খুলনা | রবিবার | ০৬ জুলাই ২০২৫ | ২২ আষাঢ় ১৪৩২

পবিত্র আশুরা : ‘ত্যাগ চাই, মর্সিয়া-ক্রন্দন চাহি না’

|
১২:০১ এ.এম | ০৬ জুলাই ২০২৫


পবিত্র আশুরা আজ। মহররম মাসের ১০ তারিখটি মুসলমান স¤প্রদায়ের মানুষের কাছে গভীর শোকের দিন। এই দিনে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) অন্যায় ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে চক্রান্তকারী ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে কারবালা প্রান্তরে মর্মান্তিকভাবে শাহাদাতবরণ করেন। দিনটি একদিকে শোকের ও বেদনার, অন্যদিকে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণের উজ্জ্বল উদাহরণ। 
হাদিস অনুযায়ী, মহররমের ১০ তারিখ ইসলামের ইতিহাসে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারবালা প্রান্তরে পরিবার-পরিজন, সঙ্গী-সাথিসহ হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাতবরণের মর্মান্তিক ঘটনার আগেও এই তারিখে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। আদি মানব হযরত আদম (আ.) এই দিনে পৃথিবীতে আগমন করেন, তাঁর তওবা কবুল হয় এই দিনেই। এই দিনে হযরত নূহ (আ.)-এর নৌকা মহাপ্লাবন থেকে রক্ষা পায়। 
পবিত্র কুরআনে সূরা আম্বিয়ার ৮৩-৮৪ নাম্বার আয়াতে আল­াহ বলেছেন, স্মরণ করুন আইউবের কথা, যখন তিনি তার পালনকর্তাকে আহŸান করে বলেছিলেন, আমি দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়েছি এবং আপনি দয়াবানদের চাইতেও সর্বশ্রেষ্ঠ দয়াবান। অতঃপর আমি (আল­াহ) তার ডাকে সারা দিলাম এবং তার দুঃখ কষ্ট দূর করলাম। এদিনেই হযরত দাউদ (আঃ) আল­াহর কাছ থেকে ক্ষমা লাভ করেছিলেন, হযরত সোলেমান (আঃ) পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়েছিলেন তার হারানো রাজত্ব। হযরত ইউনুস (আঃ) মাছের পেট হতে মুক্তি লাভ করেছিলেন এ দিনেই। হযরত ঈসা (আঃ) পিতা ছাড়া কুমারী মরিয়ম (আঃ) এর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন পবিত্র আশুরার দিনে আর এদিনেই তাকে কাফিরদের ষড়যন্ত্রের কারণে আল­াহ তাকে চতুর্থ আসমানে তুলে নিয়েছিলেন। 
তবে মুসলমানরা এই দিবসটি পালন করেন মূলত কারবালার প্রান্তরের সেই মর্মান্তিক ঘটনার স্মরণে। মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে ইয়াজিদ অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেন এবং এ জন্য ষড়যন্ত্র ও বলপ্রয়োগের পথ বেছে নেন। মহানবী (সা.)-এর আরেক দৌহিত্র হযরত ইমাম হাসান (রা.)-কে বিষপানে হত্যা করা হয়। ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ হয়ে পরিবার-পরিজন ও ৭২ জন সঙ্গীসহ শাহাদাতবরণ করেন হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)। এই হত্যাকান্ড ছিল অত্যন্ত নির্মম। অসহায় নারী ও শিশুদের পানি পর্যন্ত পান করতে দেয়নি ইয়াজিদ বাহিনী।
আশুরার মূল চেতনা অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম। সেই সংগ্রামে সাময়িক আঘাত এলেও চূড়ান্ত বিজয় অবধারিত। এটাই মহররমের শিক্ষা। কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়, ‘ত্যাগ চাই, মর্সিয়া-ক্রন্দন চাহি না’। অন্যায়-অবিচার ও ষড়যন্ত্র থেকে পৃথিবীকে মুক্ত রাখতে ত্যাগের মহিমা সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে।