খুলনা | শুক্রবার | ২৭ জুন ২০২৫ | ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

২৫ কোটি ঋণের ২০ কোটি আত্মসাৎ : মামলায় ফাঁসছেন শিল্পপতি-ব্যাংকারসহ ২৫ জন

খবর প্রতিবেদন |
০২:১৬ এ.এম | ২৭ জুন ২০২৫


ব্যাংকার ও ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে ২৫ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন ও আত্মসাতের ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক, যা বর্তমানে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক নামে পরিচালিত হচ্ছে। গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যাচাই, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গোডাউন পরিদর্শন ছাড়াই এ ঋণ অনুমোদনের পেছনে অসৎ উদ্দেশ্য, প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ায় ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের অনুমোদন দিয়েছে দুদক।
অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সাদ মুসা গ্র“পের কর্তধার মোহাম্মদ মোহসিন, যিনি একইসঙ্গে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের সাবেক পরিচালক এবং মাহমুদ সাজিদ কটন মিলস্ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। একই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শামীমা নারগিস চৌধুরী এবং এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরীসহ ব্যাংকটির উচ্চপর্যায়ের একাধিক সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাও মামলার আসামি। 
তদন্ত অনুযায়ী, ২৫ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদনের মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় সংশ্লিষ্টরা পরস্পর যোগসাজশে এই অর্থের অপব্যবহার করেন। কোনো জামানত গ্রহণ ছাড়াই, যথাযথ যাচাই-বাছাই ও নিয়ম অনুসরণ না করে এই ঋণ প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে ঋণের অর্থ প্রকৃত উদ্দেশ্যে ব্যবহার না করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে লেয়ারিং করে আত্মসাৎ করা হয় মোট ২০ কোটি ৫২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। মূলত ঋণগ্রহীতাদের অন্য ঋণ সমন্বয় এবং অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমেই অর্থের অবস্থান গোপন করে ফেলা হয় বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে। 
মামলায় দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০ ও ১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২)(৩) ধারা যুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরেও এসেছে এবং তদন্তের পরিধি আরও বিস্তৃত হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 
আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার, যিনি ইতোমধ্যেই বিভিন্ন আর্থিক কেলেঙ্কারিতে দেশ-বিদেশে আলোচিত। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির একাধিক সাবেক পরিচালক ও কর্মকর্তা, যেমন বেলাল আহমেদ, গোলাম মোহাম্মদ, ড. মোহাম্মদ ফারুক, আরিফ আহমেদ, ওসমান গণি, মিসেস মায়মুনা খানম, মিসেস সরোয়ার জাহান মালেক, মোহাম্মদ মোস্তান বিল­াহ আদিল, মিসেস শাহানা ফেরদৌস, সাজেদা নূর বেগম, বোরহানুল হাসান চৌধুরী, মোহাম্মদ কুতুবউদ্দৌলা, এস এ এম সলিমউল­াহদের নাম রয়েছে। 
ক্রেডিট ডিভিশনের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ গোলাম সারওয়ার, এসভিপি ও হেড অব ক্রেডিট মোহাম্মদ মাহমুদ আলম এবং ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর কাজী মশিউর রহমান জাহেদও মামলার আসামি। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখার কর্মকর্তা মোঃ শামসুল আলম, মুন্নশ্রী চক্রবর্তী, মোঃ হাসান আলী, রিফাত ইফতেখারুল আলম এবং মোঃ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধেও গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মামলাটি এখন তদন্তাধীন। প্রয়োজনে অভিযুক্তদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা, সম্পদ জব্দসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।