খুলনা | বৃহস্পতিবার | ০৩ জুলাই ২০২৫ | ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

বিপাকে ব্যবসায়ীরা : ভারতে স্থলবন্দর দিয়ে পাট আমদানি বন্ধের নিষেধাজ্ঞা

এন আই রকি |
০১:০০ এ.এম | ০৩ জুলাই ২০২৫


বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের কাঁচাপাট রপ্তানির সব থেকে বড় বাজার ভারত। চলতি বছর বিশ্বের যে ১২টি দেশে কাঁচাপাট রপ্তানি করা হয়েছে, তার মধ্যে ভারতই ছিল শীর্ষস্থানে। গত ২৭ জুন ভারতের সকল স্থলবন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই আকস্মিক সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের কৃষক, কাঁচাপাট রপ্তানিকারক ও ভারতের কলকাতার ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন। তবে বাংলাদেশ জুট এ্যাসোসিয়েশন (বিজেএ) নেতৃবৃন্দ দ্রুত এই সংকট নিরসনের জন্য কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। অনেক পাট ব্যবসায়ী এমন সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন।  
ব্যবসায়ীরা জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ফেব্র“য়ারি মাসে ১২টি দেশে কাঁচাপাট রপ্তানি হয়েছিল। মার্চ মাসে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭টিতে। এর মধ্যে ভারতেই সবচেয়ে বেশি পাট রপ্তানি হয়েছে। এরপর নেপাল, পাকিস্তান, আইভরিকোস্ট, চীন, ইউএসএ এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানি হয়েছে। দেশের বন্দরগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম, বেনাপোল, মোংলা ও বাংলাবান্দার মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ কাঁচাপাট বেনাপোল বন্দর দিয়েই রপ্তানি হয়। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ ও খুলনার প্রায় ২৫ জন ব্যবসায়ী কাঁচাপাট রপ্তানির সঙ্গে জড়িত।
এদিকে, গত ২৭ জুন ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এক প্রজ্ঞাপনে ভারতের সমস্ত স্থলবন্দরে বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি নিষিদ্ধ করেন। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় কাঁচা পাট, পাটের রোল, পাটের সুতা, বোনা কাপড়, সুতার পণ্যসহ নয় ধরনের পাটপণ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে প্রজ্ঞাপনে এ-ও উলে­খ আছে যে, সকল স্থলবন্দর বন্ধ করা হলেও মহারাষ্ট্রের নহাভা শেভা সমুদ্রবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্য ভারতে আমদানি করা যাবে। এছাড়াও ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল ও ভুটানে যাওয়া বাংলাদেশি পণ্যের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না। তবে এই পণ্যগুলো নেপাল বা ভুটান থেকে পুনরায় ভারতে রপ্তানি করা যাবে না।
খুলনা ও নারায়ণগঞ্জের একাধিক কাঁচাপাট রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী  জানান, বাংলাদেশের পাট রপ্তানিকারকরা এই সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন। কারণ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের মোট পাট রপ্তানির একটি বড় অংশ স্থলপথেই হয়ে থাকে এবং এতে পরিবহন খরচ কম হয়। স্থলপথে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় পরিবহন খরচ বাড়বে এবং রপ্তানি কার্যক্রমে ধীরগতি আসতে পারে। তাছাড়া বাংলাদেশের কাঁচা পাট ব্যবসায়ীদের বড় বাজার হচ্ছে কলকাতা। গত মার্চ মাসে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ৩ লাখ ২৩ হাজার ৩৯৫ বেল কাঁচাপাট রপ্তানি হয়েছে। স্থলবন্দর বন্ধ করে দেওয়ায় ভারতে পাট রপ্তানি কমে যাবে। এতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি কৃষকরা পাটের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার কারণেও ক্ষতির মুখে পড়বে।   
বাংলাদেশ জুট এ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএ) চেয়ারম্যান মোঃ ফরহাদ আহমেদ আকন্দ বলেন, “ভারত সকল স্থলবন্দর বন্ধ করে দিয়ে শুধুমাত্র মহারাষ্ট্রের নহাভা শেভা সমুদ্রবন্দর চালু রেখেছে। বাংলাদেশের কাঁচাপাট রপ্তানিকারকদের বড় বাজার হচ্ছে কলকাতা। সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে পাট রপ্তানি করলে ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়বে। ইতিমধ্যেই বিজেএ’র নির্বাহী কমিটির সকলকে নিয়ে এই সংকট নিরসনের বিষয়ে আমরা বৈঠক করেছি। এছাড়াও ঢাকায় আমরা একটি বৈঠক করেছি। সারা দেশের পাট ব্যবসায়ীদের এই সংকট নিরসনের জন্য বর্তমান সরকারকেও খুব দ্রুত অবহিত করবো।” 
তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও কৃষকের পাশাপাশি ভারতের ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ বাংলাদেশের পাটের মান খুব ভালো থাকার কারণেই ভারতে আমাদের কদর অনেক বেশি।  
উলে­খ্য, এর আগে গত মে মাসে ভারত স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। এছাড়াও এপ্রিলে বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারতকে ভূখণ্ড ব্যবহারের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধাও বাতিল করে দিলি­। এই নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের পাট শিল্পের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, কারণ ভারত বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্যের একটি প্রধান বাজার।