খুলনা | শনিবার | ২৮ জুন ২০২৫ | ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

পিবিআইকে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ

খুলনায় শেখ হাসিনাসহ ১৮৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০২:০৫ এ.এম | ২৭ জুন ২০২৫


খুলনায় বিএনপি’র কর্মীসভা পন্ড এবং নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগে পতিত সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৫৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৩০জন নিয়ে মোট ১৮৬ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছেন মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন। বৃহস্পতিবার খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে এ মামলার আবেদনটি করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় তার আইনজীবী সৈয়দ শামীম হাসান আরজিটি পেশ করেন। আদালতের বিচারক শরীফ মোঃ হায়দার আরজিটি আমলে নিয়ে পিবিআই-এর এসপির নিম্নে নয় এমন কর্মকর্তাকে মামলার তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন ৬০ দিনের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন।   
এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ৪ চাচাতো ভাই, ৯ জন পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, ১০৪ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী, ২৬ জন সাবেক কাউন্সিলর, ১০ জন আইনজীবী ও ৭ জন সাংবাদিকসহ ১৫৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। 
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ শামীম হাসান বলেন, মামলায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইন, হত্যাচেষ্টাসহ ১০টি ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার আবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের ১৯ মে খুলনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বিএনপি’র উদ্যোগে কর্মিসভা চলছিল। এতে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলালসহ দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পুলিশ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সশস্ত্র অবস্থায় সেখানে হামলা চালান। বল প্রয়োগে সভা বন্ধ করে দেওয়া হয়। নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে গুলিবিদ্ধ ও স্পি­ন্টারের আঘাতে বিএনপি’র ৫০ নেতা-কর্মী আহত হন। শেখ হাসিনাকে হামলার নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। খুলনা থানার তৎকালীন ওসি হাসান আল মামুন, তৎকালীন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সোনালী সেন, সহকারি পুলিশ কমিশনার গোপীনাথ কাঞ্জিলাল, এডিশনাল ডিআইজি জয়দেব চৌধুরী, নগর ডিবির তৎকালীন উপ-পুলিশ কমিশনার বিএম নুরুজ্জামান, এস আই সুকান্ত, এএসআই আবু সুফিয়ান মোল্লা, এসআই সোবাহান মোল্লা, শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই ও সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল, শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সোহেল, শেখ রুবেল, শেখ বাবু, সাবেক সংসদ সদস্য এস এম কামাল হোসেন, সাবেক সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, আওয়ামী লীগ নেতা এস এম বাবুল রানা, মোঃ সাইফুল ইসলাম, সুজিত অধিকারী, এড. তারিক মাহমুদ তারা, সরদার আনিছুর রহমান পপলু, সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস, যুবলীগ নেতা শফিকুর রহমান পলাশ, শেখ শাহজালাল সুজন, চৌধুরী রায়হান ফরিদ, আওয়ামী লীগ নেতা কামরুজ্জামান জামাল, নগর ছাত্রলীগ নেতা আসাদুজ্জামান রাসেল, এড. কে এম ইকবাল হোসেন, আনিস বিশ্বাস, আজগর বিশ^াস তারা, কাজী আমিনুল হক আমিন, কাজী ফয়েজ মাহমুদ, সানাউল্লাহ নান্নু, মোঃ অহিদুল ইসলাম, মুন্সী মাহাবুবুল আলম সোহাগ, দেব দুলাল বাড়ই বাপ্পী, রনবীর বাড়ই সজল, সুলতান মাহমুদ পিন্টু, রাশেদুল ইসলাম রাশেদ, মোঃ দেলোয়ার হোসেন বিশ্বাস, শাহাদাত হোসেন মিনা, এস এম মনিরুজ্জামান মুকুল, মঞ্জুর মোর্শেদ, শেখ মোহাম্মদ আলী, শেখ শামসুদ্দিন আহম্মেদ প্রিন্স, মুন্সি নাহিদুজ্জামান, মোঃ সাহিদুর রহমান, এম ডি মাহফুজুর রহমান লিটন, মোঃ শরিফুল ইসলাম প্রিন্স, মোঃ নাইমুল ইসলাম খালেদ, মোঃ আমিনুল ইসলাম মুন্না, এস এম মোর্শেদ আহমেদ মনি, খুরশিদ আহমেদ টোনা, এস এম ফারুক আহমেদ, শেখ মফিজুর রহমান পলাশ, শেখ হাসান ইফতেখার চালু, বাপ্পী, কাজী আবুল কালাম আজাদ বিকু, শেখ সাহিদুল ইসলাম সাঈদ, রাজু মৃধা, রুবেল মৃধা, মোঃ জিয়াউল আহসান টিটো, ফকির মোঃ সাইফুল ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম টুলু, মোঃ আরিফ হোসেন মিঠু, মোঃ শহিদুল ইসলাম, তসলিম আহমেদ আসা, মোস্তফা চৌধুরী নজর, এ এস এম মনিরুজ্জামান খান, রেক্সোনা কালাম লিলি, কাজী তালাত হোসেন কাউট, কাজী ইয়াসির আরাফাত হোসেন হোয়াইট, মোঃ আশরাফুল ইসলাম, এস এম রাজুল হাসান রাজু, মোঃ শফিউল্লাহ, শেখ আসলাম আলী, সমির দত্ত, মুন্সী নাজমুল আলম নাজু, তত্তি ধর, মিয়া জনি মিয়া, মোঃ রিয়াজ উদ্দিন ভূঁইয়া, মোঃ ইস্তিয়াক আলম লিয়ন, সাইদুর রহমান, গোপাল চন্দ্র সাহা, মোঃ রফিকুল ইসলাম পিটু, মোঃ আলী আকবর টিপু, জেড এ মাহমুদ ডন, রফিকুল ইসলাম রঞ্জু, জিয়াউর রহমান জিয়া, রনজিৎ ঘোষ, বাহাউদ্দিন খন্দকার, মোঃ ফারুক আহম্মদ, মোহাম্মদ আলী, শামীমা সুলতানা সীমা, শেখ মনিরুল ইসলাম, ফারজানা ফেরদৌস নিশা, নবিরুল ইসলাম রাজা, শেখ ফজলুল হক, বেগ আঃ রাজ্জাক, সৈয়দ কেসমত আলী, শামিম শেখ, শেখ ইকবাল হোসেন, শেখ আকরাম হোসেন, সাজ্জাদুর রহমান লিংকন, শেখ আবিদ হোসেন, রেজওয়ান রাজা, রজব আলী সরদার, আইয়ুব আলী শেখ, জেসমিন পারভিন জলি, জাহিদুল ইসলাম, শাওলিন পারভেজ শুভ, নবকুমার চক্রবর্তী, পবিত্র কুমার সরকার, মোহাম্মদ তহিদুল মোল্লা, মোঃ সেলিম রেজা, শেখ শওকত হোসেন, রিপন, সাইফুল ইসলাম,  সামছুজ্জামান মিয়া স্বপন, হাফেজ মোঃ শামীম ওরফে হাফেজ শামীম, চৌধুরী মিনহাজ-উজ-জামান সজল, ফয়জুর রহমান টিটো, মোস্তফা ভুট্টো, কামাল হোসেন আজাদ, কাজী কামাল, শেখ জাকির, রাকিব, ওহিদুজ্জামান মিন্টু, মোঃ মনিরুজ্জামান ওরফে মনির মাস্টার, লিটন ঢালী, তাপস, হায়দার মোল্লা, সাংবাদিক মুন্সী মাহাবুবুল আলম সোহাগ, সাংবাদিক মকবুল হোসেন মিন্টু, সাংবাদিক আসাদুজ্জামান খান রিয়াজ, সাংবাদিক সাহেব আলী, সাংবাদিক সুনিল দাস, সাংবাদিক সাঈদুজ্জামান সম্রাট ও সাংবাদিক ফরিদ রানা, মোঃ মোজাফ্ফার হোসেন, আব্দুর রশিদ, মোঃ তৌহিদুল ইসলাম আজাদ, সৈয়দ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ, লুৎফর রহমান, নাঈম হোসেন, হোসেনুজ্জামান হোসেন, ইকবাল হোসেন বাদল, শফিকুল ইসলাম, খন্দকার মজিবর রহমান, শফিউল আলম সুজন, শাওলিন শুভ, জাহিদুল ইসলাম, রশিদ গাজী, আবুল বাশার মোল্লা ভাসানী, গোলাম মোস্তফা ওরফে টেরা মোস্ত, বেগ লিয়াকত আলী, শেখ হুমায়ুনসহ  অজ্ঞাতনামা ২০/৩০ জন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৯ মে খুলনা প্রেসক্লাবে বিকেল ৪টায়  সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপি’র কর্মীসভা চলছিল। উক্ত কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলালসহ খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীবৃন্দ। উল্লেখিত  প্রোগ্রামের বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ফলাও ভাবে প্রচার হওয়ায় বিএনপি’র জাতীয় নেতৃবৃন্দ যাহাতে কোনক্রমে খুলনায় সফলভাবে অনুষ্ঠানটি করতে না পারে সেজন্য তদানিন্তন প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নির্দেশে ও তার আপন ৪ চাচাতো ভাই এবং আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় কিছু