খুলনা | সোমবার | ৩০ জুন ২০২৫ | ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

দ্বিতীয় দিনের মতো কমপ্লিট শাটডাউন

বেনাপোল ও ভোমরা কাস্টমস হাউজে আমদানি-রপ্তানিসহ সকল কার্যক্রম বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা ও বেনাপোল প্রতিনিধি |
০২:২৯ এ.এম | ৩০ জুন ২০২৫


জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকা কমপি¬ট শাটডাউনের দ্বিতীয় দিনে রোববার বেনাপোল বন্দর দিয়ে সকাল থেকেই আমদানি-রপ্তানি বন্ধ ছিল। কাস্টমস হাউজের কোন কোন গ্র“পের দরজায় তালা মারা থাকতে দেখা গেছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এনবিআরের সার্ভার লাইন। বন্ধ রয়েছে পণ্যের পরীক্ষণ, শুল্কায়ন ও খালাস কার্যক্রমসহ সকল ধরনের কাজকর্ম। তবে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে দু’দেশের মধ্যে যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে বলে চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন ওসি ইলিয়াস হোসেন মুন্সি জানিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকা কমপি¬ট শাটডাউনের কারনে দ্বিতীয় দিনের মতো বেনাপোল কাস্টমস হাউজ খোলা থাকলেও কোন কর্মকর্তার উপস্থিতি দেখা যায়নি। কাস্টমসের কোন কোন শুল্কায়ন ও কর্মকর্তাদের রুমের দরজায় তালা ঝুলতে দেখা গেছে। বন্ধ আছে শুল্কায়নের কার্যক্রমসহ সকল ধরনের কাজকর্ম। শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে সরকার এ বন্দর থেকে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পণ্য চালান সরবরাহ নিতে না পারায় ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ার শঙ্কায় রয়েছেন।
এদিকে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় বেনাপোল ও পেট্রাপোল দু’দেশের বন্দর এলাকায় অসংখ্য পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়েছে বলে বন্দর ব্যবহারকারিরা দাবি করেছেন। যার অধিকাংশই বাংলাদেশের শতভাগ রপ্তানিমুখি গার্মেন্টস শিল্পের কাঁচামাল এবং পচনশীল পণ্য রয়েছে।
বেনাপোল সিএ্যান্ডএফ এজেন্টস স্টাফ এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনলাইন সার্ভার বন্ধ থাকায় দু’দিন আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত কোনও বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা যায়নি। সার্ভার বন্ধের কারণে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে যেমন কোন আমদানি-রপ্তানি হচ্ছে না। তেমনি পণ্যের পরীক্ষণ, শুল্কায়ন ও খালাস সংক্রান্ত সকল কাজকর্ম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
এ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, কাস্টমসের কমপি¬ট শাট ডাউন এর ফলে আমদানিকারকরা তাদের আমদানি করা পণ্য সময় মতো খালাস নিতে পারছেন না। এতে বন্দরের গুদাম ভাড়া বাবদ প্রতিদিন একটি বড় অংকের টাকা তাদের ডেমারেজ গুণতে হচ্ছে। অনেক পণ্যের গুণগত মানও নষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন।
অপরদিকে ভারতের পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, পেট্রাপোলে সার্ভার জটিলতায় আমাদের ব্যবসায়ে অনেক ক্ষতি হয়েছিল। এখন আবার বাংলাদেশের এনবিআরের কর্মকর্তাদের কাজ বন্ধে আমরা পণ্য রপ্তানি করতে পারছি না। বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় শত শত পণ্যবাহী ট্রাক পেট্রাপোল বন্দর এলাকা, বন্দরের ট্রাক টার্মিনাল, পেট্রাপোল পার্কিং ও বনগাঁ পার্কিংয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। প্রতি দিন কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এক দিন পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকলে প্রায় ১১৫ কোটি বিদেশি মুদ্রা আয় থেকে ভারত সরকার বঞ্চিত হয়। যেহেতু এটা বাংলাদেশের ব্যাপার সেহেতু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পণ্য আমদানি-রপ্তানি ফের শুরু করা হবে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবীর তরফদার বলেন, কাস্টমস কর্মকর্তাদের আন্দোলনের কারণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে শনিবার সকাল থেকে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। তবে এ সময়ে বেনাপোল বন্দর থেকে পণ্য আনলোড করে ভারতীয় খালি ট্রাকগুলো সে দেশে ফেরত যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
সাতক্ষীরা : দ্বিতীয় দিনের মত ভোমরা স্থলবন্দরের সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন বন্দর সংশ্লিষ্ট সহস্রাধিক শ্রমিক ও ব্যবসায়ী। ফলে বিরূপ প্রভাব পড়েছে বন্দরের রাজস্ব আদায়ের উপর।
এদিকে এনবিআর সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের কারণে রোববার সকাল থেকে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর কাস্টমস হাউজের প্রধান ফটক বন্ধ রয়েছে। ভিতরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও দেখা পাওয়া যায়নি। বন্দরে ঢোকার অপক্ষোয় ভারতের ঘোজাডাঙ্গা স্থলবন্দর এলাকায় কয়েকশ’ পণ্যবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। একই ভাবে ভোমরা বন্দর থেকে ভারতের ঘোজাডাঙ্গা বন্দরে ঢোকার অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশী পন্যবাহী অসংখ্য ট্রাক। কাস্টমস অফিস বন্ধ থাকায় কোন পণ্য খালাস, যাচাই বা ছাড়করণ সম্ভব হচ্ছে না। 
বন্দরের এক ব্যবসায়ী জানান, গত তিনদিনে ভোমরা ও ভারতের ঘোজাডাঙ্গা স্থল বন্দরে আমদানি-রপ্তানির অপেক্ষায় থাকা অন্তত ৫০০ ট্রাক আটকা পড়েছে। বিপাকে পড়েছে এসব ট্রাকের চালক ও হেলপাররা। একই সাথে কাজ বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছে বন্দর সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা।  তবে, এবষিয়ে কাস্টমস এর কর্মকর্তা কর্মচারীরা কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
ভোমরা স্থলবন্দরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ বলেন, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে ডাকা শাটডাউন এর কারণে ভোমরা স্থলবন্দর হতে প্রতিদিন ৩০/৪০ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে। এছাড়া প্রতিদিন ৫/৬ হাজার শ্রমিক এই বন্দরে কাজ করে। দুই দিন কাজ করতে না পেরে তাদের সংসার অচল হওয়ার পথে। এছাড়া ৪/৫শ’ ট্রাকের চালক ও হেলপার মিলে প্রায় ৭/৮ শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বন্দরের একজন ট্রাক চালক জানান, গত বৃহস্পতিবার থেকে চারদিন ধরে পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে আমরা চালকরা বন্দরে আটকা পড়ে আছি। গাড়ি এখন ভারতে ঢুকছে না। বন্দও অচল অবস্থায় রয়েছে। এতে করে আমরা চরম বিপাকের মধ্যে পড়েছি। তারা দ্রুত এই সমস্যার সমাধানের দাবি জানান। 
ভোমরা সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু মুসা জানান, কাস্টম কর্মকর্তাদের এই আন্দোলনের কারণে বন্দর কার্যক্রম পুরোপুরি অচল হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ শ্রমিকরা। বর্ষার এই সময়টায় কাজ না পেয়ে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।