খুলনা | শুক্রবার | ০৪ জুলাই ২০২৫ | ২০ আষাঢ় ১৪৩২

সাতক্ষীরার আশাশুনির বিছট গ্রামে ভেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন, আতঙ্কে এলাকাবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা |
০২:৩৩ এ.এম | ০৪ জুলাই ২০২৫


সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বিছট গ্রামের সাহেব আলী মোড়লের বাড়ির সামনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবে) ভেড়িবাঁধে ফের বড় ধরনের ভাঙন দেখা দিয়েছে। খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে যে কোন মুহূর্তে ভেড়িবাঁধ ভেঙে আনুলিয়া ও পার্শ্ববর্তী খাজরা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়তে পারে। ফলে ফের আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর আওতাধীন ৭/২ পোল্ডারের বিছট গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছ থেকে বিছট খেয়াঘাট পর্যন্ত ভেড়িবাঁধের ভাঙন দীর্ঘদিনের। যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে প্রায় প্রতি বছর এই বাঁধের কোন না কোন স্থান থেকে ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢোকে। বিষয়টি পাউবোর সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তৃপক্ষ অবহিত থাকা সত্তে¡ও এই বাঁধটি সঠিকভাবে মেরামতে তারা কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। শুধুমাত্র ভেঙে গেলে তখন একজন ঠিকাদার নিয়োগ করে কাজ শুরু করে। নদী ভাঙনে বিছট গ্রামের পঞ্চাশের অধিক পরিবার বাস্তচ্যুত হয়ে অন্যত্রে চলে গেছে। নদীতে বিলীন হয়ে গেছে বিছট মোড়ল বাড়ি জামে মসজিদ, ইফতেদায়ী মাদ্রাসা, সরকারি বড় একটি পুকুর, গাজী বাড়ি মসজিদসহ শতাধিক বাড়িঘর ও ফসলি জমি। হুমকির মুখে রয়েছে বিকছট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণে গত ৩১ মার্চ সকাল পৌনে ৯টার দিকে বিছট গ্রামের আব্দুর রহিম সরদারের ঘেরের বাসার পাশ থেকে প্রায় দেড়শ’ ফুট এলাকা জুড়ে ভেড়িবাঁধ হঠাৎ করে খোলপেটুয়া নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এতে করে আনুলিয়া ইউনিয়নের ৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়ে। এসব গ্রামের প্রায় সাড়ে চার হাজার বিঘা জমির আয়তনের ৪৫০ থেকে ৫০০টি চিংড়ি ঘের প্লাবিত হয়ে চাষিদের প্রায় ১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। একই সাথে ২০ হেক্টর জমির বোরো ধান ও প্রায় দেড় হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন সবজি নষ্ট হয়। ধ্বসে পড়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্লাবিত এলাকার প্রায় ৬শ’ ঘরবাড়ি। দায়িত্ব অবহেলার কারণে পাউবো বিভাগ-২ এর তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাখাওয়াত হোসেনকে স্টান্ড রিলিজ করা হয়। 
বিছট গ্রামের ভাঙন পয়েন্ট এলাকার বাসিন্দা রুহুল আমিন মোড়ল জানান, বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে  গ্রামের সাহেব আলী মোড়লের বাড়ির সামনে ভেড়িবাঁধে ভয়াবহ ফাটল দেখা দেয়। গত কয়েকদিন আগে বাঁধের ফাটলের একটি অংশ নদীতে ধসে পড়েছে। এই বাঁধ মেরামতের জন্য রোজার ঈদের আগে একজন ঠিকাদার নিয়োগ করা হলেও এখনো কাজ শুরু করা হয়নি। ফলে খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে বাঁধের ভাঙন প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে পাউবো কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা কোন গুরুত্ব দিচ্ছে না। দ্রুত এই বাঁধ মেরামতে কার্যকর ব্যবস্থা নিলে বিছট গ্রামে গত ৩১ মার্চের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। তিনি গ্রামবাসীর জানমাল রক্ষায় দ্রুত বাঁধ মেরামতের দাবি জানান।
বিছট গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, ভেড়িবাঁধের ভাঙনের বিষয়টি পাউবো কর্তৃপক্ষ আগে থেকে অবহিত আছেন। কিন্তু বাঁধ মেরামতে তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ঠিকাদারের কোন লোকও এখানে আসে না। দ্রুত ভাঙন পয়েন্টে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করতে না পারলে সামনের বড় জোয়ারে এই বাঁধ কোন ভাবেই রক্ষা করা যাবে না। পাউবো কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অবহেলার কারণে বিছট গ্রাম তথা পুরো আনুলিয়া ইউনিয়নবাসীকে আবারও নদীর পানিতে ডুবতে হবে।
আনুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ রুহুল কুদ্দুস বলেন, গত ৩১ মার্চ বিছট গ্রামের বাঁধ ভেঙে আমার ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিছট ও মনিপুর গ্রামে ভেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমি নিজে বুধবার (২ জুলাই) সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডে অফিসে গিয়ে এসও আলমগীর ও এসডি রাশেদুল ইসলামকে বলে এসেছি।  
সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুর রহমান তাযকিয়া বলেন, খবর পেয়ে দু’জন সেকশনাল অফিসারকে সাথে নিয়ে আমি নিজে বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) দুপুরে বিছট গ্রামের ভাঙন পয়েন্ট পরিদর্শন করেছি। শুক্রবার সকাল থেকে ঠিকাদার ভাঙন পয়েন্টে কাজ করবেন এবং ভাঙন প্রতিরোধে সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হবে। এছাড়া ভাঙন পয়েন্টের ল্যান্ড সাইডে একটি জিও টিউব দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আশা করছি দ্রুত এ কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।