খুলনা | শনিবার | ২৮ জুন ২০২৫ | ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

কলকাতার ল’ কলেজে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ, গ্রেফতার ৩

আমাকে ধর্ষণের সময় পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিল দুই যুবক : ধর্ষণের শিকার তরুণী

খবর প্রতিবেদন |
০১:৪৩ এ.এম | ২৮ জুন ২০২৫


কলকাতার সাউথ কলকাতা ল’ কলেজ ক্যাম্পাসে ২৪ বছর বয়সী এক আইনের ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজ্যজুড়ে। মামলার এজাহার অনুযায়ী, গত বুধবার (২৫ জুন) রাতে কলেজ প্রাঙ্গণের গার্ডরুমে তিন যুবক মিলে তাঁকে ধর্ষণ করেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম একজন কলেজের তৃণমূলের ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে। কলকাতাবাসী আর জি কর মেডিকেল কলেজে এক তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি ভুলতে না ভুলতেই আবারও ঘটলো এমন ঘটনা।
পুলিশের কাছে করা অভিযোগে ছাত্রীটি জানিয়েছেন, গত বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) বৈঠক শেষে ‘জে’, ‘এম’ ও ‘পি’ নামের তিন ব্যক্তি তাঁকে ঘিরে ধরেন। এরপর ‘এম’ ও ‘পি’ তাঁকে একটি কক্ষে আটকে রেখে ‘জে’র সঙ্গে একা করে দেন। ছাত্রীটি বারবার অনুনয়-বিনয় করেও নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি।
তিনি লিখেছেন, ‘আমি কাঁদছিলাম, বলছিলাম ছেড়ে দাও, আমি রিলেশনশিপে আছি... আমি পা ছুঁয়ে বলেছি, কিন্তু তবুও ছাড়েনি।’
ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী বলেন, ‘ধর্ষণের সময় শ্বাসকষ্ট শুরু হলে আমি ইনহেলার চাই। তখন ‘‘জে’’ অপর দুই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ডাক দিলে একজন ইনহেলার এনে দেয়। ইনহেলার নেওয়ার পর পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি, কিন্তু তখন আবার আমাকে ধরে ফেলে তারা।’ এরপর তাঁকে গার্ডরুমে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে নিরাপত্তারক্ষীকে জোর করে বের করে দেওয়া হয়েছিল।
ওই তরুণী মামলার এজাহারে আরও বলেন, ‘গার্ডরুমে নিয়ে গিয়ে ‘‘জে’’ আমাকে ধর্ষণ শুরু করে। আমি বাধা দিলে সে ব্ল্যাকমেল করে। পরিবার ও প্রেমিককে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। ধর্ষণের সময় ‘‘এম’’ ও ‘‘পি’’ পাশেই চুপ করে দাঁড়িয়ে দেখছিল। এমনকি একটি হকিস্টিক দিয়ে আমার মাথায় আঘাতও করা হয়।’
মুখ না খুলতে নানা হুমকি দিয়ে রাত ১০টা ৫০ মিনিটে তরুণীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘আজ আমি সাহস পেয়েছি...। আমি একজন আইনের ছাত্রী, আজ আমি নিজেই ভুক্তভোগী। আমি চাই ন্যায়বিচার হোক, দ্রুত হোক।’
এ ঘটনার পর রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বিজেপি অভিযোগ করেছে, প্রধান অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা এবং রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তাঁকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে। এমনকি মনোজিতের তৃণমূল সংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একাধিক ছবিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে।
তবে তৃণমূল কংগ্রেস প্রথম প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে দলের ছাত্রসংগঠনের যোগাযোগ থাকলেও তাঁকে কোনোভাবেই রক্ষা করা হবে না। দল জানিয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি যেন কঠিন শাস্তি পান, তা নিশ্চিত করা হবে।
ধর্ষণের অভিযোগ, গ্রেফতার ৩ : ভারতের দক্ষিণ কলকাতার সরকারি ল’ কলেজ ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীকে (২৪) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে তিনজনকে। এ ঘটনায় ইতিমধ্যেই শহর জুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
পুলিশ জানায়, গত বুধবার (২৫ জুন) বিকেল ৪টার দিকে ওই ছাত্রী কলেজে ফরম ফিলাপের কাজে গেলে অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র (৩১) নামের এক প্রাক্তন ছাত্র ও কলেজ কর্মচারী তাঁকে অপেক্ষা করতে বলেন। সন্ধ্যা নামার পর ছাত্রীটি যখন বের হওয়ার চেষ্টা করেন, তখন তাঁকে ইউনিয়ন রুমসংলগ্ন একটি ঘরে ডেকে নিয়ে কুপ্রস্তাব ও বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় তাঁকে জোরপূর্বক বাথরুমের পাশে একটি ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আগে থেকে উপস্থিত ছিল অভিযুক্ত অপর দুই ছাত্র জইব আহমেদ (১৯) ও প্রমিত মুখার্জি (২০)। বাইরে থেকে দরজা আটকে তাঁরা ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেন। অভিযোগ অনুযায়ী, এই ঘটনা চলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১০টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত।
নির্যাতনের সময় ছাত্রীটির ভিডিও ধারণ করেন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। তাঁরা হুমকি দেন, বিষয়টি কাউকে জানালে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এরপর কোনো রকমে বাড়ি ফিরে ছাত্রীটি পরদিন বৃহস্পতিবার কসব থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
পরে পুলিশ দ্রুত অভিযান চালিয়ে মনোজিৎ ও জইবকে তালবাগান এলাকা থেকে এবং প্রমিতকে রাত ১২টার দিকে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। এ সময় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মোবাইল ফোনও জব্দ করা হয়।
এদিকে মনোজিৎ মিশ্রের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এ্যাকাউন্টে লেখা আছে, তিনি একই কলেজের তৃণমূল কংগ্রেসের যুব শাখার (ছাত্র সংগঠনের) সাবেক সভাপতি। যদিও তৃণমূল কংগ্রেস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, অভিযুক্ত মনোজিৎ আগে সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে তাঁর কোনো পদ নেই। দল তাঁর বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি ত্রিনঙ্কুর ভট্টাচার্য বলেন, ‘দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোরতম শাস্তি চাই। অভিযুক্তের সংগঠনের সঙ্গে অতীতে সম্পৃক্ততা থাকলেও বর্তমানে সে কোনো পদে নেই।’
এদিকে বিরোধী দল বিজেপি কড়া সমালোচনা করে বলে, ‘গত বছর আর জি কর মেডিকেল কলেজে এক তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটেছিল। এই রাজ্যে নারীদের কোনো নিরাপত্তা নেই। মুখ্যমন্ত্রী এটিকে ছোট ঘটনা বলে উড়িয়ে দেবেন এবং কিছু টাকা ক্ষতিপূরণ দেবেন।’
এই ঘটনার দায় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত, এমন মন্তব্য করেন বিরোধীদলীয় বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী।
এদিকে ন্যাশনাল কমিশন ফর উইমেন (এনসিডব্লিউ) কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মার কাছে তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন চেয়েছে।
অপর দিকে মনোজিৎ মিশ্রের আইনজীবী আজম খান জানান, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। রাজনৈতিক শত্র“তার কারণেই তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে। এ ঘটনায় আবারও রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এখনো আর জি কর মেডিকেল কলেজের সেই মর্মান্তিক ঘটনার ক্ষত শুকায়নি, এর মধ্যেই ফের সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে উত্তপ্ত শহর।