খুলনা | রবিবার | ২৯ জুন ২০২৫ | ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

‘প্রতিদিন ২,৫০০ কোটি টাকার আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে’

এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ কাম্য নয়, দেশের স্বার্থে আলোচনায় বসার আহবান শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের

খবর প্রতিবেদন |
০১:২৭ এ.এম | ২৯ জুন ২০২৫


জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের আন্দোলনের কারণে প্রতিদিন ২,৫০০ কোটি টাকার আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে উলে­খ করে চলমান অচলাবস্থা নিরসনে শনিবারের মধ্যে আলোচনা করে এর সমাধান চেয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। 
এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে আন্দোলন করে আসছেন তা সমর্থন করেন না বলে জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলছেন, চেয়ারম্যানকে অপসারণ কোনোভাবে কাম্য নয়। কারণ, আজ চেয়ারম্যান কাল হয়তো সংস্থার অন্য কোনো সদস্যের অপসারণের দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু হবে। ফলে সমস্যা বাড়তে থাকবে। উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধানে মঙ্গলবার নয়, আজই (শনিবার) সরকারকে আলোচনায় বসার আহŸান জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। 
শনিবার দুপুরে এনবিআরের বর্তমান অচলাবস্থার প্রভাব তুলে ধরতে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জরুরি যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ, ডিসিসিআই, এমসিসিআই, বিসিআই, আইসিসি বাংলাদেশসহ দেশের ১৩টি শীর্ষ বাণিজ্যিক সংগঠনগুলো। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোর সাবেক ও বর্তমান শীর্ষ নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী (পারভেজ)। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্স ইন বাংলাদেশের (আইসিসিবি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান, বিজিএমইএ’র সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, লেদারগুডস এ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি কামরান টি রহমান, সিরামিক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিসিএমইএ’র সভাপতি মঈনুল ইসলাম, বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, মেট্রো চেম্বারের সহ-সভাপতি ও ট্রান্সকম গ্র“পের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিমিন রহমান, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এনবিআরের চেয়ারম্যানের অপসারণ কোনো মতেই কাম্য নয়। এতে কোনো প্রকার সফলতা নিয়ে আসবে বলে আমরা মনে করি না। তাই, দেশ ও ব্যবসার স্বার্থে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে। আন্দোলনকারীসহ সব পক্ষের আলোচনায় বিদ্যমান সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে।
কমপ্লিট শাটডাউনের কারণে প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ আমদানি ও রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে উলে­খ করে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, চলমান স্থানীয় এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক নানা পরিস্থিতিতে চাপে থাকা ব্যবসায়ীরা নতুন করে এনবিআরের অচলাবস্থার কারণে আরও সমস্যায় পড়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় এ ধরনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসা উচিত। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীরা বলেন, সব অফিসার যে অসৎ তা-ও নয়, তাদেরও ভবিষ্যৎ আছে, সেই বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে সরকারকে।
এই আন্দোলনের কারণে ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে-এমন উদ্বেগের কথা জানিয়ে তারা বলেন, এই অবস্থায় ব্যবসায়ীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। কালক্ষেপণ না করে আজকের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নেতৃত্বে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথোরিটি (বিডা) যৌথভাবে আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা জরুরি। তাদের ভবিষ্যৎ ন্যায়সঙ্গত সুরক্ষা ও দেশের অর্থনীতি যাতে আর ক্ষতিগ্রস্ত না হয়; সেই পদক্ষেপও গ্রহণ করতে হবে। 
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান জানান, এনবিআরের অচলাবস্থায় দৈনিক আড়াই হাজার থেকে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ক্ষতির মুখে পড়ছে। তুলনামূলক ছোট কারখানা বন্ধ হয়ে পড়ার শঙ্কায় আছে।
সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে আইসিসিবির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, যে কোনো দেশের সরকারের সঙ্গে বেসরকারি খাতের ইন্টারেকশন মিথস্ক্রিয়া অতীব জরুরি। কিন্তু বর্তমান অন্তর্র্বর্তী সরকারের সঙ্গে এই যোগাযোগ বা সংলাপ অনেকটা স্তিমিত। তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের অপসারণের পর হয়ত অন্য কোনো সদস্যের অপসারণের দাবিও উঠবে। তাতে সমস্যা বাড়তে থাকবে।
বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, দেশের আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। পোর্টে, বিমানবন্দরে আমদানি ও রপ্তানিযোগ্য পণ্য পড়ে থাকায় বৃষ্টি-রোদে নষ্ট হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে কোনো রকম শর্ত ছাড়া আন্দোলনকারীদের কাজে যোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়ে সংকট কাটাতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়কে এগিয়ে আসার তাগিদ দেন ব্যবসায়ী নেতারা।
শাটডাউনের কারণে আমি রপ্তানির ক্ষতির বিষয়টি উলে­খ করে এলএফএমইএবি সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজার আমাদের তথা বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করবে না। যুদ্ধ ছাড়া কোন দেশের কাস্টমস বন্ধ থাকে; এটা আমাদের জানা নেই।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা এনবিআরের সংস্কার চায়। তবে এনবিআরে অনেক সৎ অফিসার আছেন। বর্তমান সংস্কারের ফলে তাদের ভবিষ্যৎ কি হবে সেটি বলার অধিকার তাদের আছে। সে বিষয়টিও সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে। তিনি বলেন, কোনো সমস্যা টেবিলে বসে সমাধান করা যায় না--সেটা আমরা বিশ্বাস করি না। বসতে হবে, কথা শুনতে হবে, কিছু ছাড় দিতে হবে। কিন্তু এনবিআরের সংস্কার হতে হবে।
বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, এনবিআরের কর্মকর্তারা এতদিন ব্যবসায়ীদের জ্বালিয়েছে (হয়রানি করা)। এখন সরকারকে জ্বালাচ্ছে। দেশের ব্যবসা ও দেশের স্বার্থে সমস্যার সমাধান জরুরি।
তবে দাবির প্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসাররণের বিপক্ষে অবস্থানের কথা জানানো হয় যৌথ সংবাদ সম্মেলন থেকে।
এ সময় শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা আন্দোলনকারীদের দেশের অর্থনীতির স্বার্থে ‘কলম বিরতি’ ও ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কোনো শর্ত ছাড়া কাজে যোগ দেওয়ার আহŸান জানান।