খুলনা | শনিবার | ২৮ জুন ২০২৫ | ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

শিক্ষা, দক্ষতা, নেতৃত্ব ও ভবিষ্যৎ নির্মাণে খুলনা খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রফেসর ড. মোঃ মাহমুদ আলম |
০১:৫১ এ.এম | ২৮ জুন ২০২৫


বর্তমান বিশ্বের প্রতিযোগিতামূলক ও দ্রæত পরিবর্তনশীল বাস্তবতায় আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে দক্ষ, উদ্ভাবনী ও নেতৃত্বদানে সক্ষম মানবসম্পদ। এই প্রয়োজন পূরণে সুদূরদর্শী লক্ষ্য ও শিক্ষাদর্শ নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে খুলনা খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। এটি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে উচ্চশিক্ষার মানচিত্রে দ্রæতই একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিচ্ছে। 
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীতে ২০২২ সালের জুন মাসে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পাঠদানের অনুমোদন পাওয়ার পর ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করে খুলনা খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। এর সূচনা ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, যেখানে শিক্ষার মান, প্রাসঙ্গিকতা এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
খুলনা খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য হলো আধুনিক বিশ্বের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের তৈরি করা যাতে তারা জ্ঞানে, দক্ষতায় ও দৃষ্টিভঙ্গিতে হয় সৃজনশীল, প্রতিযোগিতামূলক ও নেতৃত্বদানে সক্ষম। শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যা নয়, বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের সমস্যাগুলো সমাধানে পারদর্শী করে তুলতে চায়। এই লক্ষে, বিশ্ববিদ্যালয়টি বিজ্ঞানের পাশাপাশি প্রযুক্তি, ব্যবসায়, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাহিদাভিত্তিক প্রোগ্রাম চালু করেছে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করছে না, বরং চাকরির বাজারে সাফল্যের জন্যও প্রস্তুত হচ্ছে।
খুলনা খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যগুলো বাস্তবভিত্তিক এবং সুপরিকল্পিত। এটি শিক্ষার কাঠামো এমনভাবে তৈরি করছে যাতে তা বাজারের চাহিদা ও সময়ের প্রয়োজনে দ্রæত খাপ খাইয়ে নিতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারে চাহিদাসমূহ মনোযোগ সহকারে বিশ্লেষণ করে এবং সেই অনুযায়ী আউটকাম বেইজড কারিকুলাম (ওবিই) প্রণয়ন ও আপডেট করেছে। 
এছাড়া, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর বিধি মেনে খুলনা খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ধাপে ধাপে একাডেমিক বিভাগ ও প্রোগ্রাম স¤প্রসারণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। পাশাপাশি, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গবেষণা ও শিক্ষায় অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার বিনিময় ঘটানো হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি এমন একটি চিন্তাশীল ও উদ্দীপনাময় একাডেমিক পরিবেশ গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর, যেখানে বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষ সাধন ও সামাজিক দায়িত্ববোধের চর্চা সমানভাবে গুরুত্ব পায়।
একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গুণগত মান নির্ধারণে শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি শিক্ষার পরিবেশ ও সহায়ক অবকাঠামো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দিক থেকে খুলনা খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য একে অনন্য করে তুলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি রাজনীতিমুক্ত, সেশনজ্যাম মুক্ত ও ছাত্রবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করেছে যা বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। শিক্ষার্থীদের জন্য আরও আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর ও মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে নতুন ঠিকানা ১৪৫ ও ১৪৫ (ক), এম এ বারী রোড, খুলনায় স্থানান্তরের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই্ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে স¤প্রীতি, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মনোভাব গড়ে তোলা হয়, যা একটি ইতিবাচক শিক্ষাজীবনের ভিত্তি। 
শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও বহুমুখী সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষে নিয়মিত সহপাঠক্রমিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। খুলনা খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলী, আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব, উন্নত গ্রন্থাগার, হাইস্পিড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম এবং পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে ওয়াই-ফাই যা একবিংশ শতাব্দীর শিক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টি চারটি অনুষদের অধীনে পাঁচটি বিভাগে পাঠদান চলছে। বিভাগগুলো হলো কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, ইংরেজি বিভাগ ও তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগ। প্রতিটি বিভাগ পরিচালিত হচ্ছে অভিজ্ঞ ও গবেষণামুখী শিক্ষকমণ্ডলীর তত্ত¡াবধানে, যারা শিক্ষার্থীদের শুধু শিক্ষাদান করেন না, তাদেরকে জ্ঞানে, নৈতিকতায় ও আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান করে গড়ে তুলছেন।
যদিও খুলনা খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এখনো বিকাশমান পর্যায়ে রয়েছে, তবু অল্প সময়েই এটি প্রমাণ করেছে যে, গুণগত শিক্ষা, বাস্তবভিত্তিক পাঠ্যক্রম ও শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ-এর মাধ্যমে একটি বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। দূরদর্শী পরিকল্পনা, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষা এবং সর্বোপরি ছাত্র কল্যাণে প্রতিশ্র“তি খুলনা খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা খাতে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতীক হিসেবে গড়ে তুলছে। 
বাংলাদেশ যখন একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের পথে এগিয়ে চলেছে, তখন খুলনা খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোই হবে সেই অভিযাত্রার চালিকাশক্তি, যারা তৈরি করবে সত্যানিষ্ঠ, দক্ষ ও দূরদর্শী নাগরিক, যারা কেবল চাকরি পাবে না, বরং সমাজে পরিবর্তনের অগ্রদূত হয়ে উঠবে।
লেখক : প্রফেসর ড. মোঃ মাহমুদ আলম, উপাচার্য, খুলনা খানবাহাদুর আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা।