খুলনা | শুক্রবার | ০৪ জুলাই ২০২৫ | ২০ আষাঢ় ১৪৩২

বাংকার বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র বানাচ্ছে ভারত

খবর প্রতিবেদন |
০৫:১৭ পি.এম | ০৩ জুলাই ২০২৫


সম্পূর্ণ নিজস্ব প্রযুক্তিতে বাংকার ধ্বংস করতে সক্ষম (বাংকার বাস্টার) ক্ষেপণাস্ত্র বানাচ্ছে ভারত। অগ্নি-৫ নামের এই আন্তঃমহাদেশীয় (আইসিবিএম) ক্ষেপণাস্ত্রটির দু’টি সংস্করণ তৈরি হচ্ছে।

ভারতের ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলাপমেন্ট অর্গানাইজেশন(ডিআরডিও) এই অগ্নি-৫ তৈরি করছে। এই অগ্নি-পাঁচ মাটি ৮০ থেকে ১০০ মিটার গভীরে গিয়ে কংক্রিটের আস্তরণ ভেদ করতে পারবে বলে দাবি করা হচ্ছে। সাড়ে সাত হাজার কিলোগ্রাম পর্যন্ত বিস্ফোরক বহন করে নিয়ে যেতে পারবে এই ক্ষেপণাস্ত্র।

এই ক্ষেপণাস্ত্রের দু’টি সংস্করণের  একটি আড়াই হাজার কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে সাড়ে সাত হাজার কিলোগ্রাম পর্যন্ত বিস্ফোরক নিয়ে বাংকার ধ্বংসের কাজ করবে। এটা সুপারসনিক অর্থাৎ শব্দের চেয়ে দ্রুত গতিতে এগোতে সক্ষম হবে। অন্যদিকে দ্বিতীয় সংস্করণটি  পাঁচ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরের লক্ষ্যবস্তুকে নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে পারবে।

মার্কিন বাংকার বাস্টারের মতো
সম্প্রতি ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে বাংকার বাস্টার বোমা জিবিইউ ৫৭ ফেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ট্রাম্প দাবি করেছেন।

ভারতের অগ্নি-পাঁচ-ও যুক্তরাষ্ট্রের বাংকার বাস্টার জিবিইউ ৫৭-র মতোই শক্তিশালী হবে বলে দাবি করা হয়েছে।

বাংকার বিধ্বসী ক্ষেপণাস্ত্র হলো এক বিশেষ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র যা মাটির গভীরে ঢুকে লক্ষ্যে আঘাত করতে পারে এবং সামরিক বাংকার, কমান্ড সেন্টার, মিসাইল রাখার জায়গা ও অস্ত্রভাণ্ডারে গিয়ে আঘাত করতে পারে। সাধারণ যুদ্ধাস্ত্র বা বোমা মাটির উপর গিয়ে পড়ে এবং বিস্ফোরণ হয়। কিন্তু বাংকার বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র মাটির ভিতর ঢুকে কংক্রিটে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটায়।

কেন এই বাংকার বিধ্বংসী অস্ত্র জরুরি?
ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক লেফটোন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, এটা একটা ডেটারেন্ট হিসাবে কাজ করবে। যে কোনো দেশের মাসল পাওয়ার বাড়ানোর দরকার হয়। কোনো সন্দেহ নেই, ভারতের সামরিক বাহিনীর কাছে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।

ভারতের হামলার পর পাকিস্তানের ভাওয়ালপুরের পরিস্থিতি
উৎপল ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, এই অস্ত্র মাটির গভীরে চলে যেতে পারে। কয়েকটা পর্যায়ে এর ডেটোনেশন হয়। প্রথমে উপরে হয়, তারপর ভিতরে ঢুকে বারবার তা বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। এটা নির্দিষ্ট একটি কোণে রাখতে পারলে টার্গেটে সবচেয়ে ভয়ংকর আঘাত করতে পারে। তাই এই অ্যাঙ্গেল বা কোণটা খুবই জরুরি।

তিনি জানিয়েছেন, এখন মার্কিন বাংকার বাস্টার দেখার পর ভারতের এই প্রয়াস নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে ভারত আগেই এই অস্ত্র বানাবার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

আধুনিক যুদ্ধে এই বাংকার বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রকে খুব জরুরি বলে মানা হয়। কারণ, অন্য দেশের কম্যান্ড ও কন্ট্রোল কেন্দ্রগুলি এখন মাটির নিচে থাকে। অস্ত্র, জ্বালানি, রাসায়নিক ও জৈবিক অস্ত্রও মাটির তলায় রাখা হয়। সেগুলিতে আঘাত করতে চাইলে বাঙ্কার বাস্টার দরকার হয়। সেখানেই এর গুরুত্ব।

প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত রায়চৌধুরী বলেছেন, পাকিস্তান ও চীন মাটির নিচে বাংকার, ক্ষেপণাস্ত্র রাখার জায়গা, কম্যান্ড পোস্ট তৈরিতে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। তাই মাটির তলার পরিকাঠামো ভাঙতে গেলে ভারতের হাতেও অস্ত্র থাকা দরকার। চীনের হাতেও বাংকার বাস্টার ডিএফ ১৫ আছে, এই ধরনের অস্ত্র হাতে থাকলে অন্য দেশও ভারতকে আক্রমণ করার আগে দু-বার ভাববে।