খুলনা | বৃহস্পতিবার | ০৩ জুলাই ২০২৫ | ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

উচ্ছ্বাস-উল্লাস, মিষ্টি বিতরণে সাধারণ মানুষ

অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ও উন্মুক্তের পর রাহুমুক্ত হলো আলোচিত নাছিরপুর খাল

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:৪৪ এ.এম | ০৩ জুলাই ২০২৫


অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দক্ষিণ খুলনার আলোচিত জলমহল নাছিরপুর খাল অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করল প্রশাসন। প্রায় দশ কিলোমিটার এলাকার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ২০টি গ্রামের লক্ষ-লক্ষ মানুষের ‘জীয়নকাঠি’ পাইকগাছার তালতলা থেকে হরিঢালী অবধি নাছিরপুর খালটি গতকাল বুধবার দুপুরে আনুষ্ঠানিক ভাবে উন্মুক্ত করেছে উপজেলা প্রশাসন। এলাকার নারী-পুরুষসহ হাজার-হাজার উৎসুক জনতার উৎসব মুখর উপস্থিতিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ ইফতেখারুল ইসলাম শামীম, সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সৈকত মলি­ক, কৃষি কর্মকর্তা একরামুল হোসেন, ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা কৃষ্ণপদ দাসের নেতৃত্বে খাল থেকে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করা হয়। এ সময় সেনাবাহিনী ও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।  
প্রবাহমান খালের ধারে বিভিন্ন স্থানে টানিয়ে দেওয়া হয় সাইনবোর্ড। মানুষ তিন দশক পর খালের ওপর তাদের পূর্ণ অধিকার ফিরে পেয়ে মাছ ধরার আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন। 
স্থানীয়রা  বলছেন, খালটি উন্মুক্ত করার ফলে খালকে অবলম্বন করে যাদের অন্ন সংস্থান, খাল ঘিরে যাদের জীবন-জীবিকা তাদের ঘরে ঘরে এখন আনন্দের বন্যা বইছে। মিস্টি বিতরণ চলছে গ্রামে-পাড়ায়-বাড়ি-বাজারে। খালের দুই পাড়ে প্রাণ ফিরে পাওয়ার উচ্ছ¡াস চলছে। দৃশ্যতঃ তালতলা, চিনেমলা, গোয়ালবাথান, প্রতাপকাঠি, খোলা, কাজীমুছা, রেজাকপুর, কাশিমনগর, কানাইডাঙ্গা, কপিলমুনি, হরিঢালী, সলুয়া শ্রীরামপুর, হাউলি, নাছিরপুর, রামনগর, মাহমুদকাঠির, সোনাতনকারী, খলিলনগর, ঘোষনগর মানুষের মাঝে গতকাল বুধবার ছিল অন্যরকম দিন। প্রনোচ্ছ¡াস-উৎসব-উল­াসের দিন। তারা বহুকাল ধরে যে দাবি পূরণে অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা নিপীড়িত ভয়-ভীতি বৈষম্যের দিন কাটিয়েছেন তা পূরণ হয়েছে।
গত ৩০ জুন ভূমি মন্ত্রণালয়ে খুলনা জেলা জলমহাল ইজারা সংক্রান্ত কমিটির সর্বশেষ সভায় পাইকগাছার নাছিরপুর খাল উন্মুক্ত করার ঘোষণা করা হয়েছিল।
নাছিরপুর খাল উন্মুক্ত করার ক্ষেত্রে নিরলস ভাবে মূখ্য ভূমিকা রেখেছেন পাইকগাছা-কয়রা এলাকার জনহিতৈষী, সাংবাদিক, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসসের চেয়ারম্যান আনোয়ার আলদীন।
বহুকাল ধরে খাল সন্নিহিত বিস্তীর্ণ এলাকার লাখ লাখ সাধারণ জেলে, কৃষক, ঘের চাষি এবং সর্বসাধারণ অবরুদ্ধ ও অসহায় জীবনযাপন করে আসছিল। রাজনৈতিক দলীয় পরিচয়ে শাহাদাত হোসেন ডাবলু, খালদস্যু, দখলদার, ভীতি ছড়িয়ে প্রতারণা ও জবরদস্তির মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করে টাকার পাহাড় গড়েছেন ।
বিল বৈচিত্র্য রক্ষায় সৃষ্টি  হয়েছে প্রতিবন্ধকতা। এসব জলমহাল থেকে গ্রামের সাধারণ মানুষ যেমন ফসলের জন্য পানি দিতে পারে না, তেমনি প্রয়োজনীয় কাজেও এ পানি ব্যবহার করতে পারত না। কৃত্তিম জোয়ান সৃষ্টি করে দখলদার ছোট ছোট মৎস্য চাষীদের রাতের স্বপ্ন  ভোরেই প্লান করে দিয়েছে।   খালের পাশে মাছের ঘের করে জীবিকা নির্বাহ করে তাদের ঘেরের সর্বনাশ করে আসছিল এই খালদস্যু ও তার সহযোগীরা। খালদস্য্যুদের নিপীড়নের শিকার পঙ্গু কিংবা গৃহহীন  হয়েছেন বহু মানুষ। তারা স্থানে স্থানে বাঁশের পাটা, ঘন জালের বেস্টনী দিয়ে পানি প্রবাহ জব্দ করে খালটি প্রায় ভরাট করে ফেলেছে। গলা টিপে মারছে খালের প্রাণ- প্রাচুর্য। নোনা জলে পরিবেশ হয়েছে বিপর্যস্ত। ভুক্তভোগী এলাকাবাসী সে কারণে দীর্ঘকাল ধরে গ্রাম গ্রামান্তরের   মানুষ নাছিরপুর খালটি উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছিল। খাল ঘিরে রাজনৈতিক দলের দুই গ্র“পের দখল-পাল্টা দখলকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় রণক্ষেত্রের দৃশ্যপট সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে সাধারণ মৎস্যজীবীদের মারধর করে উচ্ছেদ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অতীতে অসংখ্য বার মিছিল সমাবেশ মানব বন্ধন, প্রেস কনফারেন্স করেও মেলেনি সমাধান। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায়
অবশেষে খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ সাইফুল ইসলামের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় খাল উদ্ধার ও উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পর খাল পাড়ের সাধারণ জেলে, কৃষক এবং সাধারণ মানুষ আনন্দ প্রকাশ করে মিষ্টি বিতরণ করেছেন।