পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।
নগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় কর্মরত থাকা অবস্থায় এসআই সুকান্ত দাশ গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে চাকুরিতে যোগদান না করে পলাতক ছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
এর আগে, মঙ্গলবার বিকেলে খানজাহান আলী থানা এলাকা থেকে স্থানীয়রা মারধর করে উপ-পরিদর্শক সুকান্ত কুমার দাসকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। তিনি বর্তমানে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থানায় কর্মরত। আদালতে একটি মামলার সাক্ষী দিতে খুলনায় এসেছিলেন তিনি। তার নামে খুলনা সদর থানায় ছাত্র-জনতার উপর হামলার ঘটনায় গত ১২ ডিসেম্বর মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি বর্তমানে ডিবিতে তদন্তাধীন। এছাড়া বিএনপি’র নগর সভাপতি শফিকুল আলম মনার বাড়ি ভাঙচুরসহ অন্তত চারটি মামলা চলমান রয়েছে।
খানজাহান আলী থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কবির হোসেন বলেন, বুধবার এস আই সুকান্ত আদালতে সাক্ষী দিয়ে বাইকযোগে কর্মস্থলে ফিরছিলেন। এ সময় শিরোমণি এলাকায় পৌঁছালে স্থানীয়রা তাকে মারধর করে। এ সময় পুলিশ ও স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে। পরবর্তীতে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তিনি চলে যান। তার বিরুদ্ধে খানজাহান আলী থানায় কোন অভিযোগ নেই।
জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য ও খুলনা মহানগর সিনিয়র মুখপাত্র রুমি রহমান বলেন, এসআই সুকান্তকে ছেড়ে দেয়ার প্রতিবাদে আমরা বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমরা পুলিশ কমিশনার মোঃ জুলফিকার আলী হায়দারের অপসারণ দাবিতে অবস্থান করছি। তিনি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চলবে। 
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনার যুগ্ম-আহবায়ক শামসুন্নাহার নিশি বলেন, দেশজুড়ে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থান চলাকালে এসআই সুকান্ত দাসসহ অতিউৎসাহী কতিপয় পুলিশ সদস্য আমাদের সীমাহীন নির্যাতন করেছিল। নিরীহ-নিরাপরাধ শিক্ষার্থীদের গণগ্রেফতার করেছিল, সে জন্য তৎকালীন কেএমপি কমিশনার তাকে পুরস্কৃত করেছিল। ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নির্যাতন, হামলার ঘটনায় অন্তত চারটি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার বিকালে স্থানীয় ছাত্র-জনতা তাকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছিলেন। কেন তাকে ছেড়ে দিলেন কেএমপি কমিশনার? তাহলে কি নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার। আমরা তার অপসারণ না করা পর্যন্ত খুলনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা মহানগর শাখার সদস্য সচিব মোঃ জহিরুল তানভীর বলেন, একাধিক মামলা থাকা সত্তে¡ও একজন আসামিকে পুলিশ কেন ছেড়ে দিলো; সেই জবাব আমরা পাইনি। মামলা থাকা সত্তে¡ও স্বৈরাচারের দোসরদের থানা থেকে ছেড়ে দেয়া ছাত্র-জনতার রক্তের সঙ্গে বেঈমানি। সুকান্তকে পুনরায় গ্রেফতার এবং কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারকে অপসারণ না করা পর্যন্ত বিক্ষোভ চলবে।
শিক্ষার্থী তসলিম হোসেন বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল ছাত্রদের ওপর হামলাকারী ও একাধিক মামলার আসামি এসআই সুকান্তকে বিচারের আওতায় আনা হবে। কিন্তু তা না করে তাকে ছেড়ে দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। পুলিশ কমিশনারের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান চলবে।
এদিকে পুলিশ কমিশনারের অবরুদ্ধ থাকার বিষয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ- কমিশনার মোঃ শাহনেওয়াজ খালেদী বলেন, ‘স্যার অফিস করছেন। পরিস্থিতি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি।’ 
কেএমপির আরেক উপ-কমিশনার সাকিলুজ্জামান বলেন, আমরা আইনগত ভাবে বিষয়টি দেখছি। 
এদিকে জানতে চাইলে কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, এসআই সুকান্তসহ সারাদেশে অনেক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত চলছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্তে অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করা হবে। তাছাড়া সুকান্ত নজরদারীর বাইরে নয়। তিনি বলেন, সারাদেশে পুলিশ এমনিতেই আতঙ্কে রয়েছে। এভাবে করলে তো চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়বে। 
পদত্যাগ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার পদত্যাগের কারণে যদি সমস্যার সমাধন হয়, তাহলে আমি পদত্যাগ করতে রাজী আছি।