বিপথগামী পুলিশসদস্যকে অবৈধ ও বেআইনী বল প্রয়োগ করে সভাটি পন্ড ও কর্মীদের হতাহত করার জন্য অবৈধ নির্দেশের মাধ্যমে প্ররোচিত করেন। বিকেল সাড়ে ৪টায় ওসি হাসান আল মামুন, আবু সুফিয়ানসহ অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জন পুলিশ ও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ১৫/২০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে সভাকক্ষে এসে ব্যানার টেনে ছিঁড়ে ফেলে এবং অডিটোরিয়ামের বাইরে দন্ডায়মান নেতা-কর্মীদের হত্যার উদ্দেশ্যে পরপর ৫/৬টি বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে প্রেসক্লাব ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। একই সাথে অপেক্ষমান নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে ওসি মামুন একজন কনস্টেবলের হাত থেকে শর্টগান কেড়ে নিয়ে নিরস্ত্র নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য করে গুলি করে এবং ছাত্রলীগ ও যুবলীগের হেলমেট পরিহিত সন্ত্রাসীরা হকিস্টিক, লাঠি ও লোহার রড দিয়ে নেতা-কর্মীদের এলোপাতাড়ি পিটিয়ে যখম করে। আতঙ্কিত নেতা-কর্মীরা ছোটাছুটি করে প্রেসক্লাবের দেওয়ালের এক কোনায় আটকে পড়ে। তখন তাদেরকে লক্ষ্য করে এসআই সুজিত মিস্ত্রী এএসআই আবু সুফিয়ান শর্টগানের গুলি করে যাতে মহানগর বিএনপি’র সদস্য ফারুক হোসেন হিল্টনসহ ২/৩ জন নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়। ওসি মামুন ও এ এস আই আবু সুফিয়ানসহ ৪/৫ জন পুলিশ সদস্য আটকেপড়া নেতাকর্মীদের বেধড়ক লাঠিপেটা করে যাহাতে বাদী পক্ষের জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারন সম্পাদক স্বাক্ষী আতাউর রহমান রুনু, বিএনপি’র জাহিদুর রহমান রিপন, যুবদলের গাজী সালাউদ্দিন, শ্রমিক দলের সেকেন্দারসহ অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হয়।  তারা সভাস্থলে ঢুকে পুনরায় ব্যাপক ভাঙচুর করে ৫ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করে। ওসি মামুনের নির্দেশে তার সাথে থাকা অতি উৎসাহী পুলিশ সদস্যরা ৪০/৫০ রাউন্ড টিয়ারশেল সরাসরি নেতা-কর্মীদের শরীর লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করে যাতে অসংখ্য নেতা-কর্মী আহত হয়। 
মামলার আরজিতে আরও বলা হয় আসামিরা অবৈধ অর্থ ও অস্ত্র ও বিস্ফোরক ব্যবহার করে বিগত হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে চলমান বিএনপিসহ ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন করার জন্য পতিত আওয়ামী সরকারের সকল অপকর্মের দোসর হিসেবে খুলনা শহরের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে হামলা চালিয়েছে। তারা খুলনায় আওয়ামী লীগের সকল অপকর্মের কুপরামর্শ ও অর্থ যোগানদাতা। সাংবাদিক মিন্টু, মাহবুবুল আলম সোহাগ, সাহেব আলী, রিয়াজ, সুনিল দাশ, সম্রাট, ফরিদ রানা খুলনা শহরে হলুদ সাংবাদিকতার নামে পতিত হাসিনা সরকারকে সমর্থন ও দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ধ্বংস করাসহ বিভিন্ন ধরনের বেআইনি অপকর্মে জড়িত ছিল। তাদের বেআইনি কর্মকান্ডে বিএনপি’র সমাবেশটি পন্ড হয়ে যায় এবং গুলি ও বোমার স্পি­ন্টারে সর্বমোট ৫০/৬০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়। ঐদিন পুলিশ অযথা অর্ধশতাধিক রাউন্ড টিয়ারশেল ও ৬০/৭০ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছোঁড়ে এবং অন্যায় ভাবে ৯ জন নেতা-কর্মীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় এবং মিথ্যা বর্ননা দিয়ে তাদের নামে খুলনা থানার মামলা নং- ১৯(৫)২৫ দায়ের করা হয়। এ ঘটনায় খুলনা মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন বাদী হয়ে খুলনার সিনিয়র মহানগর স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে আরজি পেশ করেছেন।